Contact

বংশগতি বা Genetics, কাজী আজম
11 Jun, 2024

বংশগতি বা Genetics, কাজী আজম

জন্মের সময় আমরা সকল রোগ-বালাই পেয়ে যাই তার বৈজ্ঞানিক প্রমান কি ? 

আমরা সাধারণভাবেই জানি, পিতা-মাতার যৌন মিলনের ফলে পিতার শুক্রাণু ও মাতার ডিম্বাণু একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় মিলিত হয়ে মায়ের গর্ভে ভ্রুণ সৃষ্টি করে একটি নির্দিষ্ট সময়-কাল পরে সন্তানের জন্ম হয়। এই বিশেষ প্রক্রিয়াটির বৈজ্ঞানিক তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে।

পিতার শুক্রাণুকে পুরুষ গ্যামেট এবং মায়ের ডিম্বাণুকে স্ত্রী গ্যামেট বলা হয়, এই দু’টি গ্যামেট ফার্টিলাইজ বা নিষিক্ত হয়ে এককোষী জাইগোট (Zygote) গঠিত হয়। গ্যামেট হল জনন কোষ। মানুষসহ উচ্চ শ্রেণির জীবের যাদের লিঙ্গভেদ আছে তাদের দেহে মিয়োসিস কোষ বিভাজনের ফলে গ্যামেট উৎপন্ন হয়। দুই ধরণের গ্যামেট মিলিত হয়ে যে এককোষী জাইগোট গঠিত হয় তা অসংখ্যবার মাইটোটিক কোষ বিভাজনের পর ভ্রুণে রূপান্তরিত হয়। পুরুষ গ্যামেটে ২৩ টি এবং স্ত্রী গ্যামেটে ২৩ টি ক্রোমোজোম থাকে, এই মোট ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম এককোষী জাইগোটের মধ্যে অবস্থান করে। কোষের নিউক্লিয়াসের ভেতরে অবস্থিত নিউক্লিয় জালক থেকে উৎপন্ন নিউক্লিক অ্যাসিড ও প্রোটিন দিয়ে গঠিত যে-সুতোর মতো অংশ জীবদেহের বংশগত বৈশিষ্ট বহন করে এবং জীবের এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে পরিবাহিত করে তাকে ক্রোমোজোম বলে।

কার্যগত দিক থেকে ক্রোমোজোম কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যথা-

১. অটোজোম: যে সমস্ত ক্রোমোজোম জীবদেহের চারিত্রিক বৈশিষ্ট নিয়ন্ত্রণ করে তাকে অটোজোম বলে। মানুষের ২৩ জোড়া ক্রোমোজোমের মধ্যে ২২ জোড়া অটোজোম। 

২. সেক্স ক্রোমোজোম: যে ক্রোমোজোম জীবের লিঙ্গ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে থাকে তাকে সেক্স ক্রোমোজোম বলে। মানুষের দেহে সেক্স ক্রোমোজোমের সংখ্যা একজোড়া। পুরুষ গ্যামেটে xy এবং স্ত্রী গ্যামেটে xx ক্রোমোজোম থাকে। উভয়ের গ্যামেট হতে একটি করে ক্রোমোজোম মিলিত হয়ে নতুন আর এক জোড়া ক্রোমোজোম জাইগোটে অবস্থান নেয়। যদি পুরুষ গ্যামেট থেকে x এবং স্ত্রী গ্যামেট থেকে x ক্রোমোজোম মিলিত হয় তবে কন্যা সন্তান হয়, আর যদি পুরুষ গ্যামেট থেকে y এবং স্ত্রী গ্যামেট থেকে x ক্রোমোজোম মিলিত হয় তবে পুত্র সন্তান হয়। সেকারণে সন্তান পুত্র নাকি কন্যা হবে তা নির্ভর করে পুরুষের উপর, স্ত্রীর এবিষয়ে কোন ভুমিকা নেই।

এই ক্রোমোজোমকেই বংশসূত্র বলা হয়। আমরা আগেই জেনেছি জাইগোটের মাইটোটিক কোষ বিভাজনের কারণে মানুষের প্রতিটি দেহকোষের কোষকেন্দ্রের ভেতরে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম বা বংশসূত্র থাকে। প্রতিটি ক্রোমোজোমে দুইটি ডিএনএ (ডি-অক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) অণুর সূত্র সর্পিলাকারে একে অপরকে ঘিরে পেঁচিয়ে থাকে। একধরণের পলিমার অণু হিসেবে ডিএনএ-র ভেতরে অসংখ্য মনোমার নিউক্লিওটাইড অণু নির্দিষ্ট অনুক্রমে সজ্জিত থাকে। নিউক্লিওটাইডগুলির এই অনুক্রমগুলিতেই বংশগতিমূলক তথ্য সঙ্কেতায়িত থাকে। এখন একটি ডিএনএ অণুর যে খন্ডাংশগুলি (অর্থাৎ ডিএনএ-র অভ্যন্তরে নিউক্লিওটাইডগুলির যে অনুক্রমগুলি) জীবদেহকে গঠনকারী একেকটি প্রোটিন সংশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দানকারী ভ‚মিকা পালন করে, সেরকম ডিএনএ খন্ডাংশকে একেকটি জিন বা বংশাণু বলে। বংশগতিমূলক তথ্য বহনকারী জিনের সমষ্টি বা সামগ্রিক অনুক্রমকে জিনোম বা বংশাণুসমগ্র বলে। এ পর্যন্ত করা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অনুমান করা হয় মানবদেহের জিনোমে ২০ থেকে ২৫ হাজার জিন থাকে। দেহের প্রতিটি কোষ একই জিনোম বহন করে, তা ত্বকেরই হোক কিংবা হৃৎপিন্ডেরই হোক; কিন্তু ঐ কোষের জন্য প্রয়োজনীয় জিনগুলিই কার্যকর থাকে। মানবদেহে বহুসংখ্যক কোষ বা পবষষ থাকে, প্রতিটি কোষ মানবের বিকাশ এবং গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশণা বহন করে। 

ঊনবিংশ শতাব্দিতে ধর্মযাজক জোহান গ্রেগর মেন্ডেলের গবেষণায় জিনবিজ্ঞানের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। পর্যবেক্ষণ থেকে মেন্ডেল ধারণা দিয়েছিলেন, পিতা-মাতা থেকে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয় বংশগতির কিছু একক দ্বারা। মেন্ডেলের এই এককই পরবর্তী সময়ে জিন হিসেবে চিহ্নিত হয়।

আন্তর্জাতিক মানব জিনোম প্রকল্প ১৪ বছর ধরে গবেষণা করে শেষ পর্যন্ত ২০০৩ সালে মানব জিনোমের ভেতরে অবস্থিত তিনশত কোটি ডিএনএ বেস জোড়ের পূর্ণাঙ্গ অনুক্রম উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে। এই মানব জিনোমে একটি মানুষের সমস্ত বংশগতিমূলক তথ্য সঞ্চিত আছে। এই তথ্য বংশানুক্রমে অর্জিত বিভিন্ন ব্যাধি নির্ণয় ও চিকিৎসায় সাহায্য করে।

এ বিষয়ে স্যার শ্যামল কুমার দাস এর অভিমত -

Every individual inherits six groups of harmful genes and one group of beneficial genes. With which cellular activities are being controlled always. That is, different types organo-chemical reactions are controlled with both types of genes with their products (different enzymes). When the internal economy of the individual is relatively sterile i.e. before Real Homoeopathic treatment, both harmful as well as beneficial enzymes are equally responsible for maintaining sterile environment. When internal economy of an individual is affected with any adverse factor, like… nutrition, behavior, psychological stress, physical activity, working habits, smoking, and alcohol consumption, obesity, environmental pollution (Arsenic, Air pollution, Aromatic hydrocarbons and other organic pollutants), Shift-work, the beneficial organo-chemical reactions are inhibited and at the same harmful reactions are accelerated.

Any of the above factors may influence epigenetic mechanisms, such as DNA methylation, histone acetylation and microRNA expression.”

প্রত্যেক মানুষ উত্তরাধিকারসূত্রে ছয় সেট ক্ষতিকারক জিন এবং এক সেট উপকারী জিন পেয়ে থাকে। যা দিয়ে কোষীয় কার্যক্রম সবসময় নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। অর্থাৎ উভয় ধরণের জিন কর্তৃক উৎপাদিত বিভিন্ন এনজাইমের জৈব-রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে এই নিয়ন্ত্রন ঘটে। যখন ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্র তুলনামূলকভাবে অনুর্বর থাকে অর্থাৎ রিয়েল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার পূর্বে ক্ষতিকারক একইসাথে উপকারী উভয় এনজাইম সমানে সমান থাকে বলে এই পরিবেশের অনুর্বরতা রক্ষিত হয়। যখন কোন ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্র কোনও প্রতিকুল প্রভাবের দ্বারা আক্রান্ত হয়, যেমন... পুষ্টি, আচরণ, মানসিক চাপ, শারীরিক কার্যকলাপ, পেশাগত অভ্যাস, ধুমপান, এবং মাদক সেবন, মেদবৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণ (আর্সেনিক, বায়ু ধূষণ, হাইড্রোকার্বনযুক্ত প্রসাধনী এবং অন্যান্য জৈব দূষণ), পেশা পরিবর্তন ইত্যাদি উপকারী জৈব-রাসায়নিক বিক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এবং একই সময়ে ক্ষতিকারক বিক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।

উপরের যেকোন প্রভাব এপিজেনেটিক মেকানিজমকে প্রভাবিত করতে পারে, যেমন ডিএনএ মিথাইলেশন, হিস্টোন এসিটিলেশন এবং মাইক্রোআরএনএ অভিব্যক্তি।

রিয়েল হোমিওপ্যাথিক গবেষণায় স্যার শ্যামল কুমার দাস তিন ধরণের জিনের কথা উল্লেখ করেছেন, যথা-

১. উপকারী জিন (Beneficial genes): প্রতিটি মানুষ দেহভ্যন্তরে এক সেট উপকারী জিন উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়। এই জিন কর্তৃক উৎপাদিত প্রোটিন থেকে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তা কোষীও কার্যকলাপ সু-শৃঙ্খলভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। অভ্যন্তরীণ পরিবেশ তথা কোষের মধ্যে পরিবেশে যদি উপকারী জিনের শক্তির পূর্ণ প্রকাশ অব্যহত থাকে তবে ক্ষতিকর কোন প্রোটিনের শক্তির খারাপ ফলাফল বোঝা যায না, উপকারী জিনের এই অবস্থাকে অতি-সক্রিয় অবস্থা (Over active state) বলে। কিন্তু যদি অভ্যন্তরীণ পরিবেশ তথা কোষের মধ্যে পরিবেশে ক্ষতিকর প্রোটিনের শক্তি বিষাক্ত আচ্ছাদন তৈরি করতে সক্ষম হয় তখন উপকারী জিনের শক্তির পূর্ণ প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হয় (যেমন- আকাশে মেঘ আচ্ছাদন তৈরি করলে সুর্যের শক্তির পূর্ণ প্রকাশ থাকে না), উপকারী জিনের এই অবস্থাকে অধিক্রমণ অবস্থা (Overlapping state) বলে। রিয়েল হোমিওপ্যাথিক ধারণায় উপকারী জিন তথা Beneficial genes কর্তৃক উৎপাদিত শক্তিকে কে জীবনীশক্তি বা Vital force বলা হয়। জীবিত অবস্থায় জীবের মধ্যে জীবনীশক্তি বা ঠরঃধষ ভড়ৎপব এর প্রকৃত শক্তি কম-বেশি বা বিশৃঙ্খল হয় না কিন্তু Overlapping state বা অধিক্রমণ অবস্থায় পূর্ণ শক্তিতে প্রকাশে বাধাগ্রস্ত হয় (যেমন- মেঘাচ্ছন্ন আকাশ থাকলে সুর্যের আলো বা শক্তি মাটিতে পৌঁছাতে বাধাগ্রস্ত হয় কিন্তু তখনও সুর্যের প্রকৃত শক্তি অটুট থাকে এবং মেঘমুক্ত হলে আবার তার শক্তির পূর্ণ প্রভাব মাটিতে এসে পৌঁছে), তদ্রুপ রিয়েল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় কোষীয় অভ্যন্তরের ক্ষতিকর বিষাক্ত পরিবেশ ধ্বংস করে পুনরায় জীবনীশক্তি বা Vital force এর পূর্ণশক্তিতে মানব দেহে প্রভাব বিস্তারের পরিবেশ তৈরি করে এবং সেকারণে কোষীয় কার্যকলাপে শৃঙ্খলা ফিরে আসে, তাই স্যার হ্যানিম্যানের ভাষায়- অনুসন্ধিৎসু, যুক্তিবাদী মানুষ এই জীবন্ত, সুস্থ শরীরযন্ত্রকে মানবজীবনের মহত্তর উদ্দেশ্য সাধনে স্বাধীনভাবে নিযুক্ত করিতে সমর্থ হয়। একারণে স্যার শ্যামল কুমার দাস প্রায় বলে থাকেন- Vital force হচ্ছে মানুষকে সুস্থ রাখার আসল চিকিৎসক যা জন্মের সময়েই প্রত্যেককেই সৃষ্টিকর্তা দান করেছেন।    

২. ক্ষতিকারক জিন (Harmful genes): প্রতিটি মানুষ দেহভ্যন্তরে ছয় সেট ক্ষতিকারক জিন উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়। এই জিন কর্তৃক উৎপাদিত প্রোটিন থেকে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তা কোষীও কার্যকলাপ সু-শৃঙ্খলভাবে নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কোষের অভ্যন্তরীণ পরিবেশকে দূষিত ও বিষাক্ত করে Vital force এর Overlapping state বা অধিক্রমণ অবস্থা সৃষ্টি করে এবং ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন কষ্টকর সিম্পটম বা লক্ষণ তৈরি করে, ফলে যে প্যাথলজি দেখা দেয় প্রচলিত অর্থে তাকে রোগ-বালাই বলা হয়। সেকারণে ক্ষতিকারক জিন কর্তৃক উৎপাদিত প্রোটিন থেকে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তাকে রোগশক্তি বা Disease force বলে।  

৩. নীরব জিন (Silent genes): প্রতিটি মানুষ দেহভ্যন্তরে অসংখ্য নীরব জিন উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়। এই জিনগুলির সাধারণতঃ কোন ভুমিকা নেই তবে মেডিকেশনের কারণে সক্রিয় হয়ে প্রোটিন তৈরি করে। এই উৎপাদিত প্রোটিন থেকে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তা ক্ষতিকারক জিন কর্তৃক উৎপাদিত ক্ষতিকারক প্রোটিন অসাড় বা প্রশমিত (neutralize) করতে Vital force কে সাহায্য করে। 

অতএব, প্রত্যেক মানুষের জন্মের সময় উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত ছয় সেট ক্ষতিকারক জিন বা harmful genes হচ্ছে আসল রোগ বা true disease, যা জীবনব্যপি অসংখ্য results of disease সৃষ্টি করে মানুষের কষ্ট-ভোগের কারণ হয়। স্যার শ্যামল কুমার দাসের মতে Harmful genes গুলি চার অবস্থার এক অবস্থায় থাকতে পারে, যথা-

১. নিষ্ক্রিয় অবস্থা (Inactive state): নিষ্ক্রিয় বলা হলেও মূলত এই অবস্থায় ক্ষতিকারক জিনগুলি নিষ্ক্রিয় থাকে না, এরা ঠিকই প্রোটিন উৎপাদন করে। প্রকৃত অর্থে এরা সক্রিয় থাকলেও beneficial genes অতি-সক্রিয় অবস্থায় থাকার কারণে ক্ষতিকারক জিনের উৎপাদিত প্রোটিনসমূহ অসাড় বা প্রশমিত (neutralize) করে কোষীয় অভ্যন্তরীণ পরিবেশ স্বাস্থ্যের জন্য অনুকুল রাখতে সক্ষম হয়। সেকারণে এদের অশুভ প্রতিক্রিয়া বোঝা যায় না বিধায় এই অবস্থাকে নিষ্ক্রিয় অবস্থা (Inactive state) বলা হয়ে থাকে। যেহেতু প্রকৃত অর্থে ক্ষতিকারক জিনগুলি সক্রিয় থেকে ক্ষতিকারক প্রোটিন উৎপাদন অব্যহত থাকে সেহেতু যেকোন সময়ে অভ্যন্তরীণ পরিবেশ দূষিত ও বিষাক্ত হয়ে Vital force এর Overlapping state বা অধিক্রমণ অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে এবং এরফলে পরিনামে Individual তথা ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন কষ্টকর সিম্পটম বা লক্ষণ তৈরি করে প্যাথলজি সৃষ্টি হবে এবং মানুষটি রোগগ্রস্ত হবে অর্থাৎ প্রচলিত অর্থে রোগ-বালাই বা results of disease তৈরি হবে। একারণে এই অবস্থাকে apparently healthy state or sick state বা আপাত সুস্থ অবস্থা বলা হয়। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে Inactive state এ Individual এর জীবনদর্শন প্রকাশিত হয় না। প্রচলিত কোন থেরাপিউটিক সিস্টেমে এমনকি ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথিক সিস্টেমেও এসকল Individual এর কোন চিকিৎসা না থাকলেও রিয়েল হোমিওপ্যাথিক থেরাপিউটিক সিস্টেমে এদের চিকিসা আছে এবং ভবিষ্যতের ভয়াবহতা রুখে দেয়া বা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।  

২. সক্রিয় অবস্থা (Active state): যে অবস্থায় Individual তথা ব্যক্তির আচার-আচরনে কোন এক বা একাধিক true disease এর জীবনদর্শন তথা philosophy of life প্রকাশিত হয় যা চিকিৎসক বুঝতে পারেন, সেই অবস্থাকে ক্ষতিকারক জিনের সক্রিয় অবস্থা (Active state) বলা হয়। এই অবস্থায়ও Individual তথা ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক ক্ষেত্রে কোন কষ্টকর সিম্পটম বা লক্ষণের উপস্থিতি থাকে না অর্থাৎ কোন প্যাথলজি দেখা যায় না এবং মানুষটিকে সুস্থ-সবল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু অচিরেই এই Individual তথা ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন কষ্টকর সিম্পটম বা লক্ষণ তৈরি করে প্যাথলজি সৃষ্টি হবে এবং মানুষটি রোগগ্রস্ত হবে অর্থাৎ প্রচলিত অর্থে রোগ-বালাই বা results of disease তৈরি হবে। একারণে এই অবস্থাকেও apparently healthy state or sick state বা আপাত সুস্থ অবস্থা বলা হয়। এ অবস্থায় যেসকল জীবনদর্শন প্রকাশিত হয় তাকে স্বভাবের গুণ অথবা দোষ- যা বয়স হলে ঠিক হয়ে যাবে (!) বলে অবজ্ঞা করা হয় বিধায় প্রচলিত কোন থেরাপিউটিক সিস্টেমে এমনকি ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথিক সিস্টেমেও এসকল Individual এর কোন চিকিৎসা না থাকলেও রিয়েল হোমিওপ্যাথিক থেরাপিউটিক সিস্টেমে এদের চিকিসা আছে এবং ভবিষ্যতের ভয়াবহতা রুখে দেয়া বা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। স্যার শ্যামল কুমার দাস তাঁর দীর্ঘদিনের গবেষণায় এবং তাঁর ছাত্র ছাত্রীদের প্র্যাকটিসে শৈশবের জীবনদর্শন (philosophy of early life) পর্যবেক্ষণে লক্ষ্য করা গেছে যে, প্রায় সকল মানুষের মধ্যেই এক বা একাধিক true disease এর জীবনদর্শন পাওয়া যায়। যদি Individual তথা ব্যক্তির মধ্যে একাধিক true disease এর জীবনদর্শন থাকে তবে রিয়েল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে দ্বিতীয় বা তৃতীয় সাইকেলে ওষুধ নির্বাচনের সময় প্রাক শৈশবের জীবনদর্শন (philosophy of earliest part of life) কে অধিকতম গুরুত্ব দিতে হবে। 

৩. অতি-সক্রিয় অবস্থা (Over active state): যে অবস্থায় Individual তথা ব্যক্তির দেহ-মনে কষ্টকর লক্ষণ বা প্যাথলজি বা ৎবংঁষঃং ড়ভ ফরংবধংব প্রকাশ পায় অর্থাৎ মানুষটি রোগীতে পরিণত হয় তাকে অতি-সক্রিয় অবস্থা (Over active state) বলে। এই মানুষেরাই নিজে অথবা স্বজনদের সাথে চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে আসেন। প্রচলিত সকল থেরাপিউটিক সিস্টেমে এমনকি ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথিক সিস্টেমেও এসকল Individual এর দেহ-মনের কষ্টকর লক্ষণ বা প্যাথলজি বা results of disease কে বিবেচনা করে চিকিৎসার জন্য ওষুধ নির্বাচন করা হয়, কিন্তু রিয়েল হোমিওপ্যাথিক থেরাপিউটিক সিস্টেমে Individual তথা ব্যক্তির নিষ্ক্রিয় অবস্থা (Inactive state) কিংবা সক্রিয় অবস্থা (Active state) থেকে প্রাপ্ত শৈশবের জীবনদর্শন (philosophy of early life) বিশেষত প্রাক শৈশবের জীবনদর্শন (philosophy of earliest part of life) এর সিম্পটম বা লক্ষণ বিবেচনা করে চিকিৎসার জন্য ওষুধ নির্বাচন করা হয়।  

৪. স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় অবস্থা (Permanently inactive state): রিয়েল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ছয়টি সাইকেলে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম কঠোরভাবে অনুসরণ করে মেটেরিয়া মেডিকায় বর্ণিত গঠনপ্রকৃতি সংশোধনকারী ওষুধসমূহের (Constitutional medicines) মধ্য থেকে সংগৃহিত ৮টি রিয়েল হোমিওপ্যাথিক গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ যথাক্রমে- ১. হাইড্রোফেবিনাম, ২. সোরিনাম, ৩. ড্রসেরা, ৪. সিফিলিনাম, ৫. থুজা, ৬. মেডোরিনাম, ৭. কার্বো-ভেজ এবং ৮. কার্বো-এনিমিলিস প্রয়োগ করে ক্ষতিকারক জিন বা harmful genes এর প্রোটিন উৎপাদন প্রক্রিয়া স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়ার পর যে অবস্থা তৈরি হয় তাকে স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় অবস্থা (Permanently inactive state)  বলে। স্যার শ্যামল কুমার দাস বলেন- শত-সহস্র প্রজন্ম থেকে প্রাপ্ত true disease এর প্রতিনিধিত্বকারী ক্ষতিকারক জিন বা harmful genes গুলিকে ছয় সাইকেল একবার ঘোরালেই তাদের প্রোটিন উৎপাদন স্থায়ীভাবে বন্ধ করা অসম্ভব, অন্তত তিনবার ঘোরাতে হবে। কিন্তু চিকিৎসকের ইচ্ছেমত ওষুধ একের পর এক প্রয়োগ করলে হবে না বরং এতে মারাত্বক বিপর্যয় ঘটতে পারে, একটি নির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি যথাযথভাবে অনুসরণ করে Individual তথা ব্যক্তির দেহভ্যন্তরের সিস্টেম বুঝে ওষুধগুলি প্রয়োগ করতে হবে। রিয়েল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক যদি যথাযথ নিয়ম মেনে কোন Individual তথা ব্যক্তির চিকিৎসা সম্পন্ন করতে সক্ষম হন তবে ঐ মানুষটি কখনও রোগের ভয়াবহতায় আক্রান্ত হবেন না, আর যদি ভয়াবহ রোগ নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসেন তবে তা প্রকৃত অর্থে নিরাময় হবে, আর যদি ভয়াবহতম রোগ (যেমন- ক্যানসার) নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসেন তবে তাঁর বাকি দিনগুলি আরামের সাথে বেঁচে থাকা সম্ভব হবে। স্বাভাবিক মৃত্যুকে ঠেকানো সম্ভব নয় কেননা এটি সৃষ্টিকর্তার অমোঘ নিয়ম। যে পিতা-মাতাকে রিয়েল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ক্ষতিকারক জিন বা harmful genes গুলিকে স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় (Permanently inactive state) আনা সম্ভব হয় তাদের পরবর্তী জীবনে জন্ম নেয়া সন্তানেরা জন্মগতভাবে বিকলাঙ্গ হবে না এবং দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে না।

স্যার শ্যামল কুমার দাস তাঁর A New Voyage With Real Homoeopathy বইয়ের দশম চ্যাপ্টারে জেনেটিক্স এর মৌলিক বিষয় ও কার্যপ্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। পাঠকের স্বার্থে তার অনুবাদ তুলে ধরা হল-

ভুমিকা:

জিন ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) এর একটি অংশ। এর আণবিক ওজন লক্ষ লক্ষ। একটি ডিএনএ অণুতে বেশ কয়েকটি জিন থাকতে পারে। কোষের মধ্যে প্রোটিন এবং অন্যান্য কাঠামোগত পদার্থের গঠন ও নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালনের ক্ষমতাসম্পন্ন কাজ জিন দ্বারা পরিচালিত হয়। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জিন বিভিন্ন পদার্থের এই উৎপাদনকে নিয়ন্ত্রণ করে তাকে জেনেটিক কোড বলে। যেহেতু যে কোন জীবের জেনেটিক তথ্য প্রোটিন সংশ্লেষণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়, তাই ডিএনএ-এর বেস সিকোয়েন্সকে অবশ্যই একটি কোড তৈরি করতে হয়। যখন ডিএনএ-এর দুটি স্ট্যান্ড আলাদা হয়, তখন ভিত্তিগুলি বাইরে উন্মুক্ত হয়। এই বেসগুলি তাদের রৈখিক অনুক্রমিক বিন্যাস সহ কোড গঠন করে। অ্যামিনো অ্যাসিড-ই কোড থেকে বেসের সাথে একটি সম্পর্ক তৈরি করে। যেহেতু এখানে বিশটি অ্যামিনো অ্যাসিড এবং চারটি বেস রয়েছে, তাই একটি অ্যামিনো অ্যাসিডের সাথে একটি বেস কিংবা একটি অ্যামিনো অ্যাসিডের সাথে দুটি বেসের বিন্যাসকে ভাল বিবেচনা করা হয় না।

[“Chakraborty, Ghosh and Sahana’s Human Physiology”, 2 nd Edition, Chapter: ‘Clinical Genetics’, Pages 1165–1170]     

প্রোটিন সংশ্লেষণ (PROTEIN SYNTHESIS)

১. mRNA -এর প্রথম স্টেপপিন প্রোটিন সংশ্লেষণ পদ্ধতি:

RNA -এর তিনটি প্রকার (mRNA, rRNA এবং tRNA) নিউক্লিয়াসের DNA দ্বারা সংশ্লেষিত হয়। সংশ্লেষিত হওয়ার পরে এই RNA অণুগুলি পরিপক্ক হয় এবং সাইটোপ্লাজমে প্রবেশ করে; যেখানে mRNA (ম্যাসেঞ্জার RNAs) এবং  tRNA  (ট্রান্সফার RNAs) একসাথে কাজ করে, পৃথক অ্যামিনো অ্যাসিড সংগ্রহ করে একটি নির্দিষ্ট পলিপেপটাইড চেইন (প্রোটিনের প্রাথমিক গঠন) সংশ্লেষণের জন্য সঠিক ক্রমানুসারে রাখে। তাই প্রোটিন সংশ্লেষণ সাইটোপ্লাজমে ঘটে।

DNA স্ট্র্যান্ড থেকে mRNA -এর সংশ্লেষণকে ট্রান্সক্রিপশন বলা হয়।

mRNA - তে বেস সিকোয়েন্সের (বেসের ক্রম) কারণে একটি পলিপেপটাইড চেইন অ্যামিনো অ্যাসিডের ক্রম তৈরি হয়। অর্থাৎ রাইবোসোমে নির্দিষ্ট সজঘঅ একটি নির্দিষ্ট পলিপেপটাইড চেইন গঠনের নির্দেশ দেয়। একে অনুবাদ বলে।

সংক্ষেপে বলা যায় ট্রান্সক্রিপশন অনুবাদ দ্বারা অনুসরণ করা হয়। পলিপেপটাইড চেইনের অ্যামিনো অ্যাসিড ক্রম শেষ পর্যন্ত স্পষ্টতই DNA স্ট্র্যান্ডের বেস সিকোয়েন্সের উপর নির্ভর করে। আরও বলা যায় মানুষ সহ সকল প্রাণীর বৈশিষ্ট্য তার প্রোটিনের উপর নির্ভর করে। তাই DNA হল মানুষ সহ সকল প্রাণীর বৈশিষ্ট্যের নির্ধারক। সংক্ষেপে বলা যায় DNA বেস সিকোয়েন্স হল জেনেটিক্স কোড।

২. নিউক্লিয়াসে রক্ষিত নতুন প্রতিলিপিকৃত mRNA উপযুক্তভাবে পরিবর্তিত হয়, যা পোস্ট-ট্রান্সক্রিপশনাল পরিবর্তন হিসেবে পরিচিত। পোস্ট-ট্রান্সক্রিপশনাল পরিবর্তনে, (ক) একটি উপযুক্ত ক্যাপ (মিথাইল গুয়ানোসিন ট্রাইফসফেট সমন্বিত) নবগঠিত mRNA - তে যোগ হয়। ক্যাপটি mRNA অণুকে পরবর্তী পর্যায়ে রাইবোসোমের সাথে আবদ্ধ হতে সাহায্য করে, এবং (খ) কয়েকটি বেস নিয়ে গঠিত একটি লেজও যোগ হয়। mRNA কে স্থিতিশীল রাখা হয়তো লেজের একটি কাজ।

৩. এরপর পরিবর্তিত নিউক্লিয়াস ত্যাগ করে সাইটোপ্লাজমে প্রবেশ করে এবং রাইবোসোমের একটি সাব ইউনিটের সাথে নিজেকে সংযুক্ত করে। রাইবোসোমগুলিকে সাব ইউনিটে বিভক্ত করা হয় (যেমন 60S, 40S এবং এরকম ইত্যাদি)।

৪. এ পর্যায়ে সেই রাইবোসোমের সাথে যুক্ত হয় (যাতে রাইবোসোমাল RNAs, rRNAs থাকে) এবং সেই কোষের সাইটোপ্লাজমের অ্যামিনো অ্যাসিড সক্রিয় হয়ে যায়। একটি নির্দিষ্ট অ্যামিনো অ্যাসিড একটি tRNA (ট্রান্সফার RNA) এর সাথে সংযুক্ত থাকে এবং অ্যামিনো অ্যাসিড tRNA - এর সাথে যুক্ত থাকায় mRNA - তে নির্দিষ্ট স্পটটিকে চিনতে পারে এবং সংমিশ্রণ থেকে অ্যামিনো অ্যাসিড আনলোড করে। অ্যামিনো অ্যাসিড এপর্যায়ে নির্দিষ্ট জায়গায় নিজেকে স্থাপন করে (এর দ্বারা mRNA - তে তিনটি বেস সিকোয়েন্স গঠিত হয়), এবং tRNA প্রকাশিত হয়। আর একটি অ্যামিনো অ্যাসিড + tRNA সংমিশ্রণ বিকশিত হয় এবং পুরো প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি ঘটে।

৫. এই প্রক্রিয়াটি বারবার পুনরাবৃত্তি করলে একটি পলিপেপটাইড চেইন (প্রোটিনের প্রাথমিক গঠন) তৈরি হয়।

[“Concise Medical Physiology”, 7th Edition, by Sujit K Chaudhuri, Pages 430-432]

ক্লিনিক্যাল জেনেটিক্সে ব্যবহৃত টার্মগুলির সংজ্ঞা

জন্মগত রোগ (Congenital disease): জন্মের সময় যে রোগ হয়, বাধ্যতামূলকভাবে বংশগত নয়।

উদাহরণ : জন্মগত সিফিলিস।

বংশগত রোগ বা উত্তরাধিকারী সূত্রে প্রাপ্তরোগ (Hereditary disease or heritable disease): যে রোগটি পিতা-মাতার কাছ থেকে ক্রোমোজম বা জিন বা জিনের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়।

জিনগত রোগ (Genetic disease): এটি বংশগত রোগের সাথে কমবেশি সমার্থক এবং এর অর্থ সংক্রমণিত বা মিউট্যান্ট (পরিবর্তিত) জিনের কারণে রোগ।

উদাহরণ : গাউট, ডাযাবেটিস, থ্যালাসেমিয়া সিন্ড্রোম, হিমোফিলিয়া সিন্ড্রোম, নেফ্রোজেনিক ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস, সিউডক্সান্থোমা ইলাস্টিকম ইত্যাদি।

ক্লিনিক্যাল প্রকাশ অ্যালবিনিজম হিসেবে জন্মের সময় প্রদর্শিত হতে পারে; শিশুদের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া, ফিনাইল কেটোনুরিয়া হিসেবে; স্কুলগামী শিশুর হিমোফিলিয়া হিসেবে; প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ডায়াবেটিস মেলিটাস হিসেবে; বয়স্কদের মধ্যে ডায়াবেটিস (পরিপক্কতা শুরু), গাউট এবং হান্টিংসন’স কোরিয়া হিসেবে।

বিশেষ করে homozygotes এর মধ্যে আরও গুরুতর ত্রুটি দ্রুত উদ্ভাসিত হয়।

হোমোজাইগাস অবস্থা (Homozygous state): এটি একই ধরণের জিন বহনকারী হোমোলোগাস ক্রোমোজোমকে নির্দেশ করে।

উদাহরণ : হোমোজাইগাস থ্যালাসেমিয় বা হোমোজাইগাস E disease।

হেটেরোজাইগাস অবস্থা (Heterozygous state): এটি ভিন্ন ভিন্ন জিন বহনকারী সমজাতীয় ক্রোমোজোমকে নির্দেশ করে।

উদাহরণ : থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট (বাহক) বা Hb E trait। 

পারিবারিক রোগ (Familial disease): পরিবারের একাধিক সদস্যের মধ্যে উপস্থিত একটি রোগ। এটি সাধারণত জেনেটিক উৎসের নয়। পুষ্টিগত বা সংক্রামক ব্যাধি পরিবারের বেশ কিছু সদস্যকে প্রভাবিত করতে পারে। 

বাহক (Carrier): একজন ব্যক্তি, যে আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের অধিকারী কিন্তু একটি অটোসোমাল রিসেসিভ বা সেক্স-লিঙ্কড রিসেসিভ জিন বহন করে।

জিন (Gene): বংশগতির কার্যকরী জৈবিক একক, ক্রোমোজোমে উপস্থিত, ডিএনএ’র দৈর্ঘ্য নিয়ে গঠিত, যার কাজ হল একটি পলিপেপটাইড তৈরি করা, যা অন্যান্য পলিপেপটাইডের সাথে মিলিত হয়ে প্রোটিন যেমন এনজাইম এবং কাঠামোগত প্রোটিন তৈরি করতে পারে।

লোকাস (Locus): সেন্ট্রোমিয়ারের সাথে সম্পর্কিত ক্রোমোজোমের ভিতরে একটি জিনের অবস্থানগত সঠিক অবস্থা।

সংযোগ (Linkage): একটি জিনের সাথে অন্য জিনের লোকাসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

মিউটেশন (Mutation):  জিন বা ক্রোমোজোমের পরিবর্তন।

জিনোকপি বা জেনেটিক অনুকরণ (Genocopy or genetic mimics): এর অর্থ একাট ভিন্ন জিনের মিউটেশন দ্বারা উৎপাদিত একটি অভিন্ন রোগ।

ফেনোকপি (Phenocopy): উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত একটি সঠিক প্রজনন চরিত্র কিন্তু পরিবেশগত ফ্যাক্টর দ্বারা উৎপাদিত। মাতৃ রুবেলা থেকে সৃষ্ট উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বধির মিউটিজম যা অফস্প্রিং থেকে আলাদা করা যায় না।

দ্বৈত হেটেরোজাইগাস অবস্থা (Double heterozygous state): যেখানে হোমোলোগাস ক্রোমোজোমের সংশ্লিষ্ট অবস্থান একটি ভিন্ন অস্বাভাবিক জিন বহন করে।

উদাহরণ : Hb E/ থ্যালাসেমিয়া বা HbE/S রোগ।

প্রভাবশালী জিন (Dominant gene): জিন যা সমজাতীয় (homozygous) বা ভিন্নধর্মী (heterozygous) যে কোন অবস্থায় তার প্রভাব প্রয়োগ করতে সক্ষম। এই ধরণের জিন দ্বারা উৎপাদিত উত্তরাধিকার (ট্রান্সমিশন) কে প্রভাবশালী উত্তরাধিকার বলা হয়। 

উদাহরণ : গাউট, টিউবারাস এসক্লেরোসিস এবং নিউরোফাইব্রোমাটোসিস।

প্রচ্ছন্ন জিন (Recessive gene): জিন যেটি তার প্রভাব প্রয়োগ করে (নিজেকে প্রকাশ করে) শুধুমাত্র- সমজাতীয় (homozygous) অবস্থায়, ভিন্নধর্মী (heterozygous) অবস্থা বাহক অবস্থায় অস্তিত্ব থাকে। এই ধরণের জিন দ্বারা উৎপাদিত উত্তরাধিকারকে প্রচ্ছন্ন উত্তরাধিকার বলা হয়।

উদাহরণ : অ্যালবিনিজম।

অন্তর্বর্তী উত্তরাধিকার (Intermediate inheritance): এখানে সমজাতীয় (homozygous) অবস্থাকে রোগের ক্লিনিক্যাল অভিব্যক্তি হিসেবে (যেমন- প্রচ্ছন্ন) প্রকাশ করে এবং যদিও ভিন্নধর্মী (heterozygous) অবস্থা সম্পন্ন বৈশিষ্টের বাহক ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় (যেমন- প্রভাবশালী) নির্ণয় করা যেতে পারে, ক্লিনিক্যাল লক্ষণবিদ্যায় প্রকাশ শূন্য বা ন্যূনতম থাকে (অনুসন্ধান এবং রোগ হিসেবে প্রচ্ছন্নতার দ্বারা আধিপত্যের মধ্যবর্তী অবস্থার প্রকাশ)।

উদাহরণ : সমস্ত হিমোগ্লোবিনোপ্যাথি।

অ্যালিল বা অংশিদার জিন (Allele or partner genes): জিন যা সমজাতীয় (homologus) ক্রোমোজোমের সমজাতীয় (homologus) অবস্থান দখল করে।

কডোমিন্যান্স বা একাধিক অ্যালিলোমরফিক (Codominance or multiple allelomorfic): যখন একটি জিন লোকাস একাধিক জিন দ্বারা দখল করা হয়, অর্থাৎ সমজাতীয় (homologus) ক্রোমোজোমে দুটির বেশি অ্যালিল। 

অটোসোমাল ডিজিজ (Autosomal disease): ২২টি অটোসোমের একটিতে অস্বাভাবিক জিনের কারণে রোগ।

উদাহরণ : নিউরোফাইব্রোমাটোসিস।

লিঙ্গ-সংযুক্ত রোগ (Sex-linked disease): দুটি লিঙ্গভিত্তিক ক্রোমোজোমের মধ্যে একটি অস্বাভাবিক জিনের কারণে রোগ, X বা Y।

উদাহরণ : হিমোফিলিয়া।

অটোসোমাল প্রভাবশালী (Autosomal dominant): ২২টি অটোসোমের একটিতে পরিবর্তিত জিনের (mutated gene) প্রভাবশালী প্রভাব।

উদাহরণ : গাউট, মাইগ্রেন, মৃগীরোগ, এপিলোয়া, নিউরোফাইব্রোমাটোসিস ইত্যাদি।

অটোসোমাল প্রচ্ছন্ন (Autosomal recessive): ২২টি অটোসোমের একটিতে পরিবর্তিত জিনের (mutated gene) প্রচ্ছন্ন প্রভাব।

উদাহরণ : থ্যালাসেমিয়া, অ্যালবিনিজম, ফিনাইল কেটোনুরিয়া, উইলসন’স ডিজিজ ইত্যাদি।

এক্স-সংযুক্ত প্রচ্ছন্ন (X-linked recessive): এক্স ক্রোমোজোমে একটি পরিবর্তিত জিনের (mutated gene) প্রচ্ছন্ন প্রভাব।

উদাহরণ : হিমোফিলিয়া, বর্ণান্ধতা, পেশীবহুল ডিস্ট্রোফির ডুচেন প্রকার।

এক্স-সংযুক্ত প্রভাবশালী (X- linked dominant): এক্স-ক্রোমোজোমে একটি পরিবর্তিত জিনের (mutated gene) প্রভাবশালী প্রভাব।

উদাহরণ : নেফ্রোজেনিক ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস।

ওয়াই-সংযুক্ত প্রভাবশালী (Y-linked dominant): ওয়াই-ক্রোমোজোমে একটি পরিবর্তিত জিনের (mutated gene) প্রভাবশালী প্রভাব। লোমশ পিনাকে ওয়াই-ক্রোমোজোমের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়।

লিঙ্গ-সীমিত উত্তরাধিকার (Sex-limited inheritance): যেখানে রোগটি শুধুমাত্র একটি লিঙ্গভিত্তিক পুরুষ বা মহিলার মধ্যে সীমিত (প্রকাশ) থাকে। হেমোক্রোমাটোসিস একটি আয়রন জমা রোগ যা শুধুমাত্র মহিলাদের মধ্যে প্রকাশিত হয় কারণ মাসিক পিরিয়ডের মধ্যে রক্তক্ষরণ মহিলাদের ক্লিনিক্যাল অভিব্যক্তি থেকে রক্ষা করে।

লিঙ্গ-নিয়ন্ত্রিত উত্তরাধিকার (Sex-controlled inheritance): এমন একটি অবস্থা যেখানে জিনোটাইপিক সংক্রমণ উভয় লিঙ্গের মধ্যে হয় তবে সেক্স হরমোনের প্রভাবের কারণে বিভিন্ন লিঙ্গের মধ্যে ফেনোটাইপিক অভিব্যক্তি ভিন্ন হয়। যদিও উভয় লিঙ্গের মধ্যে কেশশূণ্যতার জন্য জিন সংক্রমিত হয় তবে এন্ড্রোজেনের প্রভাব দ্বারা পুরুষদের মধ্যে প্রকাশ ঘটে।

টেস্টিকুলার ফেমিনাইজেশন সিন্ড্রোমে যদি বাহ্যিক যৌনাঙ্গ জিনোটাইপটি পুরুষ (XY) হয় এবং মহিলাদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়া স্বত্বেও অন্ডকোষের দ্বারা মহিলা সেক্স হরমোনের মুক্তির কারণে সেকেন্ডারি যৌন চরিত্র প্রকাশ পায়। রোগীও স্বাভাবিকভাবেই অক্ষম থাকে। 

আংশিক লিঙ্গ-সংযুক্ত (Partial sex-linked): যে অবস্থায় জিনটি X বা Y ক্রোমোজোমের হোমোলোগাস অংশে অবস্থিত (ক্রসিং-ওভারের সম্ভাবনা)।

সম্পূর্ণ লিঙ্গ-সংযুক্ত (Totally sex-linked): এমন অবস্থা যেখানে জিনটি ননহোমোলোগাস ক্রোমোজোমে থাকে (ক্রস-ওভারের কোন সুযোগ নেই)।

হোল্যান্ড্রিক (সমস্ত পুরুষ) উত্তরাধিকার (Holandric (all male) inheritance): Y - ক্রোমোজোমে জিনের সম্ভাব্য অবস্থান থেকে ফলাফল।

অনুপ্রবেশ (Penetrance): অস্বাভাবিক জিনের প্রকাশ বা অ-প্রকাশ।

পলিওট্রপিজম (Pliotropism): একটি একক পরিবর্তিত জিনের (mutated gene) একাধিক শেষ প্রভাব, যার ফলে একটি সিন্ড্রোম হয়।

উদাহরণ : নিউরোফাইব্রোমাটোসিস এবং কাফ-আউ-লেইট দাগ, টিউবারাস সেক্লরোসিস এবং ফ্যাকোমাটোসিস, মস্তিষ্ক, হৃৎপিন্ড, পেশী ইত্যাদিতে টিউমার।

জেনেটিক হেটেরোজেনিসিটি (Genetic heterogenicity): দুই বা ততোধিক মৌলিকভাবে স্বতন্ত্র জিনগত ব্যাধি যা ঘনিষ্ঠ ক্লিনিক্যাল মিলের কারণে একটি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

উদাহরণ : বিভিন্ন হিমোগ্লোবিনোপ্যাথি (অস্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন রোগ) এবং থ্যালাসেমিয়া সিন্ড্রোম ও হিমোফিলিয়া সিন্ড্রোম।

ডোজ ক্ষতিপূরণ (Dosage compensation): এটি এক্স- ক্রোমোজোমে অবস্থিত বেশিরভাগ জিনের জন্য সাধারণ পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে ফেনোটাইপিক অভিব্যক্তির সমতা নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। অন্য কথায়, এক্স- ক্রোমোজোমে অবস্থিত জিন দ্বারা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত জিনের পরিমাণ পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই একই (যেহেতু পুরুষদের মতো মহিলাদেরও শুধুমাত্র একটি সক্রিয় এক্স- ক্রোমোজোম থাকে)।

যেমন- ভাই এবং বোন।

অর্ধ-সম্পর্ক (Half-sib): অর্ধ-সম্পর্ক হল একজন সৎ ভাই বা সৎ বোন অর্থাৎ যাদের পিতা অথবা মাতা একজন একই থাকে।

সঙ্গতি (Consanguinity): রক্তের সম্পর্কের মধ্যে বিবাহ।

এন্ডোগ্যামি, ইনব্রিডিং (আন্তঃ বিবাহ): একই গোত্রের সদস্যদের মধ্যে বিবাহ।

এক্সোগ্যামি (Exogamy): বিভিন্ন উপজাতি বা সামাজিক গোষ্ঠীর অন্তর্গত মিলন।

অজাচার (Incest): পিতামাতা এবং সন্তানদের মধ্যে বা ভাইবোনের মধ্যে যৌন মিলন।

F1 বা প্রথম ফিলিয়াল জেনারেশন : দুটি ভিন্ন জাতি বা স্ট্রেনের ব্যক্তিদের মধ্যে মিলনের বংশধর। এটি দুটি ব্যক্তির মধ্যে মিলনের বংশধরের জন্যও ব্যবহৃত হয়, প্রত্যেকটি ভিন্ন চরিত্র নিয়স্ত্রণকারী ভিন্ন জিনের জন্য এরা সমজাতীয় (homozygous)।

উদাহরণ : গ্লাইকোজেন স্টোরেজ ডিজিজ এবং ইডিওপ্যাথিক হাইপারলিপেমিয়া আক্রান্ত রোগীর মধ্যে বা খাঁটি নিগ্রোয়েড (একজন আফ্রিকান) এবং একজন ইউরোপোয়েড (ইউরোপীয়) মানুষের মধ্যে বিবাহের ফলে সন্তানসন্ততি। 

F2বা দ্বিতীয় ফিলিয়াল জেনারেশন (F2 or second filial generation): F1 প্রজন্মের ব্যক্তিদের নিজেদের মধ্যে মিলনের ফলে সৃষ্ট সন্তান। মানুষের মধ্যে এটি এমন ব্যক্তিদের মধ্যে মিলনের ফলে হয় যাদের উভয়ের মধ্যে একজন খাঁটি আফ্রিকান এবং একজন খাঁটি ইউরোপিয়ান বা ভন গিয়ারকের একটি বিশুদ্ধ গ্লাইকোজেন রোগ এবং একজন বিশুদ্ধ ইডিওপ্যাথিক হাইপারলিপেমিয়ার বংশধর।

হারমাফ্রোডাইট (Hermaphrodite): পুরুষ এবং মহিলা উভয় চরিত্রের ব্যক্তি।

১. সত্যিকারের হারমাফ্রোডাইট (True hermaphrodite): ব্যক্তিদের উভয় প্রকারের গোনাডাল টিস্যু (টেস্টিস এবং ডিম্বাশয়) এবং উভয় লিঙ্গেও বাহ্যিক যৌনাঙ্গ থাকে। 

২. সুপ্ত হারমাফ্রোডাইট (Pseudohermaphrodite): ব্যক্তিদের গোনাড এক ধরণের (টেস্টিস বা ডিম্বাশয়) আছে কিন্তু বিপরীত ধরণের বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ লিঙ্গ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই বাহ্যিক যৌনাঙ্গ এবং সেকেন্ডারি লিঙ্গের চরিত্রগুলি বিভ্রান্তিকর সুরেলা প্রভাবের কারণে হয়।

ক. মহিলা সুপ্ত হারমাফ্রোডাইট (Female pseudohermaphrodite): ব্যক্তিটি একজন জেনেটিক ক্রোমোসোমালি মহিলা (XX), গোনাডাল মহিলা (ডিম্বাশয়যুক্ত) তবে সোমাটিক বা ফেনোটাইপিক পুরুষ (বহিরাগত যৌনাঙ্গ এবং পুরুষ ধরণের সেকেন্ডারি লিঙ্গের চরিত্র রয়েছে)।

খ. পুরুষ সুপ্ত হারমাফ্রোডাইট বা টেস্টিকুলার ফেমিনিজেশন (Male pseudohermaphrodite or testicular feminisation): ব্যক্তিটি একজন জেনেটিক বা ক্রোমোসোমালি পুরুষ (XY), গোনাডাল পুরুষ (অন্ডকোষ আছে) কিন্তু সোমাটিক বা ফেনোটাইপিক মহিলা (বাহ্যিক যৌনাঙ্গ এবং মহিলাদের মত সেকেন্ডারি লিঙ্গের চরিত্র রয়েছে)। 

৩. জিনন্ড্রোমোরফিজম বা যৌন মোজাইসিজম (Gynandromorphism or sex mosaicism): ব্যক্তিরা জেনেটিক্যালি মোজাইক (কিছু কোষে XX থাকে এবং কিছুতে XY থাকে), গোনাডাল মোজাইক উভয়ই টেস্টিস ও ডিম্বাশয় এবং বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরণের সোমাটিক ও সেকেন্ডারি লিঙ্গের চরিত্র থাকে।  পুরুষের মধ্যে- অস্পষ্ট বাহ্যিক যৌন চরিত্রগুলি পুরুষ এবং মহিলা উভয় হরমোনের প্রভাবের কারণে বিকাশ লাভ করে।

৪. উভয়লিঙ্গ (Intersex): এরা জেনেটিক্যালি পুরুষ (XY) বা মহিলা (XX) এবং এক লিঙ্গের গোনাড ধারণ করে তবে নালী ও বাহ্যিক যৌনাঙ্গ হয় বিপরীত লিঙ্গের (পুরুষ, মহিলা বা অস্পষ্ট যৌনাঙ্গ) এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বা সাধারণ)। তারা প্রায় সবসময অক্ষম থাকে যেখানে দুটির একটিও কার্যকরী যৌন সক্ষমতা নেই।

হেটেরোগ্যামেটিক লিঙ্গ (Heterogametic sex): যে লিঙ্গের সদস্যদের আলাদা জোড়া সেক্স ক্রোমোজোম থাকে (মানুষ ও ড্রসোফিলার সব পুরুষের ক্ষেত্রে XY টাইপ এবং পাখি ও লেপিডোপ্টারের সব স্ত্রীর ক্ষেত্রেও)।

হোমোগ্যামেটিক লিঙ্গ (Homogametic sex): যার সদস্যদের মধ্যে একই রকমের সেক্স ক্রোমোজোম রয়েছে যেমন মানুষের স্ত্রীতে XX এবং পাখির পুরুষ ড্রসোফিলা ও লেপিডোপটেরা। 

ক্যারিওটাইপ (Karyotype): একটি সোমাটিক কোষের পুরো ক্রোমোজোম ছবি।

মাইটোসিস (Mitosis): সোমাটিক কোষের নিউক্লিয়াস বিভাজনের প্রক্রিয়া। প্রতিটি কন্যা কোষ ঠিক একই সংখ্যক ক্রোমোজোম এবং মাতৃ কোষের অনুরূপ পরিপূরক জিন বহন করে।

মিয়োসিস (Meiosis): গোনাডাল কোষে পাওয়া নিউক্লিয়াস বিভাজনের প্রক্রিয়া (টেস্টিস এবং ডিম্বাশয়। দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে হবে) :

১. প্রতিটি কন্যা কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা অর্ধেক হয় (শুক্রাণু ও ডিম্বাণু)। প্রথম পর্যায়ে হ্রাস বিভাজন; দ্বিতীয় বিভাজন নন-রিডাকশন টাইপের।

২. জেনেটিক আদান-প্রদান (ক্রসিং-ওভার এবং রিকম্বিনেশন) প্রায়শই চিয়াসমাটার পর্যায়ে ঘটে, অর্থাৎ আলাদা হওয়ার আগে হোমোলোগাস ক্রোমোজোমের জোড়ায় (একটি পিতৃত্বের এবং একটি মাতৃত্বের)।

ডিপ্লয়েড (Diploid): সাধারণ সোমাটিক কোষের মতো জোড়াযুক্ত ক্রোমোজোম।

হ্যাপ্লয়েড (Haploid): স্বাভাবিক পরিপক্ক গোনাডাল কোষের অ-জোড়া ক্রোমোজোম (শুক্রাণু ও ডিম্বাণু)।

জাইগোট (Zygote): নিষিক্ত ডিম্বাণু (শুক্রাণু দ্বারা) যার পূর্ণ ক্রোমোজোম সংখ্যা (ডিপ্লয়েড সেট) থাকে।

অ্যানিউপ্লয়েডি (Aneuploidy): অসম্পূর্ণ ক্রোমোজোম সেট সহ কোষ যেমন মনোসোমি বা ট্রাইসোমি।

মনোসোমি (Monosomy): কোষে একটি নির্দিষ্ট ক্রোমোজোম জোড়ায় দু’টির পরিবর্তে একটি থাকে যেমন- 45, X (টার্নার সিন্ড্রোম)।

ট্রাইসোমি (Trisomy): কোষে দু’টির পরিবর্তে একটি নির্দিষ্ট জোড়ার তিনটি ক্রোমোজোম থাকে যেমন- 47, XXY (ক্লাইনফেল্টার’স সিন্ড্রোম)।

মোজাইসিজম (Mosaicism): বিভিন্ন সংখ্যক ক্রোমোজোমযুক্ত কোষ যেমন- 45, X 46, XX (অ্যাটিপিক্যাল টার্নার’স সিন্ড্রোম); 46, XX/ 47, XXY (অ্যাটিপিক্যাল ক্লাইনফেল্টার’স সিন্ড্রোম)।

ক্রসিং-ওভার (Crossing-over): হোমোলোগাস ক্রোমোজোমের সংলগ্ন অংশগুলির মধ্যে জেনেটিক উপাদানের বিনিময়।

বার বডি বা সেক্স ক্রোমাটিন (Barr body or sex chromatin): এটি নিউক্লিয়াস ঝিল্লির ঠিক ভিতরে একটি ঘন দাগযুক্ত বডি যা নিষ্ক্রিয় X ক্রোমোজোম (লিয়নের অনুমান) নির্দেশ করে। কোষের মধ্যে বার বডির সংখ্যা সর্বদা X ক্রোমোজোমের সংখ্যার চেয়ে একটি কম থাকে। কোষগুলি সহজেই বুকাল স্মিয়ার থেকে সংগ্রহ করা হয়। সাধারণ পুরুষ ক্রোমাটিনগুলি নেগেটিভ হয় অর্থাৎ তাদের বাব বডি নেই। সাধারণ স্ত্রী ক্রোমাটিনগুলি পজিটিভ অর্থাৎ শক্তভাবে কুন্ডলীকৃত এবং প্রকাশিত বার বডিতে একাধিক X নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে বার বডি পজিটিভ হয়।

বৈশিষ্ট্য (Trait): যে কোন জিন- নির্ধারিত বৈশিষ্ট্য। সাধারণত সিকেল সেল অ্যানিমিয়ার মতো রিসেসিভ ডিসঅর্ডারের হেটেরোজাইগাস অবস্থার জন্য ব্যবহৃত হয়।

ফার্মাকোজেনেটিক্স (Pharmacogenetics): জিনোটাইপ এবং ওষুধের প্রভাবের মধ্যে সম্পর্কিত জেনেটিক্সের অংশ।

ইমিউনোজেনেটিক্স (Immunogenetics): ইমিউনোগ্লোবুলিন, রক্তের গ্রুপ এবং হিস্টোকম্প্যাটিবিলিটি সহ অনাক্রম্যতার জেনেটিক্স। 

হল্যান্ড্রিক (Holandric): আক্ষরিকভাবে সমস্ত পুরুষদের প্রভাবিত করে। ণ-লিঙ্কযুক্ত উত্তরাধিকারে প্রয়োগ করা হয়েছে।

উদাহরণ : “লোমশ পিনা” শুধুমাত্র পুরুষদের প্রভাবিত করে।

আধা-আধিপত্য (Quasi-dominance): সরাসরি সংক্রমণ, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম, যদি জিন ঘন ঘন হয় বা তীব্র হয়।

জিন প্রবাহ (Gene flow): মাইগ্রেন এবং মিসজেনেশনের মাধ্যমে এক জনগোষ্ঠী থেকে অন্য জনগোষ্ঠীতে জিনের স্থানান্তর। 

জিনোম (Genome): মোট জেনেটিক সংস্থাপনা।

জেনেটিক মৃত্যু (Genetic death): ব্যক্তির পুনরুৎপাদনে ব্যর্থতা।

সাইটোজেনেটিক্স (Cytogenetics): জেনেটিক্সের শাখা প্রধানত ক্রোমোজোম এবং ফেনোটাইপের সাথে পাস্পরিক সম্পর্ক সম্পর্কিত।

অটোসোম (Autosome): লিঙ্গবিহীন ক্রোমোজোম।

গনোসোম (Gonosome): লিঙ্গযুক্ত ক্রোমোজোম।

ট্রান্সক্রিপশন (Transcription): DNA থেকে মেসেঞ্জার RNA-তে জেনেটিক কোডের তথ্য স্থানান্তর।

(জিন দ্বারা পরিচালিত গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা হল কোষের মধ্যে প্রোটিন এবং অন্যান্য কাঠামোগত পদার্থের গঠন নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জিন বিভিন্ন পদার্থের এই উৎপাদনকে নিয়ন্ত্রণ করে তাকে জেনেটিক কোড বলে।)

অনুবাদ (Translation): মেসেঞ্জার RNA দ্বারা বাহিত জেনেটিক তথ্য প্রোটিনের অ্যামিনো অ্যাসিড ক্রমানুসারে স্থানান্তর।

ট্রান্সডাকশন (Transduction): বিভিন্ন ষ্ট্রেন থেকে DNA দিয়ে চিকিৎসার মাধ্যমে একটি জীবের জিনগত গঠনের পরিবর্তন (উদাহরণ সরূপ ব্যাকটেরিয়া)।

একটি রোগ উৎপাদনে জিন এবং পরিবেশের ভুমিকা:

১. সম্পূর্ণরূপে জেনেটিক ডিসঅর্ডার:  ত্রুটিপূর্ণ জিন বা ক্রোমোজোম থেকে কিছু ত্রুটি বা রোগ দেখা দিতে পারে। পরিবেশগত ট্রমা প্রকাশ এসকল রোগ উৎপাদনে সামান্য ভ‚মিকা পালন করে।

উদাহরণ : ম্যালফরমেশন, নিউরোফাইব্রোমা, অ্যালবিনিজম ইত্যাদি।

২. সম্পূর্ণরূপে পরিবেশগত রোগ: কিছু রোগ বা ত্রুটি পরিবেশগত এজন্ট থেকে উদ্ভুত হয় সম্ভবত কোন জিনগত পটভুমি নেই।

উদাহরণ : আঘাতের ফলে বিকৃতি, হিট ষ্ট্রোক, অভাবজনিত ব্যাধি এবং সম্ভবত সবচেয়ে সংক্রামক রোগ।

৩. পরিবেশগত অধঃক্ষেপন জনিত জেনেটিক সংবেদনশীলতা: একটি মধ্যবর্তী গ্রুপ রয়েছে, যেখানে অনেক সাধারণ রোগ অন্তর্ভুক্ত যা পরিবেশগত অধঃপতনের সাথে জেনেটিক প্রবণতার প্রভাবে হয়ে থাকে। এগুলিকে মাল্টি-ফ্যাক্টরিয়াল ডিসঅর্ডারও বলা হয়।

উদাহরণ : পেপটিক আলসার, উচ্চ রক্তচাপ, এথেরোসেক্লরোসিস, স্থুলতা, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রাইমাকুইন সংবেদনশীলতা থেকে ওষুধ- প্ররোচিত হেমোলাইসিস।

সম্ভবত অন্যান্য অনেক সংক্রামক, অ্যালার্জী, অটোইমিউন, বিষাক্ত ব্যাধি এবং ড্রাগের বিষাক্ত অবস্থাগুলি সম্পূর্ণরূপে পরিবেশগত নয়, এগুলির জেনেটিক পটভুমি রয়েছে।

সকল ব্যক্তিই ব্রঙ্কাইটিস বা বারবার নাকের ক্যাটারিয়ায় ভুগেন না যদিও প্রত্যেকেই ঠান্ডার সংস্পর্শে আসে। সকল ব্যক্তির বারবার ডায়রিয়া, ম্যাল-অ্যাবসর্পশন বা পেপটিক আলসার সহ কোলাইটিস হয় না যদিও সবাই মসলা খান। সমস্ত তরুণ প্রাপ্তবয়স্করা সাইকোনিউরোসিসের শিকার হয় না, যদিও জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা এবং ব্যর্থতা প্রত্যেকেই অনুভব করে। উন্নত ডায়াগনস্টিক জ্ঞান বিকাশের সাথে সাথে আপাতদৃষ্টিতে অর্জিত অনেক রোগের জিনগত পটভুমি রয়েছে বলে প্রমাণিত হবে। প্রাইমাকুইন ইনডিউসড হেমোলাইসিস এখন লোহিত কণিকার G-6-P-D এনজাইম ঘাটতির কারণে পরিচিত। এই এনজাইম উৎপাদনকারী জিনটি X-ক্রোমোজোমে অবস্থিত।

মনোজেনিক ব্যাধি (MONOGENIC DISORDERS)

এগুলো হল ২২টি সোম্যাটিক ক্রোমোজোমের একটিতে (অটোসোম) বা ২টি লিঙ্গের ক্রোমোজোমের একটিতে (X বা Y) একক জিনের মিউটেশন দ্বারা উৎপাদিত ব্যাধি।

ট্রান্সমিশন প্যাটার্নগুলি উত্তরাধিকারের মেন্ডেলিয়ান আইন মেনে চলে। অটোসোমাল ব্যাধি কোন নির্দিষ্ট লিঙ্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। লিঙ্গ-সংযুক্ত ব্যাধিগুলি মেন্ডেলিয়ান নিয়ম অনুসারে মহিলা বা পুরুষ লিঙ্গের মধ্যে প্রকাশ করে।

নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল:

অটোসোমাল (AUTOSOMAL)

ক. অটোসোমাল প্রভাবশালী (Autosomal dominant - AD): গাউট, হেপাটিক পোরফাইরিয়া, মাইগ্রেন, হান্টিংটন’স কোরিয়া, নিউরোফাইব্রোমাটোসিস, অন্ত্রের পলিপোসিস, ফ্যামিলিয়াল পলিনিউরাইটিস, ফ্যামিলিয়াল হাইপার কোলেস্টেরোলেমিয়া, ইচথিওসিস ভালগারিস, মারফান’স সিন্ড্রোম, মায়াটোনিক ডিস্ট্রোফি, প্রাপ্ত বয়স্ক পলিসিস্টিক রোগ, বংশগত হেমোরেজিক টেলাঞ্জিয়েক্টাসিয়া, বংশগত স্ফেরোসাইটোসিস, ইডিওপ্যাথিক হাইপার ট্রফিক সাবওর্টিক স্টেনোসিস ইত্যাদি।

খ. অটোসোমাল প্রচ্ছন্ন (Autosomal Recessive- AR): অ্যালবিনিজম, ক্রোটিনিজম (স্পোরাডিক), থ্যালাসেমিয়া, হিমোগেøাবিনোপ্যাথি, গøাইকোজেন স্টোরেজ রোগ, এরিথ্রোপোয়েটিক পোরফাইরিয়া, ফিলাইল কেটেনুরিয়া, উইলসন’স রোগ (হেপাটোলেন্টিকুলার ডিজেনারেশন), ফাইসিসিয়াফেরিয়া, অ্যালবিনিজমের মতো বেশিরভাগ বিপাকীয় ত্রæটি। বংশহত এমফিসেমা (আলফা-১- এন্টিট্রিপটিনের অভাবের কারণে), সিকেল সেল অ্যানিমিয়া, জেরোডার্মা পিগমেন্টোসা ইত্যাদি।

লিঙ্গ-সংযুক্ত (SEX-LINKED)

ক. X -সংযুক্ত প্রচ্ছন্ন (X-linked Recessive- XR): হিমোফিলিয়া A এবং B (A ফ্যাক্টর VIII এর কারণে, অর্থাৎ AHG এর ঘাটতি এবং B ফ্যাক্টর IX এর কারণে, যেমন ক্রিসমাস ফ্যাক্টর ঘাটতি), বর্ণান্ধতা (লাল বা সবুজের জন্য), G-6-P-D অভাব, X-ichthyaosis, হান্টার’স সিন্ড্রোম, Lesch-Nyhan-সিন্ড্রোম, ক্রনিক গ্রানুলোমাটাস রোগ ইত্যাদি। 

খ. X-সংযুক্ত প্রভাবশালী (X-linked Dominant- XD) : ইনকনটেনেন্টিয়া পিগমেন্টি, অকুলার অ্যালবিনিজম, হাইপোফসফেটেমিক (ভিটামিন ডি প্রতিবরোধী) রিকেট।

গ. Y-সংযুক্ত প্রভাবশালী (Y-linked Dominant) : লোমশ পিনা (হাইপারট্রিকোসিস পিনা)

পলিজেনিক বহুমুখী ব্যাধি (POLYGENIC AND MULTIFACTORIAL DISORDERS)

এগুলি সাধারণ ব্যাধি যেখানে কোনও একক জিন দায়ী নয়। বংশতালিকা (পারিবারিক অধ্যয়ন) সাধারণ মেন্ডেলিয়ান প্যাটার্ন দেখায় না।

ক. পলিজেনিক বিকৃতি (Polygenic malformations): (বিচ্ছিন্ন বা ভিন্নতা দেখায়) ফাটা ঠোঁট, তালু ফাটা, নিতম্বের জন্মগত স্থানচ্যুতি, জন্মগত পাইলোরিক স্টেনোসিস, টেলপেস ইকুইনোভারাস, স্পাইনা বিফেডা, অ্যানেন্সফালি, জন্মগত হৃদরোগ।

খ. বহুমুখী রোগ (Multifactorial disease) (জিন যোগ পরিবেশ) ক্রমাগত বৈচিত্র দেখায়: ঠান্ডা-সংবেদনশীলতা, পেপটিক আলসার, উচ্চ রক্তচাপ, করোনারি হৃদরোগ, সিজোফ্রেনিয়া, অ্যানকিলোজিং স্পন্ডিলাইটিস, স্থ‚লতা, ডায়াবেটিস মেলিটাস, হালকা ম্যালাবশোরবশন, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, থাইরোটক্সিকোসিস, সোরিয়াসিস, অ্যালোপেসিকোরোমাটাইটিস, লিমিটেডের প্রদাহ, ভার্টিগো, সিলিয়াক রোগ, ক্রনিক অ্যাক্টিভ হেপাটাইটিস, অ্যাজমা, অ্যালঝাইমার রোগ।

অশ্রেণীবদ্ধ জটিল বিকৃতি (Unclassified complex malformations): তালু ফাটা, ঠোঁট ফাটা, স্পাইনা বিফিডা, জন্মগত হৃদরোগ, অঙ্গ, হাড়, কিডনী, লিভার এবং অন্যান্য অঙ্গ, নেভাস ইত্যাদির সাথে জড়িত বিকৃতি।

[“Chakraborty, Ghosh and Sahana’s Human Physiology”, 2nd Edition, Chapter: ‘Clinical Genetics’, Pages 1165-1170]

 জেনেটিক ব্যাধিগুলি হল -

১. একক জিন ব্যাধি (Single gene disorders)

২. বহুমুখী জেনেটিক ব্যাধি (Multifactorial genetic disorders)

৩. ক্রোমোসোমাল ব্যাধি (Chromosomal disorders)

৪. মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ ব্যাধি (Mitochondrial DNA disorders)

একক জিন ব্যাধি (Single gene disorders):

একটি এককের মধ্যে পরিবর্তন বা মিউটেশন।

উদাহরণ : ১) সিকেল সেল অ্যানিমিয়া ২) হান্টিংটন’স কোরিয়া

মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ ব্যাধি (Mitochondrial DNA disorders):

মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ ব্যাধি মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া যায়।

উদাহরণ: ১) অস্থি সংযুক্ত পেশী, কার্ডিয়াক পেশী এবং চোখের পেশী সংশ্লিষ্ট মায়োপ্যাথি ২) অপটিক নিউরোপ্যাথি

[“LPR Fundamentals of Medical Physiology” by L Prakasman Reddy]

এই সূচনা অধ্যায়টি শুধুমাত্র ক্লিনিক্যাল জেনেটিক্সের সাথে এবং রিয়েল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের জন্য চিকিৎসার মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সহায়ক এবং চিকিৎসক যে কেস-স্ট্যাটাসটি নিয়ে কাজ করছেন তা জানতে চিকিৎসকের পক্ষেও সহায়ক। রিয়েল হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা পদ্ধতি শুধুমাত্র “একজন ব্যক্তির দর্শন” বিশেষভাবে “শৈশবের জীবন দর্শন” এব সাহায্যে জেনেটিক মেকআপ নিয়ে কাজ করে। অধিকন্তু রিয়েল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার লক্ষ্য হল ক্ষতিকর জিনগুলির নিষ্ক্রিয়, সক্রিয় এবং অতি-সক্রিয় গোষ্ঠীকে স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় করা। ক্ল্যাসিক্যাল হোমিওপ্যাথি সহ বিশ্বের কোন চিকিৎসা পদ্ধতিতে এই ধারণার কোন গুরুত্ব নেই।

জোহান গ্রেগর মেন্ডেল (১৮২২-১৮৮৪) হচ্ছেন জেনেটিক্সের জনক। তিনি মটরশুটি গাছের উপর তাঁর কাজের মাধ্যমে উত্তরাধিকারের মৌলিক নীতি আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি অনুমান করেছিলেন যে জিন জোড়ায় জোড়ায় আসে এবং প্রতি পিতা-মাতার থেকে একটি করে পৃথক একক হিসেবে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়। মেন্ডেল পিতা-মাতার জিনগুলির পৃথকীকরণ এবং বংশের মধ্যে প্রভাবশালী বা অব্যবহিত বৈশিষ্ট্য হিসেবে তাদের উপস্থিতি ট্র্যাক করেছেন। তিনি এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মের উত্তরাধিকারের গাণিতিক নিদর্শনগুলিকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। 

মেন্ডেলের বংশগতির নীতি সাধারণত এভাবে বলা হয়:

১. পৃথকীকরণের নীতি (The Law of Segregation): প্রতিটি উত্তরাধিকারী বৈশিষ্ট্য একটি জিন জোড়া দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়। পিতা-মাতার এলোমেলোভাবে প্রবাহিত জিনগুলিকে যৌন কোষগুলিতে পৃথক করা হয় যাতে যৌন কোষগুলির জোড়ায় একটি মাত্র জিন থাকে। একারণে যখন যৌন কোষগুলি নিষিক্তকরণে একত্রিত হয় তখন সন্তানসন্ততি পিতামাতার কাছ থেকে একটি জেনেটিক অ্যালিল উত্তারাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়।

২. স্বাধীন শ্রেণী বিভাজন নীতি (The Law of Independent Assortment): বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের জন্য জিন একে অপরের থেকে আলাদাভাবে সাজানো হয় যাতে একটি বৈশিষ্ট্যের উত্তরাধিকার অন্যটির উত্তরাধিকারের উপর নির্ভরশীল না হয়।

৩. আধিপত্যের নীতি (The Law of Dominance): একটি জিনের বিকল্প ফর্ম সহ একটি জীব সেই ফর্মটিকে প্রকাশ করবে যা প্রভাবশালী।   

এ প্রসঙ্গে একটি কথা স্মরণে রাখা জরুরী যে হোমিওপ্যাথির জনক স্যার স্যামুয়েল হ্যানিম্যান (১৭৫৫-১৮৪৩)-এর মহা প্রয়ানের মাত্র ২১ বছর পূর্বে জেনেটিক্সের জনক স্যার জোহান গ্রেগর মেন্ডেল জন্মগ্রহণ করেন এবং একজন ধর্মজাজক হওয়া সত্বেও ১৮৫৬ থেকে ১৮৬৩ পর্যন্ত আট বছর জেনেটিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৮৬৫ সালে তার ফলাফল প্রকাশ করেছিলেন। শুরুতে তাঁর উত্তরাধিকার নীতি প্রশংসিত হয়নি। ১৯০০ সালে এটি পুণঃআবিষ্কারের পর থেকে অদ্যাবধি চলমান ব্যাপক গবেষণার ভিত্তিতে বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানে জেনেটিক্সের অনন্য অবস্থান গড়ে উঠেছে। অথচ এসমস্ত আবিষ্কারের বহু পূর্বেই স্যার স্যামুয়েল হ্যানিম্যান তার ক্রনিক ডিজিজেস বইতে প্রাজ্ঞ ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে হাইপোথিসিস হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন- বংশগতি থেকে আমরা শত-সহস্র প্রজন্মের রোগ বালাই বয়ে চলেছি, তিনি যে মায়াজম আবিষ্কার করেছিলেন এবং অর্গানন অব মেডিসিনের ৬ষ্ঠ সংস্করণে ১৪৮ নম্বর সূত্রে instinctive বিবেচনায় মায়াজম গুলির অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, এই instinctive বিষয়টিই আজকের জেনেটিক্স হিসেবে গণ্য হয়েছে। যা আজকে আবিষ্কৃত রোগ সৃষ্টির মূল উৎস ব্যক্তির মধ্যে থাকা ক্ষতিকারক (harmful) জিনগত অবস্থান, যাকে রিয়েল হোমিওপ্যাথির উদ্ভাবক স্যার শ্যামল কুমার দাস দীর্ঘ ৩৫ বছর হোমিওপ্যাথিক দার্শনিক ও ক্লিনিক্যাল গবেষণার পর ২০১৫ সালে True disease হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। 

যেহেতু বংশগতি থেকে প্রাপ্ত জেনেটিক মেটেরিয়াল সকল True disease এর উৎস হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এই উৎসকে বুঝতে ব্যক্তির জেনেটিক মেকআপ বুঝতে হবে, সেহেতু শৈশবের জীবনদর্শন থেকে জেনেটিক্স বা বংশগতি থেকে প্রাপ্ত ব্যক্তির জেনেটিক মেকআপ জেনে রিয়েল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ওষুধ নির্বাচন করা হয়। সে কারনে এই চিকিৎসায় Constitutional diagnosis এর গুরুত্ব অপরিসীম। এটিকে সহজ করতে স্যার শ্যামল কুমার দাস উদ্ভাবন করেছেন Fruit-Tree-Earth Syndrome (ফল-গাছ-মাটি তত্ত্ব) এবং ABC procedure of special case taking. এখানে -

A part এ Fruit তথা Patient এর বর্তমান এবং  zygote গঠন ও জন্মকাল সহ অতীতের রোগযন্ত্রণা, কষ্ট বা অসুস্থতার বিবরণ এবং তার জন্য কি ধরনের চিকিৎসা নিয়েছেন তা লেখা হয়। বিশেষভাবে রোগীর Consciousness এবং Pathological test report এর ফলাফল প্রয়োজনে লিখে রাখা হয়। 

B part এ Fruit ফলেছে যে Tree তে তথা Father, Mother এবং Tree জন্মেছে যে Earth এ তথা Grand Father, Grand Mother (paternal and maternal side) তাঁদের মধ্যে থাকা প্রকট True disease গুলির Pathological এবং Philosophical Indications এর তথ্যগুলি সংগ্রহ করা হয়। 

C part এ Fruit এর জন্মের পর থেকে শৈশব বা বাল্যকালের দর্শন তথা Philosophy of Early Life বুঝতে Weeping, Activity, Affection, Mentality ইত্যাদি প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়। 

A part এর History of Present Complaints, Past history, B ও C part এর তথ্য বিশ্লেষণ করে Patient এর Vital force এর Sickness এর জন্য দায়ী True disease এর প্রকটতা বিবেচনা করে ওষুধ নির্বাচন ও প্রয়োগ করা হয়। যেহেতু Real Homoeopathy তে Results of disease এর চিকিৎসা করা হয় না বিধায় ওষুধ নির্বাচনে A part এর Present Complaints তথা বর্তমান কষ্টভোগ বা রোগয়ন্ত্রণার তথ্যের গুরুত্ব অত্যন্ত সীমিত, তবে নির্বাচিত ওষুধের Potency ঠিক করতে এবং চিকিৎসা চলাকালিন নির্বাচিত ওষুধের সঠিকতা যাঁচাই, Next prescription এবং রোগযন্ত্রণার উপশম বা বৃদ্ধি বা নিরাময় বুঝতে A part এর Present Complaints এর গুরুত্ব অপরিসীম।

Constitutional diagnosis এর জন্য উদ্ভাবিত Fruit-Tree-Earth Syndrome অনুযায়ী case taking যেমন যথাযথভাবে সহজে সম্পাদন যোগ্য, তেমনই এতে Real Homoeopathy থেকে বিচ্যুত হওয়ার সুযোগ একেবারেই নেই।