10 Jun, 2024 রোগের কারণতত্ত্ব বা Etiology, কাজী আজম Definition of Etiology: CAUSE, ORIGINspecifically : the cause of a disease or abnormal condition: কারণ, মূলবিশেষভাবে: একটি রোগ বা অস্বাভাবিক অবস্থার কারণ: a branch of knowledge concerned with causesspecifically: a branch of medical science concerned with the causes and origins of diseases: কারণের সাথে সম্পর্কিত জ্ঞানের একটি শাখাবিশেষভাবে: রোগের কারণ এবং উৎস সম্পর্কিত চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি শাখাMerriam Webster Dictionary স্যার হ্যানিম্যানের অর্গানন অব মেডিসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় পাদটিকা ডাঃ হরিমোহন চৌধুরী অনুবাদ করে বলেছেন-১. অভ্যন্তরীণ জৈবশক্তির বিশেষ কাজ কি, দেহের অদৃশ্য অভ্যন্তরে কিভাবে ব্যাধির সৃষ্টি হয়, সেই বিষয়ে ফাঁকা জল্পনা-কল্পনা যোগ করিয়া তথাকথিত ব্যবস্থা-পদ্ধতি রচনা করা চিকিৎসকের ব্রত নহে। (এইভাবে কত চিকিৎসক যে আজ পর্যন্ত শুধু উচ্চাকাঙ্খার বশবর্তী হইয়া তাহাদের মেধা ও সময় নষ্ট করিয়াছেন তাহার ইয়াত্তা নাই)। একদিকে রুগ্নমানবজাতি আরোগ্যের আশায় বৃথাই ধুঁকিতে থাকিবে, অন্যদিকে রোগের অদ্ভুত বৈচিত্রের ব্যাপারে অসংখ্য ব্যাখ্যা ও তাহার নিকটতম কারণ (যাহা চিরকালই অজ্ঞাত থাকিবে) দুর্বোধ্য ভাষা ও অসার জটিল ব্যঞ্জনায় অজ্ঞ লোকেরা তাক্ খাইয়া যাইবে- ইহাও চিকিৎসকের কাম্য হইতে পারে না। এই ধরণের পান্ডিত্যপূর্ণ কল্পনাবিলাস (তত্ত্বমূলক চিকিৎসা পদ্ধতি বলিয়া যাহার নামকরণ হইয়াছে ও সেইজন্য বিশেষ অধ্যাপক পদবীসমূহের সৃষ্টি করা হইয়াছে) আমরা অনেক দেখিয়াছি। সময় অনেক চলিয়া গিয়াছে, চিকিৎসক বলিয়া যাঁহারা নিজেদের পরিচয় দেন, রোগ-ক্লিষ্ট মানব জাতিকে কেবল কথার দ্বারা প্রতারণা করিতে এইবার তাঁহারা থামুন। রোগমুক্তির সত্যিকার আশ্বাস লইয়া এখনও একটু আগাইয়া আসুন।২. সুতরাং যে অশরীরী সত্তা, প্রাণশক্তি রোগের সৃষ্টি করে উহাকে যখন কখনও চোখে দেখা যায়না, তখন প্রকাশমান লক্ষণসমূহের মাধ্যমে ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে রোগ-চরিত্র জানা কি যুক্তিসঙ্গত নয় ? আরোগ্যসাধনের জন্য রুগ্নতাজ্ঞাপক লক্ষণসমূহকে জানা দরকার। ইহাকে দেখিবার কোন প্রয়োজন নাই।এপিডিমিওলজি (রোগবিস্তার বিজ্ঞান) হচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি শাখা যা পূর্বকালে ঘটিত রোগবিস্তারের কারণ গবেষণালব্ধ জ্ঞান দ্বারা কাজ করে- জনগণের মধ্যে রোগের ঘটনা, বিতরণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং এটি রোগ বা প্যাথোজেনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি নিয়ন্ত্রণকারী উপাদানগুলির ভবিষ্যতের ফলাফল সম্পর্কে সতর্ক কিংবা উৎসাহিত করার মাধ্যমে। এপিডিমিওলজিতে চারটি কারণকে গুরুত্ব দেয়া হয়, যথা-১. Necessary cause বা অপরিহার্য্য কারণ- যা ব্যতিত রোগ হতে পারে না,২. Sufficient cause বা পর্যাপ্ত কারণ- যা অনিবার্যভাবে স্বাস্থ্য, রোগ ও আঘাতের জন্ম দেয়,৩. Proximal cause বা নিকটতম কারণ- যার ফলে অচিরেই রোগ সৃষ্টি হবে এবং৪. Distal cause বা দূরবর্তী কারণ- যার ফলে ভবিষ্যতে রোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে।এ ধারণা থেকে জীবনাচার বা লাইফ স্টাইল নিয়ন্ত্রণ করে রোগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয় বটে কিন্তু রিয়েল হোমিওপ্যাথিতে ওষুধ নির্বাচনে এর কোন ভুমিকা নেই। ‘চিকিৎসা থেকে প্রতিরোধ উত্তম’ এরকম একটি ধারণা নিয়ে এর প্রচারকেরা কাজ করে থাকেন। কিন্তু এতে আপাত সুস্থতার কাল বৃদ্ধি পেতে পারে (!) কিন্তু পরিপূর্ণ সুস্থতা পাওয়া যাবে না এবং ভবিষ্যতে রোগের ভয়াবহ আক্রমণকে নিশ্চিতভাবে রুখে দেয়া যাবে না। কেননা ব্যক্তির প্রকৃত রোগের অভ্যন্তরীণ উৎস- যা বংশগতি থেকে প্রাপ্ত হয়- তার কোন চিকিৎসা এতে নেই।স্যার শ্যামল কুমার দাস এর মতে রোগের ক্রমবিকাশে দু’টি প্রভাব বা ফ্যাক্টর কারণ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ, যথা-১. অভ্যন্তরীণ পরিবেশের প্রভাব বা Endogenous factor or Internal environment: ব্যক্তির দেহভ্যন্তরে যে রোগশক্তি রয়েছে, যাকে আসল রোগ বা true disease বলে তার প্রভাব। এটি ব্যক্তির জেনেটিক মেকআপ জেনে উপলব্ধ করা যায়।২. বাহ্যিক পরিবেশের প্রভাব বা Exogenous factor or External environment: ব্যক্তির জীবনাচারে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, ভৌগলিক পরিবেশ ও শিক্ষার প্রভাব। মানসিক আঘাত ও দূর্ঘটনা কবলিত হওয়া এবং উত্তেজনাপূর্ণ কারণ (Exciting cause) এর অস্তর্ভুক্ত।স্যার জেমস টাইলার কেন্ট এর মতে- জীবানু রোগের কারণ নয়। ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া, প্যাথোজেন, অস্বাভাবিক বা অস্বস্থিকর পরিবেশ ইত্যাদি কখনই কোন ব্যক্তির মধ্যে রোগ সৃষ্টি করতে পারত না যদি প্রত্যেকের দেহভ্যন্তরে বংশগতি থেকে প্রাপ্ত true disease এর অবস্থান না থাকত। এ বিষয়ে স্যার শ্যামল কুমার দাস এর একটি উক্তি প্রণিধান যোগ্য, তিনি বলেন-মানুষ আগুন নিয়েই পৃথিবীতে এসেছে, এক সময় না এক সময় তা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবেই! আগুনের লেলিহান শিখা দমিয়ে রাখা মানে আগুন নেভানো নয়। যদি প্রকৃত অর্থে আগুন নেভানো না হয়, তবে ভিতরে ভিতরে ধিকি ধিকি করে তা জ্বলতে থাকে এবং বৃদ্ধি পেয়ে মানুষটাকে ভয়ানক যন্ত্রণা দিয়ে শেষ করে দেয়।উদাহরণ স্বরুপ- প্রবাদ কথা আছে, ‘তুষের আগুন ধিকি ধিকি জ্বলে’। তুষের মধ্যে আগুন থাকাটা শর্ত, নতুবা ধিকি ধিকি জ্বলবে না। আগুন থাকলে এক সময় তা দাউ দাউ করেই জ্বলবে, আবার বাহির থেকে বাতাস করলে তখনও দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠা ত্বরান্বিত হবে। যদি তুষের মধ্যে আগুন-ই না থাকে তবে শত চেষ্টা করেও বাতাস দিয়ে আগুন জ্বালানো যাবে না, প্রবল বাতাসে তুষ এলোমেলো হয়ে যেতে পারে কিন্তু আগুন জ্বলবে না। আবার যদি তুষের ভেতরে আগুন থাকে তবে বাহিরের বাতাস বন্ধের জন্য যতই সতর্কতামূলক উদ্যোগ নেয়া হোক না কেন এক সময় না এক সময় তুষ জ্বলে-পুড়ে ছাই হবেই। এই উদাহরণ থেকে সহজে বোধগম্য হওয়া উচিত তুষকে ছাই হওয়া থেকে রক্ষা করতে হলে ভেতরের আগুন নেভাতে হবে, আগুন না নিভিয়ে বাতাস বন্ধের চেষ্টা করে শেষ রক্ষা হবে না। আবার আগুনের লেলিহান শিখা দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেও লাভ হবে না।এই উদাহরণে আগুন হচ্ছে true disease এর প্রতীক এবং বাতাস হচ্ছে ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া, প্যাথোজেন, অস্বাভাবিক বা অস্বস্থিকর পরিবেশ ইত্যাদির প্রতীক। আগুনের লেলিহান শিখা দমিয়ে রাখার চেষ্ট হচ্ছে results of disease এর চিকিৎসার প্রতীক। সুতরাং মানুষের রোগসমূহের মূল উৎস বা কারণ বংশগতি থেকে প্রাপ্ত মানব দেহভ্যন্তরে প্রতিটি কোষে থাকা ছয়টি true disease এর প্রতিনিধিত্বকারী ছয়সেট ক্ষতিকারক জিন বা harmful genes কর্তৃক উৎপাদিত প্রোটিন থেকে উৎপন্ন রোগ শক্তি। এখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত সকল থেরাপিউটিক সিস্টেমের মধ্যে স্যার শ্যামল কুমার দাস কর্তৃক উদ্ভাবিত একমাত্র রিয়েল হোমিওপ্যাথিক থেরাপিউটিক সিস্টেমে এই আগুন নেভানো তথা harmful genes এর প্রোটিন উৎপাদন প্রক্রিয়া স্থায়ীভাবে বন্ধের জন্য চিকিৎসা করে। এটি যে সম্ভব তা স্যার শ্যামল কুমার দাস নিজে সহ তাঁর ভারত-বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কয়েকশত ছাত্র-ছাত্রী হাজার হাজার রোগগ্রস্ত এবং আপাত সুস্থ মানুষের উপর প্রয়োগ করে সফলতা প্রমান করেছেন। মডার্ণ সাইন্সের গবেষণায় জেনেটিক্স আবিষ্কৃত হয়েছে, আরও গভীরে গবেষণা চলছে তাই আমরা আশাবাদী একদিন না একদিন এই সত্য ক্লিনিক্যাল জেনেটিক্সের গবেষণায় প্রমাণিত হবেই!উপরের উদাহরণ থেকে স্যার শ্যামল কুমার দাসের শিক্ষানুযায়ী আমরা বুঝতে পারি বংশগতি থেকে প্রাপ্ত - যা জন্মের সময় পিতা-মাতার ক্রোমোজোমের মাধ্যমে সন্তানের মধ্যে আগমন ঘটে - harmful genes গুলি অভ্যন্তরীণ পরিবেশের প্রভাব বা Endogenous factor or Internal environment হিসেবে মানুষের দেহভ্যন্তরে প্রতিষ্ঠিত থাকে, যাকে বলা হয়েছে তুষের মধ্যে থাকা আগুন। এই harmful genes গুলি ছয় সেটে আলাদা আলাদাভাবে ছয়টি true disease এর প্রতিনিধিত্ব করে।ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া, প্যাথজেন, দারিদ্রতা ও পুষ্টির অভাব, বিষাক্ত-অশুভ খাদ্যাভ্যাস, অস্বাস্থ্যকর, অনিয়মতান্ত্রিক ও অবৈধ জীবনাচার, বিরুপ প্রাকৃতিক পরিবেশ, শারীরিক-মানসিক আঘাত, প্রতিকুল পরিস্থিতি ইত্যাদি বাহ্যিক পরিবেশের প্রভাব বা Exogenous factor or External environment হিসেবে অভ্যন্তরীণ পরিবেশের প্রভাব বা Endogenous factor or Internal environment কে আলোড়িত করার ফলে ছয়টি true disease এর প্রতিনিধিত্বকারী harmful genes এর প্রোটিন উৎপাদন বৃদ্ধি ঘটে, যাকে বলা হয়েছে ভেতরে আগুন থাকা তুষের বাইরের বাতাস। তখন মানুষটির মধ্যে শারীরিক-মানসিকভাবে নানাবিধ প্রকারের অসংখ্য লক্ষণ বা results of disease বা প্যাথলজি প্রকাশ পায়। এ ঘটনা ঘটে আপাত সুস্থ বা apparently healthy or sick state মানুষের ক্ষেত্রে। ক্লিনিক্যাল এক্সপেরিয়েন্স থেকে স্যার শ্যামল কুমার দাস বলেন, বাহ্যিক পরিবেশের অনুকুল প্রভাব থাকলে কিংবা অনুকুল রাখার শত চেষ্টা (যেমন- জীবাণু থেকে সতর্কতা রক্ষা, আর্থিক স্বচ্ছলতা, স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার গ্রহন, নিয়মতান্ত্রিক জীবনাচার মেনে চলা, নিয়মিত প্রাণায়াম-যোগব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে বসবাস, অব্যহত শারীরিক-মানসিক প্রশান্তি, সার্বক্ষনিক অনুকুল পরিস্থিতি ইত্যাদি) থাকা স্বত্বেও মানুষ রোগগ্রস্ত হয় অর্থাৎ তাঁদের মধ্যে শারীরিক-মানসিকভাবে নানাবিধ প্রকারের অসংখ্য লক্ষণ বা results of disease বা প্যাথলজি প্রকাশ পায়। আবার যদি রিয়েল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা যথাযথ নিয়ম মেনে harmful genes এর প্রোটিন উৎপাদন প্রক্রিয়া স্থায়ীভাবে বন্ধ তথা স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় অবস্থা (Permanently inactive state) নিশ্চিৎ করা যায় এবং যথার্ত স্বাস্থ্য অবস্থা বা perfectly healthy state অর্জন সম্ভব হয়, তবে মানুষটি এহেন বাহ্যিক পরিবেশের অশুভ প্রভাব তাঁর অভ্যন্তরীণ সিস্টেমের সাহায্যে মোকাবেলা (cope up) করতে সক্ষম হয়। সুতরাং কোন বিবেচনায় বাহ্যিক পরিবেশের প্রভাব বা Exogenous factor or External environment কে অপরিহার্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না।যেহেতু প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই আগুন তথা true disease রয়েছে এবং প্রতিকুল External environment এর কারণে জিনগত এপিজেনেটিক ক্ষতিকর পরিবর্তন হওয়া সম্ভব, সেহেতু স্বাস্থ্য সংরক্ষক হিসেবে একজন রিয়েল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককে অবশ্যই অনুকুল External environment রক্ষায় সচেতন থাকা বাঞ্চনীয়। অতএব বাহ্যিক পরিবেশের প্রভাব বা Exogenous factor or External environment বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি বটে, কিন্তু রোগের মূল কারণ হচ্ছে বংশগতি বা জেনেটিক্স থেকে প্রাপ্ত অভ্যন্তরীণ পরিবেশের প্রভাব বা Endogenous factor or Internal environment এর জন্য দায়ী ছয়টি true disease। এর জন্যেই ওষুধ নির্বাচন এবং চিকিৎসা করতে হবে।