Contact

ফার্মাকোজেনোমিক্স (Pharmacogenomics), কাজী আজম
15 Jun, 2024

ফার্মাকোজেনোমিক্স (Pharmacogenomics), কাজী আজম

ফার্মাকোজেনোমিক্স (Pharmacogenomics) জিনোমের একাধিক মিউটেশনের একযোগে প্রভাব নিয়ে কাজ করে যা ড্রাগ থেরাপিতে রোগীর প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ করতে পারে, অন্যদিকে ফার্মাকোজেনেটিক্স হল ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় পৃথক ভিন্নতর জেনেটিক কারণগুলির অধ্যয়ন।

আমরা Aneesh T P, Sonal Sekhar M, Asha Jose, Lekshmi Chandran, Subin Mary Zachariah লেখকগণের যৌথভাবে লিখিত ও প্রকাশিত Pharmacogenomics: The Right Drug to the Right Person প্রবন্ধ থেকে সংক্ষিপ্ত হলেও বিষয়টি সম্পর্কে উপলব্ধি করতে চেষ্টা করব। সম্পূর্ণ প্রবন্ধটির ভাব অনুবাদ নিচে উল্লেখ করা হল।

সংক্ষিপ্তসার

ফার্মাকোজেনোমিক্স হল ফার্মাকোলজির একটি শাখা যা ওষুধের কার্যকারিতা বা বিষাক্ততার সাথে জিন এক্সপ্রেশন বা একক-নিউক্লিওটাইড পলি মরফিজমের সাথে সম্পর্কযুক্ত করে রোগীদের ওষুধের প্রতিক্রিয়ার উপর জেনেটিক পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে কাজ করে। এর লক্ষ্য ন্যূনতম প্রতিক‚ল প্রভাব এড়িয়ে সর্বাধিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য রোগীর জেনোটাইপকে গুরুত্ব দিয়ে ড্রাগ থেরাপিকে যুক্তিযুক্ত উপায়ে নিখুঁত (optimize) প্রয়োগের ক্ষেত্র উদ্ভাবন করা। এই পদ্ধতিতে ওষুধগুলিকে ব্যক্তির জেনেটিক মেকআপ অনুযায়ী ব্যক্তিস্বত্বার সাথে ওষুধের স্বত্বাকে নিখুঁতভাবে (optimize) মিলিয়ে “ব্যক্তিস্বত্বা বিশিষ্ট ওষুধ” (personalized medicine) প্রয়োগকে উৎসাহিত করা হয়। ফার্মাকোজেনোমিক্স হচ্ছে ফার্মাকোজেনেটিক্স এর সম্পূর্ণ জিনোমের প্রায়োগিক অধ্যয়ন।

Keywords: Pharmacogenetics; Single nucleotide polymorphisms; Genomics; Genotype 

ভুমিকা

ফার্মাকোজেনোমিক্স হল একজন ব্যক্তির জেনেটিক উত্তরাধিকার কীভাবে ওষুধের প্রতি শরীরের প্রতিক্রিয়াকে প্রভাবিত করে তার অধ্যয়ন। এই শব্দটি ফার্মাকোলজি ও জিনোমিক্স শব্দ থেকে এসেছে এবং ফার্মাসিউটিক্যাল ও জেনেটিক্স এর মধ্যে যোগসুত্র স্থাপন করেছে। ফার্মাকোজেনোমিক্স এই প্রতিশ্রুতি ধারণ করে যে ওষুধগুলি একদিন ব্যক্তিস্বত্বা ভিত্তিক তৈরি হবে এবং তা প্রতিটি ব্যক্তির নিজস্ব জেনেটিক মেকআপের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে। এখানে বিবেচনা করা হয়- পরিবেশ, খাদ্য, বয়স, জীবনধারা এবং স্বাস্থ্যের অবস্থা সবই ওষুধের প্রতি একজন ব্যক্তির প্রতিক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে ঠিকই, তবে ঐ ব্যক্তির জন্য অধিক কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যক্তিস্বত্বা বিশিষ্ট ওষুধ তৈরির চাবিকাঠি হচ্ছে জেনেটিক মেকআপ জেনে তা প্রস্তুত করা। একজন ব্যক্তি যেভাবে ওষুধের প্রতি সাড়া দেয় (এর মধ্যে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় প্রতিক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত) তা একটি জটিল বৈশিষ্ট্য যা জিন দ্বারা প্রভাবিত হয়।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন ওষুধের প্রতক্রিয়ার সাথে জড়িত সমস্ত জিন সম্পর্কে না জেনে জেনেটিক পরীক্ষাগুলির উন্নয়ন করা কঠিন, একটি নির্দিষ্ট ওষুধের প্রতি একজন ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া তার ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে। একবার বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করলেন যে মানুষের জিন তাদের নিউক্লিওটাইড (ডিএনএ বেস) বিষয়বস্তুতে ছোট বৈচিত্র (বা পরিবর্তন) দেখায়, এই আবিষ্কারের সবই পরিবর্তন হয়েছে: ওষুধের প্রতিক্রিয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য জেনেটিক পরীক্ষা এখন সম্ভব। ফার্মাকোজেনোমিক্স হল ঐতিহ্যগত ফার্মাসিউটিক্যাল বিজ্ঞানের একত্রিত জ্ঞান, যেমন জৈব রসায়ন জিন, প্রোটিন এবং একক নিউক্লিওটাইড পলিমরফিজমের ধারনা থেকে উদ্ভুত। মানুষের জিনোমের সবচেয়ে সাধারণ বৈচিত্রগুলিকে বলা হয় একক বা সিঙ্গেল নিউক্লিওটাইড পলিমরফিজম (SNPs)। মানুষের জনসংখ্যার মধ্যে আনুমানিক গড়ে প্রতি ১৩০০ বেস জোড়ায়  ১১ মিলিয়ন SNP রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

ইতিহাস

ফ্রেড স্যঙ্গার (Fred Sanger) যখন একটি ভাইরাস এবং একটি মাইটোকন্ড্রিয়নের সম্পূর্ণ জিনোমগুলিকে সিকুয়েন্স করেছিলেন তখন তিনি জিনোমিক্স প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তাঁর দল ১৯৭০-১৯৮০ এর দশকে সিকুয়েন্সিং, জিনোম ম্যাপিং, ডেটা স্টোরেজ এবং বায়োইনফরম্যাটিক বিশ্লেষণের কৌশলগুলি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৮৬ সালে মেরিল্যান্ডে মানব জিনোমের ম্যাপিং সংক্রান্ত একটি সভায় বিয়ারের উপর জ্যাকসন ল্যাবরেটরির (Bar Harbor, ME) একজন জেনেটিস্ট ডঃ টম রডারিক প্রকৃত শব্দটি “জিনোমিক্স” তৈরি করেছিলেন বলে মনে করা হয়।

১৯৭২ সালে ঘেন্ট (Ghent, Belgium) বিশ্ববিদ্যালয়ের আণবিক জীববিজ্ঞানের গবেষণাগারে ওয়াল্টার ফিয়ার্স এবং তাঁর দল প্রথম একটি জিনের ক্রম নির্ধারণ করেছিলেন: ব্যাকটেরিওফেজ MS2 কোট প্রেটিনের জন্য জিন। ১৯৭৬ সালে দলটি ব্যাকটেরিওফেজ MS2-RNA এর সম্পূর্ণ নিউক্লিওটাইড-ক্রম নির্ধারণ করেন। প্রথম ডিএনএ- ভিত্তিক জিনোমটি সম্পূর্ণরূপে সিকুয়েন্স করা হয়েছিল ব্যাকটেরিওফেজ Φ-X174 (5,368 bp), যা ১৯৭৭ সালে ফ্রেডরিক স্যাঙ্গার কর্তৃক অনুক্রম করা হয়েছিল।

১৯৯৫ সালে হিমোফিলাস ইফ্লুয়েঞ্জা প্রথম মুক্ত-জীবিত প্রাণীর অনুক্রম ছিল, এবং তারপর থেকে জিনোমগুলি দ্রæত গতিতে অনুক্রম করা হচ্ছে। হিউম্যান জিনোমের একটি মোটামুটি খসড়া ২০০১ সালের প্রথম দিকে হিউম্যান জিনোম প্রজেক্ট দ্বারা সম্পন্ন হয়েছিল, যা অনেক সাড়া জাগিয়েছিল।

২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সম্পূর্ণ ক্রমটি প্রায় ১৮৭৯ টি ভাইরাস, ৫৭৭ টি ব্যাকটেরিয়া প্রজাতি এবং প্রায় ২৩ টি ইউক্যারিওট জীবের সম্পর্কে জানা গিয়েছিল, যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক ছত্রাক ছিল। বেশিরভাগ ব্যাকটেরিয়া যাদের জিনোম সম্পূর্ণভাবে ক্রমানুসারে তৈরি করা হয়েছে তারা সমস্যাযুক্ত রোগ সৃষ্টিকারী এজেন্ট, যেমন হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা।

ফার্মাকোজেনোমিক্স হল ঐতিহ্যগত ফার্মাসিউটিক্যাল বিজ্ঞানের একত্রিত জ্ঞান, যেমন জৈব রসায়ন জিন, প্রোটিন এবং একক নিউক্লিওটাইড পলিমরফিজমের ধারনা থেকে উদ্ভুত।

ফার্মাকোজেনোমিক্সের গুরুত্ব

ওষুধের প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া (Adverse Drug Reaction) একটি প্রেসক্রিপশনকৃত ওষুধের তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার ভয়াবহতার সামান্যই প্রকাশ করে। কিন্তু এই ধরনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তবুও ঘটতে পারে। আমেরিকান মেডিকেল এসোসিয়েশনের জার্নালে ১৯৯৮ সালে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের নিয়ে একটি সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যে ১৯৯৪ সালে ওষুধের প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া ২.২ মিলিয়নেরও বেশি সিরিয়াস কেস এবং ১,০০,০০০ জনেরও বেশি মৃত্যুর জন্য দায়ী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর অন্যতম কারণ হচ্ছে ওষুধের প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া (ADRs)। উদাহরণস্বরূপ, রোগীদের চিকিৎসার জন্য কম-বেশি ওয়ারফরিনের জন্য ২০ গুন, অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ ড্রাগ প্রোপ্রানোললের জন্য ৪০ গুন এবং পারকিনসনের রোগের এল-ডোপার জন্য ৬০ গুন দৈনিক ডোজ প্রয়োজন হয়। প্রদত্ত প্যাথলজি সহ রোগীদের একটি উপসেটে অন্যান্য ওষুধের ক্লিনিক্যাল উপযোগিতা রয়েছে, যেমন অ্যান্টিসাইকোটিকস সিজোফ্রেনিক্সের ক্ষেত্রে ৩০%  অকার্যকর যা পরামর্শ দেয় যে এই জাতীয় ওষুধগুলি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট রোগের কারণ-অনুসন্ধান পূর্বক রোগীদের ক্ষেত্রেই কার্যকর হতে পারে। অনেক মৃত্যু এড়ানো যেত যদি চিকিৎসক রোগীর জেনেটিক প্রোফাইল সম্পর্কে পূর্বে জ্ঞান রাখতেন, যা ওষুধের প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ করে। বর্তমানে মানুষের জন্য কোন ওষুধ ভাল বা খারাপভাবে অথবা আদৌ সাড়া দেবে কি-না তা নির্ধারণ করার কোন সহজ উপায় নেই (no simple way to determine); ফলে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো “একই ধরণ সবার জন্য” (one size fits all) নীতি ব্যবহার করে ওষুধ তৈরিতে সীমাবদ্ধ। এই পদ্ধতিতে ওষুধের উন্নয়নে রোগীদের প্রতিক্রিয়ার “গড়পড়তা মান” (average) অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু উপরের পরিসংখ্যানগুলি দেখায় একই ধরণ বা আকার সব ক্ষেত্রে মাপসই হয় না (one size does not fit all), বরং কখনও কখনও বিধ্বংসী ফলাফল প্রকাশ করে। ADR -এর সমস্যা হওয়ার আগেই তা সমাধান করার উপায় কী, ফার্মাকোজেনোমিক্স সেই সমাধানের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।

অবশেষে ফার্মাকোজেনোমিক্স সামগ্রিক স্বাস্থ্য সেবা ব্যয় কমাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে কেননা এতে হ্রাস পায়: (১) ওষুধের প্রতিকূল প্রতিক্রিয়ার সংখ্যা; (২) ব্যর্থ ড্রাগ ট্রায়ালের সংখ্যা; (৩) একটি ওষুধ অনুমোদনের সময়; (৪) রোগীদের ওষুধ সেবনের সময়কাল; (৫) কার্যকর ওষুধ নির্ধানের জন্য নানাবিধ ওষুধ সেবনের হার; (৬) শরীরের উপর একটি রোগের প্রভাব (দ্রুত সনাক্তকরণের মাধ্যমে)।

বর্তমানে ফার্মাকোজেনোমিক্স

৩০ টিরও বেশি বিভিন্ন শ্রেণীর ওষুধ লিভার এনজাইম P450 (CYP) এর পরিবারভ‚ক্ত সাইটোক্রোম ভেঙে দেওয়ার জন্য দায়ী। এই এনজাইমগুলির জন্য কোড করা জিনের ডিএনএ বৈচিত্রগুলি নির্দিষ্ট ওষুধকে বিপাক করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। CYP এনজাইমগুলির কম সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় ফর্মগুলি ওষুধগুলি ভেঙে ফেলতে বা কার্যকরভাবে শরীর থেকে দূর করতে অক্ষম হয় ফলে রোগীদের মধ্যে ওষুধের অতিরিক্ত মাত্রার কারণ হতে পারে। বর্তমানে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল গবেষকরা রোগীদের স্ক্রীন এবং নিরীক্ষণের জন্য সাইটোক্রোম P450 জিনের বিভিন্নতার জন্য জেনেটিক পরীক্ষা করে থাকেন। এছাড়াও অনেক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি তাদের রাসায়নিক যৌগগুলি স্ক্রীন করে দেখে থাকেন বিভিন্ন ফর্মের CYP  এনজাইম দ্বারা সেগুলি কতটা ভালভাবে ভাঙা সম্ভব হতে পারে।

শৈশবকালীন লিউকেমিয়ার কেমোথেরাপি চিকিৎসায় TPMT (thiopurine methyltransferase) নামক আরেকটি এনজাইম থিওপিউরিন ভেঙে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। ককেশীয়দের একটি ক্ষুদ্র অংশের মধ্যে এমন জেনেটিক বৈচিত্র রয়েছে যা তাদের এই প্রোটিনের একটি সক্রিয় ফর্ম তৈরি করতে বাধা দেয়। ফলস্বরূপ রোগীর থিওপিউরিনগুলি বিষাক্ত মাত্রায় উন্নীত হয় কেননা TPMT এর নিষ্ক্রিয় ফর্মগুলি ওষুধটি ভেঙে ফেলতে পারে না। বর্তমানে চিকিৎসকেরা এই অভাবের জন্য রোগীদের স্ক্রীন করার জন্য একটি জেনেটিক পরীক্ষা করে থাকেন এবং উপযুক্ত থিওপিউরিনের ডোজের লেভেল ঠিক রাখতে TPMT কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করেন।

ভবিষ্যতে ফার্মাকোজেনোমিক্স

গবেষণার এই ক্ষেত্রে নব-উন্নতধারা ড্রাগ ডিজাইনের তিনটি প্রধান স্তরে প্রভাব ফেলবে: (১) রিসেপ্টর বাইন্ডিং সাইটের সাথে ওষুধের মিথস্ক্রিয়া; (২) ওষুধের শোষণ এবং বিতরণ; (৩) শরীর থেকে ড্রাগ নির্মূল।

ফার্মাকোজেনোমিক্সের সুবিধা

ফার্মাকোজেনোমিক্স হল ঐতিহ্যগত ফার্মাসিউটিক্যাল বিজ্ঞানের একত্রিত জ্ঞান, যেমন জৈব রসায়ন জিন, প্রোটিন এবং একক নিউক্লিওটাইড পলিমরফিজমের ধারনা থেকে উদ্ভুত।

এর নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি রয়েছে:-

অধিক শক্তিশালী ওষুধ তৈরি

ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো জিন এবং রোগের সাথে সম্পর্কিত প্রোটিন, এনজাইম ও আরএনএ অণুর উপর ভিত্তি করে ওষুধ তৈরি করতে পারবে। এটি ওষুধ আবিষ্কারকে সহজতর করবে এবং ওষুধ প্রস্তুতকারীদেরকে নির্দিষ্ট রোগের জন্য অধিকতর লক্ষ্যযুক্ত থেরাপি প্রসারিত করতে সাহায্য করবে। এই নির্ভুলতা শুধুমাত্র থেরাপিউটিক প্রভাবকেই সর্বাধিক কার্যকরী করবে না বরং আশেপাশের সুস্থ কোষগুলির ক্ষতিও কম করবে।

প্রথমবারের মতো ভাল ও নিরাপদ ওষুধ প্রাপ্তি

রোগীদের সাথে সঠিক ওষুধের ম্যাচিং করতে standard trial-and-error method এর পরিবর্তে চিকিৎসকগণ জেনেটিক প্রোফাইল বিশ্লেষণ করতে এবং শুরু থেকেই সেরা উপলব্ধ ওষুধের থেরাপিউটিক প্রেসক্রিপশন করতে সক্ষম হবেন। এটি সঠিক ওষুধ খুঁজে পেতে শুধুমাত্র অনুমানের কাজই করবে না, বরং স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের সময়কে ত্বরান্বিত করবে এবং ওষুধের প্রতিকূল প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা রোধ করে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে।

ওষুধের উপযুক্ত ডোজ নির্ধারণের আরও সঠিক পদ্ধতি

ওজন এবং বয়সের উপর ভিত্তি করে ডোজ নির্ধারণের বর্তমান পদ্ধতিগুলির স্থলে একজন ব্যক্তির জেনেটিক্সের উপর ভিত্তিকরে ডোজ নির্ধারণ প্রতিস্থাপিত হবে; শরীর কতটা ভালোভাবে ওষুধ প্রক্রিয়াজাত (processes) করে এবং এটি বিপাক (metabolize) করতে কতটা সময় নেয় তা বিবেচনা করা হবে। এটি থেরাপিউটিক সিস্টেমের মান সর্ব্বোচ্চ বৃদ্ধি করবে এবং ওভারডোজের সম্ভাবনা হ্রাস করবে।

রোগের জন্য এ্যাডভান্স স্ক্রিনিং

কোন একজনের জেনেটিক কোড জানা থাকলে জেনেটিক রোগ-বালাইয়ের তীব্রতা এড়ানো বা কম রাখতে পরামর্শ দেওয়া যাবে শৈশবে ঐ ব্যক্তির পরিবেশগত পরিবর্তনে কতটা পর্যাপ্ত জীবনাধারা (adequate lifestyle) থাকতে হবে। একইভাবে নির্দিষ্ট রোগের সংবেদনশীলতা (susceptibility) সম্পর্কে আগাম জ্ঞান কী ধরণের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে তার ধারণা পাওয়া যাবে। এতে করে সর্ব্বোচ্চ মানের থেরাপিউটিক সিস্টেমের সবচেয়ে উপযুক্ত পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।

আরও ভাল ভ্যাকসিন প্রাপ্তি

বিদ্যমান ভ্যাকসিনের সকল ঝুঁকি ছাড়াই অন্যান্য সকল সুবিধার প্রতিশ্রুতি ডিএনএ বা আরএনএ কিংবা জেনেটিক উপাদান দিয়ে তৈরি ভ্যাকসিনে পাওয়া যাবে। এতে ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করবে কিন্তু সংক্রমণ ঘটাতে অক্ষম হবে। এগুলি সস্তা, স্থিতিশীল, সংরক্ষণ করা সহজ হবে এবং একই সাথে একটি প্যাথোজেনের বিভিন্ন স্ট্রেন বহন করার জন্য দক্ষ হতে সক্ষম হবে।

ওষুধ আবিষ্কার এবং অনুমোদন প্রক্রিয়ার উন্নতি

ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলি জিনোম টার্গেটগুলি ব্যবহার করে আরও সহজে সম্ভাব্য থেরাপি আবিষ্কার করতে সক্ষম হবে। ওষুধের অনুমোদনের প্রক্রিয়াটিকে সহজতর করা সম্ভব হবে কেননা নির্দিষ্ট জেনেটিক বৈশিষ্ট সম্পন্ন জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলি পরিচালিত হওয়ায় সাফল্যের হার অধিকতর বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকবে ফলে এর খরচ এবং ঝুঁকি হ্রাস পাবে কারণ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুধুমাত্র সেই ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে সম্পন্ন হবে যারা ওষুধের প্রতি সাড়া দিতে সক্ষম।

স্বাস্থ্যসেবার সামগ্রিক ব্যয় হ্রাস

ওষুধের প্রতিকূল প্রতিক্রিয়ার সংখ্যা, ওষুধের ব্যর্থ ট্রায়ালের সংখ্যা, একটি ওষুধ অনুমোদিত হওয়ার সময়, রোগীদের ওষুধ সেবনের সময়কাল, একটি কার্যকর থেরাপি খুঁজে পেতে রোগীদের বিভিন্ন ওষুধ সেবনের বাধ্যবাধকতা হেতু রোগীর শরীরে একটি রোগের প্রভাব (দ্রুত সনাক্তকরণের মাধ্যমে) এবং সম্ভাব্য ওষুধের লক্ষ্যমাত্রার পরিসর বৃদ্ধির হার হ্রাস স্বাস্থ্যসেবার প্রকৃত খরচ কমাতে অবদান রাখবে।

ফার্মাকোজেনোমিক্সের অগ্রগতিতে বাধা

ফার্মাকোজেনোমিক্স একটি উন্নয়নশীল গবেষণা ক্ষেত্র যা এখনও তার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ফার্মাকোজেনোমিক্সের অনেক সুবিধা উপলব্ধি করার আগে নিচে বর্ণিত বেশ কিছু বাধা থাকবে যা কাটিয়ে উঠতে হবে। বাধাগুলি নিম্নরূপ:- 

ওষুধের প্রতিক্রিয়াকে প্রভাবিত করে এমন জিনের ভিন্নতা খুঁজে বের করার জটিলতা

একক নিউক্লিওটাইড পলিমরফিজম (SNPs) হচ্ছে ডিএনএ সিকুয়েন্সের ভীন্নতা, এটি ঘটে যখন জিনোম সিকুয়েন্সে একটি একক নিউক্লিওটাইড (A, T, C, or G) পরিবর্তিত হয়। ৩ বিলিয়ন-বেস হিউম্যান জিনোমের বরাবরে প্রতি ১০০ থেকে ৩০০ বেসগুলিতে SNPs ঘটে, তাই লক্ষ লক্ষ SNPs চিহ্নিত করতে এবং বিশ্লেষণ করতে হয় ওষুধের প্রতিক্রিয়াতে তাদের জড়িততা (যদি থাকে) নির্ধারণের মাধ্যমে। প্রক্রিয়াটির আরও জটিলতা হল প্রতিটি ওষুধের প্রতিক্রিয়ার সাথে কোন জিন জড়িত তা চিহ্নিত করতে আমাদের সীমিত জ্ঞান রয়েছে। যেহেতু অনেক জিন প্রতিক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে, তাই জিনের বৈচিত্রের উপর প্রভাবের বড় চিত্র পাওয়া অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ এবং জটিল।

ওষুধের বিকল্প সীমিত

একটি নির্দিষ্ট অবস্থার চিকিৎসার জন্য শুধুমাত্র একটি বা দুটি অনুমোদিত ওষুধ পাওয়া যেতে পারে। যদি রোগীদের জিনের ভিন্নতা থাকে যা তাদের এই ওষুধগুলি ব্যবহার করতে বাধা দেয়, তবে তাদের চিকিৎসার জন্য কোনও বিকল্প (ওষুধ প্রয়োগ) ছাড়াই ছেড়ে দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

একাধিক ফার্মাকোজেনোমিক পণ্য তৈরিতে ওষুধ কোম্পানিগুলিকে নিরুৎসাহিত করে

বেশিরভাগ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ওষুধের উন্নয়নে তাদের ‘one size fits all’ পদ্ধতিতে সফল হয়েছে। যেহেতু একটি ওষুধ বাজারে আনতে কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ হয়, তাই এই কোম্পানিগুলি কি বিকল্প ওষুধ তৈরি করতে ইচ্ছুক হবে যা শুধুমাত্র জনসংখ্যার একটি ছোট অংশের জন্য প্রযোজ্য হবে?

ফার্মেসি পেশার উপর প্রভাব

বর্তমানে চিকিৎকগণ ট্রায়াল এবং ফার্মাসিস্টের পার্শপ্রতিক্রিয়া ও ড্রাগ-ড্রাগের মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কিত ত্রুটির পরামর্শ অনুযায়ী একটি ওষুধ নির্ণয় করে প্রেসক্রাইব করে থাকেন কিন্তু এমন একদিন আসবে যখন রোগীর রক্তের রিপোর্টের পরিবর্তে একটি জিন রিপোর্টের প্রয়োজন হবে, এভাবে রোগ নির্ণয়ের পর জেনেটিক ফলাফলের প্যানেল সম্পর্কে ফার্মাসিস্টের ব্যাখ্যা ও পরামর্শ অনুযায়ী তখন চিকিৎসককে ঠিক করতে হবে কোন ওষুধটি রোগীর নির্দিষ্ট জিনের জন্য সর্বোত্তম হবে যাতে রোগীর স্বাস্থ্য দ্রুত পুনরুদ্ধার হতে পারে।

উপসংহার

ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে ফার্মাকোজেনোমিক্স সর্বাধিক সুবিধা নিশ্চিত করতে একটি সম্ভাব্য হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহারের জন্য অপেক্ষা করছে। এটি চিকিৎসা ইতিহাসে একটি আমূল অগ্রগতির প্রতিনিধিত্ব করে। এর প্রধান লক্ষ্যগুলি হল; ব্যক্তিস্বত্বা বিশিষ্ট থেরাপি (personalized therapy) উদ্ভাবন, কার্যকারিতার উন্নতি এবং ওষুধের প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া (adverse drug reactions) হ্রাস, জিনোটাইপের সাথে ক্লিনিক্যাল জিনোটাইপের পারস্পরিক সম্পর্ক (correlation of genotype with clinical genotype) নির্ণয়, নতুন ওষুধের জন্য অভিনব লক্ষ্য চিহ্নিতকরণ এবং রোগের সংবেদনশীলতা (susceptibility) ও ওষুধের প্রতিক্রিয়ার (drug response) পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য রোগীদের ফার্মাকোজেনেটিক প্রোফাইল ঠিক করা। অতিতকাল থেকে বেশিরভাগ ওষুধগুলি ব্যক্তিবিশেষের পরিবর্তে সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর জন্য ডিজাইন করা হয়ে আসছে বর্তমানে সেই প্রবণতাকে পাল্টানোর সময় এসেছে। ফার্মাকোজেনোমিক্স চিকিৎসার ফোকাসকে পরিমার্জিত করতে সাহায্য করে এবং ওষুধগুলিকে আরও কার্যকর ও কম বিষাক্ত করে তোলে। রোগের বাহ্যিক প্রকাশ- চিকিৎসকেরা যে লক্ষণ ও উপসর্গগুলিকে ফিনোটাইপ বলে থাকেন- তার উপর নির্ভর করার পরিবর্তে রোগের অভ্যন্তরীণ উৎস জিনোটাইপ পরীক্ষা করে ফার্মাকোজেনোমিক ওষুধ প্রেসক্রিপশনকে উৎসাহিত করে। ওষুধ আবিষ্কার এবং উন্নয়নে ফার্মাকোজেনোমিক অধ্যয়ন ধীরে ধীরে প্রয়োজনীয় ওষুধের সংখ্যা বৃদ্ধি করবে, একই সাথে তা উন্নয়নের ব্যয়ও উল্লেখযোগ্যহারে হ্রাস করবে, একটি নিরাপদ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল নিশ্চিত করবে এবং তার ব্যর্থতার সংখ্যাও কমিয়ে আনবে। এভাবে অনেক সম্ভাব্য ওষুধ অন্যান্য গবেষণার প্রভাবের কারণে হারিয়ে যেতে পারে কিন্তু ভবিষ্যতে ফার্মাকোজেনোমিক অধ্যয়ন করার ফলে সেগুলি ধরে রাখা যেতে পারে।

লেখকগণ ১৩ টি গবেষণালব্ধ রেফারেন্স উল্লেখ করে এই প্রবন্ধটি রচনা করেছেন, ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি সহজে বোঝার জন্য পুরো লেখাটির অনুবাদ করা হয়েছে। এতে করে ফার্মাকোজেনোমিক্স কী এবং এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য-গুরুত্ব পাঠকগণ নিশ্চই উপলব্ধি করেছেন। তবে মডার্ন সাইন্সের গবেষণা ভিত্তিক এই প্রবন্ধটি আমাদেরকে অবাক করে, হতাশ করে এবং আশাবাদী করে!

অবাক করে, কারণ-

১. প্রবন্ধটির শিরোনাম করা হয়েছে- Pharmacogenomics: The Right Drug to the Right Person। অর্থাৎ ফার্মাকোজেনোমিক্স: ‘নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট ওষুধ’। এখানে ব্যক্তিস্বত্বা বিশিষ্ট ওষুধের (personalized medicine) অপরিহার্যতার কথা বলা হয়েছে। প্রচলিত চিকিৎসা ধারায় যেখানে বিবেচনা করা হয় ‘নির্দিষ্ট রোগের জন্য নির্দিষ্ট ওষুধ’ সেখানে এই চিন্তাধারা সন্দেহাতীতভাবে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী ভাবনার উদ্ভাবন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এটি কী নতুন কোন ভাবনা?

প্রায় ২,৪০০ বছর আগে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক স্যার হিপোক্রেটিস বলেছিলেন- It is more important to know what sort of a person has a disease than to know what sort of disease the person has.

ব্যক্তির কোন্ ধরনের রোগ হয়েছে সেটা জানার চেয়ে কোন্ ধরনের ব্যক্তির রোগ হয়েছে সেটা জানা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।

স্যার হিপোক্রেটিসের এই দর্শনকে হোমিওপ্যাথিক থেরাপিতে পরিনত করে ১৭৯০-১৮১০ খৃষ্টাব্দ অব্দি গবেষণান্তে অর্গানন প্রথম সংস্করণ প্রকাশের মাধ্যমে হোমিওপ্যাথির জনক স্যার হ্যানিম্যান ঘোষণা করেছিলেন “Òsimilia similibus curenter অর্থাৎ সদৃশে সদৃশ নিরাময় হয়”। যুগে যুগে হোমিওপ্যাথিক ঋষিগণ এই দার্শনিক উক্তির ব্যাখ্যা করে বলেছেন- ব্যক্তির ধাতুগত অবস্থার সদৃশ ওষুধ ঐ ব্যক্তিকে আরোগ্য করবে, যার নামকরণ করেছেন constitutional medicine। মডার্ন সাইন্স ফার্মাকোজেনোমিক্সের সাহায্যে personalized medicine এর আড়ালে মূলত এই constitutional medicine কেই অনুসন্ধান করছেন, স্যার হ্যানিম্যান যাকে সিমিলিমাম বলে অভিহিত করেছেন।

২. এই প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে- গবেষণায় প্রমান পাওয়া গেছে প্রচলিত থেরাপির ওষুধগুলি Adverse Drug Reaction- ADR তথা ওষুধের প্রতিক‚ল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং আমেরিকানদের মতো উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ও অধিকাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী এই ADR।

অথচ প্রায় ১০০ বছর পূর্বে স্যার জেমস টাইলার কেন্ট তাঁর ফিলোসোফি গ্রন্থের ২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন- Prescribing for the results of disease causes changes in the results of disease, but not in the sickness except to hurry its progress.

রোগের পরিনাম ফলের উপর নির্ভর করে ওষুধ নির্বাচন করলে সেগুলির উপশম হয় ঠিকই, তবে sickness এর জন্য ওষুধ নির্বাচন না করতে পারার জন্য মূল রোগটি ভিতরে ভিতরে বাড়তে থাকে। 

এখানে মডার্ন হোমিওপ্যাথির জনক স্যার কেন্ট যে hurry its progress এর কথা বলেছেন সেটিরই একটি অংশ মূলত ফার্মাকোজেনোমিক্সের গবেষণালব্ধ ADR।

৩. ফার্মাকোজেনোমিক্সের গবেষণায় দাবী করা হয়েছে, রোগের বাহ্যিক প্রকাশ- চিকিৎসকেরা যে লক্ষণ ও উপসর্গগুলিকে ফিনোটাইপ বলে থাকেন- তার উপর নির্ভর করার পরিবর্তে রোগের অভ্যন্তরীণ উৎস জিনোটাইপ পরীক্ষা করে ফার্মাকোজেনোমিক ওষুধ প্রেসক্রিপশনকে উৎসাহিত করে।

স্যার কেন্টও Prescribing for the results of disease কে নিরুৎসাহিত করেছেন এবং তাঁর ফিলোসোফির ২৩ পৃষ্ঠায় আরও বলেছেন- That patient has the same disease he had when he was born. This array of symptoms represents the same state before the pathological conditions have been formed as after. And it is true, if he has liver disease or brain disease of any of the many tissue changes that they call disease. You must go back and procure these very symptoms before you can make a prescription.

রোগীর একই রকম রোগ থাকে যা তার জন্মের সময় ছিল। এই লক্ষণ সমষ্টি অসুস্থ হবার পূর্বে একই অবস্থা তুলে ধরে, সুস্পষ্ট করে যেমনটা পরে করে। আর এটা সত্য, যদি তার যকৃতের রোগ বা মস্তিষ্কের রোগ হয়ে থাকে কিংবা অনেক টিস্যুর মধ্যে যে কোন টিস্যুর পরিবর্তন হয় যেটাকে লোকেরা রোগ বলে। তোমাকে অবশ্যই কালের দিক থেকে পিছনে ফিরে যেতে হবে এবং ব্যবস্থাপত্র করার আগে অবশ্যই এই লক্ষণগুলোই সংগ্রহ করতে হবে।

স্যর শ্যামল কুমার দাস That patient has the same disease he had when he was born এবং You must go back এই বক্তব্যকে মান্যতা দিয়ে তাঁর রচিত গ্রন্থ A New Voyage with Real Homoeopathy, chapter- Genetics এ বলেছেন-

In Real Homoeopathy, the procedure of treatment only deals with genetic makeup with the help of ‘philosophy of an individual’ specially ‘philosophy of early life.’ Moreover, the target of Real Homoeopathic treatment is to make permanently inactive to inactive, active and overactive group of harmful genes. This idea has no importance to any therapeutic system of the world, including classical homoeopathy.

রিয়েল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে ‘ব্যক্তির দর্শন’ বিশেষভাবে ‘শৈশবের জীবন দর্শন’ এর সাহায্যে শুধুমাত্র জেনেটিক মেকআপ নিয়ে কাজ করা হয়। এছাড়া রিয়েল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার লক্ষ্য হল নিষ্ক্রিয, সক্রিয় এবং অতিসক্রিয় ক্ষতিকারক জিনকে স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় করা। এই ধারনার বিশ্বের কোন থেরাপিউটিক সিস্টেমে এমনকি ক্ল্যাসিক্যাল হোমিওপ্যাথিতেও গুরুত্ব নেই।

অবাক করা বিষয় হচ্ছে মডার্ন সাইন্স যেটিকে সাম্প্রতিক এবং প্রাথমিক পর্যায়ের আবিষ্কার বলে দাবী করছেন সেটির দার্শনিক ব্যাখ্যা প্রায় ২,৪০০ বছর আগে স্যার হিপোক্রেটিস, ২৪০ বছর আগে স্যার হ্যানিম্যান, ১০০ বছর আগে স্যার জেমস টাইলার কেন্ট এবং ৭ বছর আগে থেকে স্যার শ্যামল কুমার দাস বলেছেন, শুধু তাই নয় স্যার শ্যামল কুমার দাস ব্যাক্তির দর্শন বিবেচনায় রোগীদের জন্য প্রায় ৮০০০ হোমিওপ্যাথিক ওষুধের মধ্য থেকে মাত্র ৮ টি ওষুধ নির্বাচন করেছেন যাকে মডার্ন সাইন্সের ভাষায় personalized medicine বলে দাবী করা যায়!

হতাশ করে, কারণ-

এত বিলিয়ন বিলিয়ন খরচ করে যে থেরাপি আবিষ্কার করা হচ্ছে তা উপরোক্ত হোমিওপ্যাথিক ঋষিগণের দর্শনকে গুরুত্ব দিলে অতি সহজেই সমাধানে পৌঁছানো যেত, মানব জাতি এই ভয়ানক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জীবন-মৃত্যুর ঝুঁকি এবং তাদের রেখে যাওয়া পরিবার দুর্বিসহ আর্থিক ক্ষতি থেকে থেকে রক্ষা পেতো!

আর আশাবাদী করে, কারণ-

১. কালে কালে হোমিওপ্যাথি মডার্ন সাইন্সের গবেষণায় সত্য হিসাবে প্রমানিত হচ্ছে। 

২. স্যার হ্যানিম্যান সূক্ষ্ণাতি সূক্ষ্ণভাবে (মডার্ন সাইন্সের আবিষ্ক্রিত ন্যানো টেকনোলজিতে) যুক্তিযুক্ত উপায়ে নিখুঁত (optimize) প্রয়োগের ক্ষেত্র উদ্ভাবন সম্পন্ন যে শক্তিকৃত ওষুধ আবিষ্কার করেছেন তা শরীর কতটা ভালোভাবে প্রক্রিয়াজাত (processes) করে এবং এটি বিপাক (metabolize) করতে কতটা সময় নেয় তা বিবেচনা করেই তৈরি করা হয়েছে।

৩. স্যার শ্যামল কুমার দাস গো-ব্যাক তথা ফ্রুট-ট্রি-আর্থ সিন্ড্রোম এবং ব্যক্তির জীবন দর্শনের অনুসন্ধান করে ঐ ব্যক্তির জেনোটাইপ বুঝে তাদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় রিয়েল হোমিওপ্যাথিক ওষুধ সহ থেরাপিউটিক সিস্টেম উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন যা তাঁর নিজের এবং শত-শত অনুসারী চিকিৎসকগণ কর্তৃক হাজার-হাজার মানুষের উপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়েলে সঠিক হিসাবে প্রমান করা সম্ভব হয়েছে।

প্রসঙ্গক্রমে বলা প্রয়োজন, হোমিওপ্যাথিক ওষুধ অনুমোদিত হয় আপাত সুস্থ মানুষের উপর ড্রাগ প্রুভিং এর মাধ্যমে এবং এই ওষুধগুলির অধিকতর কার্যকারীতা নির্ধারিত হয় রোগীদের উপর ক্লিনিক্যাল প্রুভিং এর মাধ্যমে। ফলে এটিও বিজ্ঞান।

এই গবেষণা থেকে রিয়েল হোমিওপ্যাথিক চর্চাকারীগণেরও একটি বিশেষ শিক্ষা নেবার বিষয় রয়েছে। পারসোনালাইজড মেডিসিনকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে এই গবেষণায় বলা হয়েছে- ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো “একই ধরণ সবার জন্য” (one size fits all) নীতি ব্যবহার করে ওষুধ তৈরিতে সীমাবদ্ধ। এই পদ্ধতিতে ওষুধের উন্নয়নে রোগীদের প্রতিক্রিয়ার “গড়পড়তা মান” (average) অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু উপরের পরিসংখ্যানগুলি দেখায় একই ধরণ বা আকার সব ক্ষেত্রে মাপসই হয় না (one size does not fit all), বরং কখনও কখনও বিধ্বংসী ফলাফল প্রকাশ করে।

অর্থাৎ পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য পটেন্সি ও ডোজ একই হতে পারে না, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ভীন্নতা থাকবে সুতরাং পটেন্সি ও ডোজ নির্ধারণের ক্ষেত্রেও ‘পারসোনালাইজড’ হতে হবে যা অর্গানন অব মেডিসিনের ১৩৪ এবং ২৭৬ নম্বর সূত্রে বর্ণিত নির্দেশনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। ফলে পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য ওষুধ প্রয়োগের “একই প্রটোকল” উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা কিংবা মোহ আদৌ সফলতা পাবে কি-না তা বৈজ্ঞানিকভাবে অনুমান করা উচিৎ!