Contact

জিনোমিক্স (Genomics), কাজী আজম
13 Jun, 2024

জিনোমিক্স (Genomics), কাজী আজম

জিনোমিক্স হচ্ছে জীবের ডিএনএ সমগ্রের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে জীববিজ্ঞান অধ্যয়নের একটি ক্ষেত্র - যাকে বলা হয় জিনোম সম্পর্কিত জ্ঞান। জীবের জিনোমের সমস্ত জিন এবং কার্যকরী উপাদানগুলি সনাক্ত করা এবং সেইসাথে তারা কীভাবে যোগাযোগ করে তা নিয়ে আলোচনা করা জিনোমিক্সের একটি ক্ষেত্র। জিনোম  ১৯৮৭ সাল থেকে বিজ্ঞানের এই নতুন ক্ষেত্রকে জিনোমিক্স নামকরণ করা হয়। ন্যাশনাল হিউম্যান জিনোম রিসার্স ইন্সটিটিউট এর প্রকাশিত তথ্য থেকে এবিষয়ে সহজ ও সংক্ষিপ্ত আলোচনার প্রচেষ্টা এখানে নেয়া হবে। স্বাস্থ্য এবং রোগের প্রকৃত নিয়ামক কেন্দ্র কোষীয় কার্যকালাপ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে তা নির্ভর করে জিনসমূহ থেকে কি ধরণের বার্তা বা নির্দেশনা প্রেরণ করা হবে তার উপর।

কোষ (Cell) হল জীবন্ত জীবের গঠনের মৌলিক জৈবিক একক। সাইটোপ্লাজমিক মেমব্রেন (Cytoplasmic membrane)  বা পর্দা দ্বারা আবৃত একটি কোষের মধ্যে বিভিন্ন অর্গানেল অবস্থান করে। অর্গানেল (Organelle) হল এক একটি উপকোষীয় কাঠামো যাদের কোষে সঞ্চালনের জন্য এক বা একাধিক কাজ রয়েছে, অনেকটা অঙ্গসমূহ যেমন দেহে করে। কোষের মধ্যে থাকা গুরুত্বপূর্ণ অর্গানেলগুলি হচ্ছে- গলজিবডি, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, রাইবোসোম, লাইসোসোম, মাইটোকন্ড্রিয়া, সেন্ট্রিওল ও নিউক্লিয়াস। অর্গানেলগুলিকে কোষের মধ্যে ভোসকলও বলা হয় এবং তাদের একটি করে গুরুত্বপূর্ণ ফাংশন রয়েছে, একারনে সমস্ত ফাংশনকে বিভক্ত করতে অর্গানেলগুলি ঝিল্লি বা পর্দা দ্বারা আবদ্ধ থাকে এবং আলাদা আলাদাভাবে অবন্থান করে। 

গলজিগলজি বডি (Golgi body) যা গলজি যন্ত্র নামেও পরিচিত, এটি কোষের একটি অর্গানেল যা বিশেষত কোষ থেকে নির্ধারিত প্রোটিনগুলি রপ্তানি করার জন্য প্রোটিন ও লিপিড অণুগুলিকে প্রক্রিয়করণ এবং প্যাকেজ করতে সহায়তা করে। এর আবিষ্কারক ক্যামিলো গলজির নামে গলজি বডি নামকরণ করা হয়েছে, এটি স্তুপীকৃত ঝিল্লির একটি সিরিজ আকারে থাকে। 

এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম (Endoplasmic reticulum) হল একটি কোষের ভিতরে ঝিল্লির একটি নেটওয়ার্ক যার মাধ্যমে প্রোটিন এবং অন্যান্য অণু চলাচল করে। এটি এমন একটি কার্যকরী ও গুরুত্বপূর্ণ অর্গানেল যা কোষের অবশিষ্ট অংশের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন এবং সারবস্তু তৈরিতে কাজ করে। দুই ধরণের এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম রয়েছে, যথা- ১. রুক্ষ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম (Rough endoplasmic reticulum): যখন প্রোটিনগুলি কোষের ঝিল্লির অংশ হওয়ার জন্য রাইবোসোম নামক অর্গানেলগুলিতে একত্রিত হয়ে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামে সংযুক্ত হয় তখন রুক্ষ চেহারা লাভ করায় একে রুক্ষ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বলে। কখনও কখনও রাইবোসোমে ভুলভাবে প্রোটিন তৈরি হয়, তখন সেই প্রোটিনগুলিকে রুক্ষ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম ধরে রাখে ফলে এটি জমাটবদ্ধ হয়ে এতে কোষ্ঠকাঠিন্যতায় রূপ নেয়। ২. মসৃন এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম (Smooth endoplasmic reticulum): যেসকল এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামে রাইবোসোম থাকে না তা মসৃণ চেহারায় থাকে বিধায় এদেরকে মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বলা হয়। এগুলি কোষের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য সারবস্তু তৈরি করে এবং বিভিন্ন সারবস্তু সংশ্লেষণ ও ঘনীভূত করতে সাহায্য করে।

রাইবোসোম (Ribosome) হল ক্ষুদ্র গোলাকার একটি আন্তকোষীয় কাঠামোসম্পন্ন অর্গানেল যা আরএনএ ও প্রোটিন উভয়ই দিয়ে তৈরি এবং এটি কোষে প্রোটিন সংশ্লেষণের স্থান। রাইবোসোম মেসেঞ্জার আরএনএ (mRNA) সিকুয়েন্স তথা ক্রমটির বার্তা পাঠ করে থাকে এবং সেই জেনেটিক কোডটিকে অ্যামিনো অ্যাসিডের একটি নির্দিষ্ট ষ্ট্রিংয়ে অনুবাদ করে, যা প্রোটিন গঠনে ভাঁজ করা লম্বা চেইনে পরিণত হয়।

লাইসোসোম (lysosome) হল একটি ঝিল্লি-আবদ্ধ কোষের অর্গানেল যা পাচক এনজাইম ধারণ করে। লাইসোসোম বিভিন্ন কোষীয় প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। তারা অতিরিক্ত বা জীর্ণ কোষের অংশ ভেঙ্গে ফেলে। এগুলি আক্রমণকারী ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, যদি বাইরে থেকে কোষটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে তা মেরামত করতে সাহায্য করে। লাইসোসোম একটি প্রক্রিয়ায় কোষের অভ্যন্তরীণ আত্ব-ধ্বংস মূলক কাজে সাহায্য করে, যাকে বলা হয় প্রোগ্রামড কোষীয় মৃত্যু বা অ্যাপোপটোসিস।

লাইসোসোম হল একটি নির্দিষ্ট ধরণের অর্গানেল যা খুবই অম্লীয় বা অ্যাসিডিক। এ কারণে এটি কোষের ভিতরের অবশিষ্ট অংশের সুরক্ষা করতে পারে। এটি একটি বগি বা কমপার্টমেন্ট এবং এর চারপাশে ঝিল্লি বা পর্দা রয়েছে, এখানে হজমকারী এনজাইমগুলি সঞ্চিত থাকে, এই অ্যাসিড পিএইচ মাত্রা কম (low-pH) রেখে পরিবেশ অনুকুলে রাখে। এই এনজাইমগুলিকে হাইড্রোলাইটিক এনজাইম বলা হয় এবং তারা বড় অণুগুলিকে ছোট অণুতে ভেঙে দেয়। উদাহরণ স্বরূপ- বড় প্রোটিনগুলিকে অ্যামিনো অ্যাসিডে পরিণত  করে, বা বড় কার্বোহাইড্রেটগুলিকে সাধারণ শর্করায়, বা বড় লিপিডগুলিকে একক ফ্যাটি অ্যাসিডে পরিণত করে। কোষের অবশিষ্ট ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহের জন্য একাজ করে থাকে। যদি বড় অণুকে ছোট অণুতে ভেঙ্গে ফেলতে না পারে তা সঞ্চিত বা জমা হয়ে হয়ে একটি রোগের প্রকাশ ঘটায়। এছাড়াও আরেক ধরণের লাইসোসোম স্টোরেজ ডিজিজ রয়েছে যেখানে সেই বৃহৎ অণু থেকে উৎপন্ন ছোট অণুগুলো লাইসোসেম থেকে বের হতে পারে না। জিনগতভাবে পরিবহনের বার্তার অনুপস্থিতিজনিত কারণে এই স্টোরেজের ঘটনা ঘটে থাকে। পরিশেষে লাইসোসোমের আর একটি কাজ হল কোষ অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশকারী ব্যাকটেরিয়াকে নিজের মধ্যে গ্রহণ করে তাকে ধ্বংস করে দেওয়া। তাই লাইসোসোমগুলি সবসময় সংক্রমণের বিরুদ্ধে একটি ফাংশন পরিচালনা করে এবং একটি ব্যাকটেরিয়াম তৈরি করে তাতে রেখে ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে দেয়। সুতরাং লাইসোসোম এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্গানেল যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং বড় অণুগুলিকে ভেঙে ফেলে সেগুলি পুনরায় ব্যবহার উপযোগি করে গড়ে তোলে।

মাইটোকন্ড্রিয়া (Mitochondria) হল কোষের একপ্রকার ঝিল্লি বা পর্দা-আবদ্ধ অর্গানেল যা কোষের জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়াতে শক্তি যোগানের জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক শক্তির বেশিরভাগই উৎপন্ন করে। একবচনে একে মাইটোকন্ড্রিয়ন বলা হয়। মাইটোকন্ড্রিয়া দ্বারা উৎপাদিত রাসায়নিক শক্তি অ্যাডেনোসিন ট্রাইফসফেট (এটিপি) নামক একটি ছোট অণুতে সংরক্ষণ করা হয়। মাইটোকন্ড্রিয়াতে তাদের নিজস্ব ক্রোমোজোম থাকে। সাধারণত মাইটোকন্ড্রিয়া এবং তাদের ডিএনএ শুধুমাত্র মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়। মাইটোকন্ড্রিয়া দু’টি ভিন্ন ভিন্ন ঝিল্লি বা পর্দা দ্বারা আবদ্ধ এবং তা আন্তঃকোষীয় অর্গানেলের জন্য বেশ অস্বাভাবিক বিষয়। প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদনের উদ্দেশ্যে এই পর্দা দু’টি একটি ফাংশন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কোষে মাইটোকন্ড্রিয়ার উভয় পর্দার মধ্যবর্তী পথ দিয়ে রাসায়নিক পদার্থসমূহ অতিক্রম করার সময় যে শক্তি উৎপাদিত হয়, অন্য কথায় রূপান্তরিত হয় সেই রূপান্তরের প্রক্রিয়াটি এটিপি আকারে শক্তি উৎপাদন করে, কারণ ফসফেট একটি উচ্চ-শক্তির বন্ধন এবং কোষের মধ্যে অন্যান্য প্রতিক্রিয়ার জন্য শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। বলা চলে শক্তি উৎপাদনই মাইটোকন্ড্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য, যেকারণে একে পাওয়ার হাউজও বলা হয়। কোষ ভেদে মাইটোকন্ড্রিয়ার পরিমান কম-বেশি হয়। যেমন- পেশীতে প্রচুর মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে, লিভারেও তাই, কিডনীতেও একই রকম কিন্তু মস্তিষ্কে একটি নির্দিষ্ট পরিমান মাইটোকন্ড্রিয়া শক্তি উৎপাদন বন্ধ রাখে। তাই মাইটোকন্ড্রিয়া ফাংশন করার পথে যদি কোন ত্রুটি থাকে তবে পেশীতে, মস্তিষ্কে, কখনও কখনও কিডনীতেও বিভিন্ন ধরণের উপসর্গ দেখা দেবে। কোষের এই গুরুত্বপূর্ণ অর্গানেল মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিস-ফাংশনিং বা কর্মহীনতার কারণে কত রকমের রোগ-লক্ষণ প্রকাশিত হতে পারে তা আমাদের জানা নেই।

মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ (Mitochondrial DNA) হল মাইটোকন্ড্রিয়া নামক সেলুলার অর্গানেলের ভিতরে পাওয়া বৃত্তাকার ক্রোমোজোম। এটি সাইটোপ্লাজমে অবস্থান করে, মাইটোকন্ড্রিয়া কোষের শক্তি উৎপাদন এবং অন্যান্য বিপাকীয় ফাংশন পরিচালনা করে। বংশের উত্তরাধিকার সূত্রে মায়ের কাছ থেকে মাইটোকন্ড্রিয়া এবং এর ফলস্বরূপ মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ প্রাপ্ত হয়।

সেন্ট্রিওল (Centriole)-গুলি নিউক্লিয়ার আচ্ছদনের কাছে কোষের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত জোড়া ব্যারেল-আকৃতির অর্গানেল। সেন্ট্রিওলগুলি কোষের কঙ্কাল সিস্টেম হিসেবে কাজ করে এমন মাইক্রোটিউবুল (Microtubule)-গুলিকে সংগঠিত করতে ভুমিকা রাখে। তারা কোষের মধ্যে নিউক্লিয়াস এবং অন্যান্য অর্গানেলের অবস্থান নির্ধারণ করতে সহায়তা করে।   

নিউক্লিয়াস (Nucleus) হল কোষের মধ্যে ঝিল্লি বা পর্দায় আবদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ অর্গানেল যা ক্রোমোজোম ধারণ করে এবং জিনোমিক্সের সাথে সম্পর্কিত। নিউক্লিয়ার মেমব্রেন বা পর্দার ফাঁক বা ছিদ্রগুলির একটি বিন্যাস নির্ধারিত পথ হিসেবে নিউক্লিয়াসের মধ্যে এবং বাইরে নির্দিষ্ট অণুর (যেমন প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিড) চলাচলের সুযোগ দেয়।

নিউক্লিওলাস (nucleolus) হল একটি গোলাকার কাঠামো যা কোষের নিউক্লিয়াসে পাওয়া যায় যার প্রাথমিক কাজ হল কোষের রাইবোসোম তৈরি করা এবং একত্রিত করা। নিউক্লিয়াসে রাইবোসোমাল আরএনএ জিন প্রতিলিপি (transcribe) হয়। রাইবোসোমগুলি একত্রিত হয়ে সাইটোপ্লাজমে স্থানান্তরিত হয় এবং সেখানে প্রোটিন সংশ্লেষণের (synthesis) কাজ করে।

নিউক্লিওসোম (nucleosome) হল কোষের নিউক্লিয়াসের ভিতরে প্যাকেজ করা ক্রোমাটিনের মৌলিক পুনরাবৃত্তিকারী সাব-ইউনিট। মানুষের নিউক্লিয়াসের মধ্যে প্রায় ছয় ফুট লম্বা ডিএনএ- চুলের আকৃতি কিন্তু এর ব্যাস চুলের চেয়ে অনেক অনেক কম অবশ্যই প্যাকেজ করা থাকে এবং এটি সংরক্ষন ও প্রক্রিয়াতে নিউক্লিওসোম মূল ভুমিকা পালন করে। একটি একক নিউক্লিওসোমে ডিএনএ সিকুয়েন্সের প্রায় ১৫০টি বেস পেয়ার পাওয়া যায় যা হিস্টোন প্রোটিনের কোরের চারপাশে আবৃত থাকে। একটি ক্রোমোজোম গঠনের সময় প্যাকেজ করা ডিএনএ কে শক্ত ও ঘনীভূত করতে নিউক্লিওসোম নিজেদেরকে বারবার ভাঁজ করে।

নিউক্লিয়ার মেমব্রেন (nuclear membrane) একটি দুই স্তর বিশিষ্ট পর্দা যা কোষের নিউক্লিয়াসকে ঘিরে রাখে, যেখানে ক্রোমোজোমগুলি থাকে। নিউক্লিয়ার মেমব্রেন কোষের সইটোপ্লাজম এবং অন্যান্য বিষয়বস্তু থেকে ক্রোমোজোমগুলিকে আলাদা করতে সাহায্য করে। এর নিউক্লিওপোর তথা ছোট ছোট ছিদ্রগুলির একটি বিন্যাস নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমের মধ্যে নিউক্লিক অ্যাসিড ও প্রোটিনের মতো নির্দিষ্ট উপাদানগুলির যাতায়াতের পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 

নিউক্লিওপোর (nucleopore) হল কোষের নিউক্লিয়ার মেমব্রেন এর ছিদ্রসমূহ যা নিউক্লিয়াসের মধ্যে এবং বাইরে নিউক্লিক অ্যাসিড ও প্রোটিনগুলি পরিবহনের নির্ধারিত চ্যানেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

সাইটোপ্লাজমিক মেমব্রেন (Cytoplasmic membrane) বা কোষের পর্দা হল একটি জৈবিক ঝিল্লি যা বাইরের পরিবেশ (বহিঃকোষীয় ব্যবধান) থেকে সমস্ত কোষের অভ্যন্তরকে আলাদা করে এবং রক্ষা করে। কোষের ঝিল্লি একটি লিপিড-বাইলেয়ার নিয়ে গঠিত, যা কোলেস্টেরল (একটি লিপিড উপাদান) এর মধ্যে বিভক্ত ফসফোলিপিডের দুটি স্তরে তৈরি, তা বিভিন্ন তাপমাত্রায় ঝিল্লির উপযুক্ত তরলতা বজায় রাখে। ঝিল্লিতে প্রোটিন রয়েছে যা ঝিল্লিকে বিস্তৃত করতে ও পরিবহনকারী হেসেবে কাজ করে এবং কোষের বাইরের (peripheral) পাশে আলগাভাবে সংযুক্ত থাকে, কোষের পরিবেশের সাথে মিথস্ক্রিয়াকে সহজ করার জন্য এনজাইম হিসেবে কাজ করে। বাইরের লিপিড স্তরে এমবেড করা গ্লাইকোলিপিড একই উদ্দেশ্যে কাজ করে। কোষের ঝিল্লি কোষ এবং কোষের ভিতরে ও বাইরে সারবস্তুর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে, যা আয়ন এবং জৈব অণুর জন্য বেছে বেছে প্রবেশযোগ্য। এছাড়াও কোষের ঝিল্লি বিভিন্ন কোষীয় প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকে যেমন কোষের আনুগত্য, আয়ন পরিবাহিতা ও কোষের সংকেত, কোষ প্রাচীর এবং গ্লাইকোক্যালিক্স নামক কার্বোহাইড্রেট স্তর সহ বেশ কয়েকটি বহির্মুখী কাঠামোর সংযুক্তি পৃষ্ঠ হিসেবে কাজ করে। প্রোটিন ফাইবারের অন্তঃকোষীয় নেটওয়ার্ক কে সাইটোস্কেলটন বলা হয়। সিন্থেটিক জীবজ্ঞিানের ক্ষেত্রে কোষের ঝিল্লি কৃত্রিমভাবে পুনরায় একত্রিত করা যেতে পারে।

একটি প্রাপ্ত মানুষের শরীরে ১০ থেকে ১০০ ট্রিলিয়ন কোষ থাকে বলে অনুমান করা হয়।

এতক্ষন যে কোষের গঠন এবং কাজ নিয়ে আলোচনা করা হল সেই কোষগুলির সুচনা হয় গ্যামেট (Gamete) সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। একটি গ্যামেট একটি মানুষের একটি প্রজনন কোষ। মানুষের স্ত্রী গ্যামেটকে বলা হয় ওভাম বা ডিম্বাণু এবং পুরুষ গ্যামেটকে বলা হয় স্পার্ম বা শুক্রাণু। ডিম্বাণু ও শুক্রাণু হ্যাপ্লয়েড কোষ, প্রতিটি কোষ প্রতিটি ক্রোমোজোমের একটি মাত্র কপি বহন করে। নিষিক্তকরণের সময় একটি শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু একত্রিত হয়ে একটি নতুন জাইগোট (Zygote) গঠনের মধ্য দিয়ে ডিপ্লয়েড জীব তৈরি করে।

ডিপ্লয়েড (Diploid) বলতে একটি জীবের কোষে ক্রোমোজোমের দুটি সম্পূর্ণ সেটের উপস্থিতি বোঝায়, প্রত্যেক পিতা এবং মাতা উভয়ে মিলে একটি সম্পূর্ণ সেট বা জোড়ায় একটি করে ক্রোমোজোমের অবদান রাখে। মানুষ ডিপ্লয়েড তাই শরীরের বেশিরভাগ কোষে ২৩টি ক্রোমোজোম জোড়া থাকে। মানব গ্যামেটে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু কোষ একটি করে ক্রোমোজোম ধারণ করে তাই একে হ্যাপ্লয়েড বলা হয়।

হ্যাপ্লয়েড (Haploid) বলতে জীবের কোষ ক্রোমোজোমের একক সেটের উপস্থিতি বোঝায়। যৌনভাবে প্রজননকারী জীবগুলির ডিপ্লয়েড সেট রয়েছে, মানুষের মধ্যে শুধুমাত্র ডিম্বাণু এবং শুক্রানু হ্যাপ্লয়েড হয়। প্রতিটি পিতা এবং মাতার থেকে একটি করে হ্যাপ্লয়েড সেট মিলিত হয়ে দুটি ক্রোমোজোমের সেট ডিপ্লয়েড হয়।

মানুষের কোষ ক্যারিওটাইপ হয়ে থাকে। ক্যারিওটাইপ (Karyotype) হল একজন ব্যক্তির ক্রোমোজোমের সম্পূর্ণ সেট। ক্যারিওটাইপ- প্রতিটি প্রজাতির লিঙ্গ বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি। সাধারণ ডিপ্লয়েড জীবগুলিতে অটোসোমাল ক্রোমোজোম দুটি কপিতে উপস্থিত থাকে। মানব ক্যারিওটাইপে ২২ জোড়া অটোসোমাল-ক্রোমোজোম এবং ১ জোড়া সেক্স-ক্রোমোজোম থাকে। মহিলাদের জন্য সবচেয়ে সাধারণ ক্যারিওটাইপগুলিতে ২টি X ক্রোমোজোম থাকে, যা লিঙ্গ নির্ধারনে XX চিহ্নিত করা হয়। পুরুষদের সাধারণত ১টি X এবং ১টি Y ক্রোমোজোম উভয়ই থাকে, যা লিঙ্গ নির্ধারনে XY চিহ্নিত করা হয়। ক্যারিওটাইপগুলি অনেক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, যেমন- প্রসবপূর্ব ডায়াগনস্টিক বা টিউমার স্ট্যাডিতে ক্রোমোসোমাল পুনরাবৃত্তি, কোষীয় ফাংশন, শ্রেণীবিন্যাস সম্পর্ক এবং অতীতের বিবর্তনীয় ঘটনা সম্পর্কে তথ্য প্রদান।

ক্রোমোজোম (Chromosome) হল প্রোটিন এবং ডিএনএ-র একক অণু দিয়ে তৈরি থ্রেডের মতো কাঠামো যা কোষ থেকে কোষে জিনোমিক তথ্য বহন করে। মানুষের মধ্যে ক্রোমোজোমগুলি কোষের নিউক্লিয়াসে থাকে। মানুষের ২২ জোড়া অটোসোমাল-ক্রোমোজোম (XX) এবং ১ জোড়া সেক্স-ক্রোমোজোম (XX বা XY) অর্থাৎ মোট ৪৬টি ক্রোমোজোম থাকে। প্রতিজোড়া ক্রোমোজোমে একটি পিতা থেকে এবং অন্যটি মাতা থেকে আসে, যার অর্থ শিশুরা তাদের ক্রোমোজোমের অর্ধেক পিতার এবং অর্ধেক মাতার উত্তরিাধিকার থেকে প্রাপ্ত হয়। কোষ বিভাজনের সময় নিউক্লিয়াস দ্রবীভূত হলে মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে ক্রোমোজোম দেখা যায়।

জার্ম লাইন (Germ line) বলতে সেক্স কোষ (ডিম্বাণু ও শুক্রাণু) বোঝায় যেগুলি যৌনভাবে প্রজননকারী জীবেরা তাদের জিনোমে এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে (পিতা-মাতা থেকে সন্তানসন্ততি) প্রেরণ করতে ব্যকহার করে। ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু কোষকে জার্ম কোষ বলা হয়, শরীরের অন্যান্য কোষের বিপরীতে যাকে সোমাটিক কোষ বলা হয়। 

মিয়োসিস (Meiosis) হল যৌন প্রজননকারী জীবের এক ধরণের কোষ বিভাজন যা গ্যামেট (যৌন কোষ তথা ডিম্বাণু ও শুক্রাণু) ক্রোমোজোমের সংখ্যা হ্রাস করে। মানুষের মধ্যে শরীরের সোমাটিক কোষগুলি ডিপ্লয়েড হয়, যেখানে প্রতিজন পিতা-মাতার একটি করে দুই সেট ক্রোমোজোম থাকে। এই অবস্থা বজায় রাখার জন্য ডিম্বাণু ও শূক্রাণু নিষিক্তকরণের সময় যেগুলি একত্রিত হয় তা ক্রোমোজোমের একক সেট সহ অবশ্যই হ্যাপ্লয়েড হতে হয়। মিয়োসিসের সময় প্রতিটি ডিপ্লয়েড কোষ দুই রাউন্ড বিভাজনের মধ্য দিয়ে চারটি হ্যাপ্লয়েড কন্যা কোষ তৈরি করে।

ক্রসিং ওভার (Crossing over) জেনেটিক্স এবং জিনোমিক্সের সাথে সম্পর্কিত, homologous chromosome গুলির মধ্যে জোড় গঠনের জন্য পিতা এবং মাতা থেকে একটি করে ডিএনএ বিনিময়কে বোঝায় যা ডিম্বাণু ও শুক্রাণু কোষের মিয়োসিস বিকাশের সময় ঘটে। এই প্রক্রিয়ার ফলে গ্যামেটে (ডিম্বাণু বা শুক্রাণু) অ্যালিলের সতুন সংমিশ্রণ ঘটে, যা জন্ম নেয় যেকোন সন্তানের মধ্যে জিনোমিক বৈচিত্র নিশ্চিত করে।

অ্যালিল (Allele) হল একটি নির্দিষ্ট জিনোমিক অবস্থানে ডিএনএ সিকোয়েন্সের (একক বেস বা বেসের একটি অংশ) দুই বা ততোধিক সংস্করণের একটি। প্রত্যেক ব্যক্তি উত্তরাধিকার সূত্রে দুইট অ্যালিল পেয়ে থাকে, একটি মায়ের কাছ থেকে অপরটি পিতার কাছ থেকে। জিনোমিক অবস্থানে অ্যালিলের ধরণ অনুযায়ী ব্যক্তির বৈচিত্র নির্ভর করে। যদি ব্যক্তির মধ্যে দু’টি অ্যালিল একই হয় তবে তাকে সমজাতীয় (homozygous) এবং যদি আলাদা হয় তবে তাকে ভিন্নধর্মী (heterozygous) বলা হয়। 

হোমোজাইগাস (Homozygous) এর ডিপ্লয়েড প্রজাতিতে একই অবস্থানে বা লোকাসের প্রতিটি জোড়া ক্রোমোজোমের প্রতিটি বৈশিষ্ট্য বা জিনের জন্য দু’টি একই প্রকৃতির অ্যালিল থাকে। অ্যালিল হল একটি জিনের দুই বা ততোধিক বিকল্প রূপের একটি এবং ক্রোমোজোমের একই স্থানে পাওয়া যায়। হোমোজাইগাস বলতে বোঝায় একটি নির্দিষ্ট অবস্থানের জন্য অভিন্ন অ্যালিল থাকা।

হেটেরোজাইগাস (Heterozygous) এর ডিপ্লয়েড প্রজাতিতে ক্রোমোজোমের প্রতিটি জোড়ায় জিনের প্রতিটি বৈশিষ্ট্যের জন্য দু’টি ভিন্ন প্রকৃতির অ্যালিল থাকে। হেটেরোজাইগাস বলতে একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্টের জন্য বিভিন্ন অ্যালিল থাকা বোঝায়। যদি দুটি সংস্করণ ভিন্ন হয় তবে সেই ব্যক্তির জিনের জন্য একটি ভিন্নধর্মী জেনোটাইপ থাকে, দু’টি অ্যালিলের মধ্যে সম্পর্ক কোন্ বৈশিষ্ট্যগুলি প্রকাশ করবে তা প্রভাবিত করে।

সোমাটিক কোষ (Somatic cell) হল শুক্রাণু ও ডিম্বণু কোষ (যাকে জার্ম কোষ বলা হয়) ছাড়া শরীরের অন্যান্য কোষ। মানুষের মধ্যে সোমাটিক কোষগুলি ডিপ্লয়েড হয়, যার অর্থ পিতা-মাতা থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ক্রোমোজোমের দুটি সেট ধারণ করা। সোমাটিক কোষে ডিএনএ মিউটেশনগুলি একজন ব্যক্তিকে প্রভাবিত করতে পারে কিন্তু সেগুলি তাদের সন্তানদের কাছে প্রেরণ করতে পারে না।

মাইটোসিস (Mitosis) হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি কোষ তার ক্রোমোজোমগুলিকে প্রতিলিপি করে এবং তারপর সেগুলিকে পৃথক করে, কোষ বিভাজনের প্রস্তুতির জন্য দুটি অভিন্ন নিউক্লিয়াস তৈরি করে। মাইটোসিস সাধারণত অনুরূপ জেনোমযুক্ত দুটি কন্যা কোষের সামগ্রীর সমান কোষ বিভাজন নীতি অনুসরণ করে।

সেন্ট্রোসোম (Centrosome) হল একটি সেলুলার কাঠমো যা কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। কোষ বিভাজনের আগে সেন্ট্রোসোম সদৃশ হয় এবং তারপরে বিভাজন শুরু হলে দুটি সেন্ট্রোসোম কোষের বিপরীত প্রান্তে চলে যায়। মাইক্রোটিউবুলস নামক প্রোটিন দু’টি সেন্ট্রোসোমের মধ্যে একটি স্পিন্ডেলে একত্রিত হয় এবং প্রতিলিপিকৃত ক্রোমোজোমকে কন্যা কোষে আলাদা করতে সাহায্য করে। কোষে কীভাবে কোষ বিভাজন সংগঠিত হয় তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল সেন্ট্রোসোম। 

নিউক্লিক অ্যাসিড (Nucleic acid) হল বড় জৈব অণু যা সমস্ত কোষ এবং ভাইরাসে অপরিহার্য ভ‚মিকা পালন করে। নিউক্লিক অ্যাসিডের একটি প্রধান কাজ জিনোমিক তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রকাশ করা। ডিএনএ- প্রোটিন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য কোষগুলিকে এনকোড করে। এ সম্পর্কিত ধরণের আর একটি নিউক্লিক অ্যাসিডকে আরএনএ বলে যা মলিকুলার আকারে প্রোটিন সংশ্লেষণ সহ একাধিক কোষীয় কার্যক্রমে ভ‚মিকা রাখে।

ক্রোমোজোমে ডিএনএ (DNA) থাকে, এর পূর্ণনাম ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড। এটি একটি অণু যা একটি জীবের বিকাশ এবং কার্যকারিতার জন্য জেনেটিক তথ্য বহন করে। ডিএনএ দুটি সংযুক্ত স্ট্র্যান্ড দিয়ে বাঁকানো মইয়ের মতো তৈরি যা ডাবল হেলিক্স (double helix) নামে পরিচিত এবং যা একে অপরের চারপাশে ঘুরতে থাকে। ডাবল হেলিক্স জিনোমিক্সের সাথে সম্পর্কিত একটি শব্দ যা ডিএনএ-র শারীরিক গঠন বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি স্ট্র্যান্ডে বিকল্প সুগার বা চিনি (deoxyribose) এবং ফসফেট গ্রæপ দিয়ে তৈরি একটি মেরুদন্ড থাকে। প্রতিটি সুগারের সাথে চারটি নিউক্লিওটাইড বেসের একটি সংযুক্ত থাকে, যথা- অ্যাডেনিন (A), সাইটোসিন (C), গুয়ানিন (G) বা থাইমিন (T)। দুটি স্ট্র্যান্ড বেসগুলির মধ্যে রাসায়নিক বন্ধন দ্বারা সংযুক্ত; থাইমিনের সাথে অ্যাডেনিন বন্ড এবং গুয়ানিন এর সাথে সাইটোসাইন বন্ড। ডিএনএ মেরুদন্ড বরাবর বেসগুলির ক্রম জৈবিক তথ্যকে এনকোড করে, যেমন- একটি প্রোটিন বা আরএনএ অণু তৈরির নির্দেশাবলী।

বেস পেয়ার (base pair)-এ দুটি পরিপূরক ডিএনএ নিউক্লিওটাইড বেস থাকে যা একত্রিত হয়ে “ডিএনএ মইয়ের একটি কান্ড” তৈরি করে। 

রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (Ribonucleic acid) সংক্ষেপে আরএনএ (RNA) সমস্ত জীবন্ত কোষে উপস্থিত থাকে যেগুলির ডিএনএ-র সাথে কাঠামোগত মিল রয়েছে। ডিএনএ ছাড়া আরএনএ অসহায়। আরএনএ অণুর একটি মেরুদন্ড রয়েছে যা ডিএনএ-তে পাওয়া ডিঅক্সিরাইবোজের পরিবর্তে বিকল্প ফসফেট গ্রæপ এবং সুগার রাইবোজ দিয়ে তৈরি। আরএনএ-তে চারটি নিউক্লিওটাইড বেসের মধ্যে একটি ইউরাসিল- Uracil (U), বাকি তিনটি হল adenine (A), cytosine (C) এবং guanine (G)। আরএনএ-তে ইউরাসিল অ্যাডেনিনের সাথে জোড়া দেয়। ডিএনএ অণুতে ইউরিসালের জায়গায় নিউক্লিওটাইড থাইমিন (T) ব্যবহার করা হয়। কোষে বিভিন্ন ধরণের আরএনএ বিদ্যমান; যেমন- মেসেঞ্জার আরএনএ (mRNA), রাইবোসোমাল আরএনএ (rRNA) এবং ট্রান্সফার আরএনএ (tRNA)। এছাড়াও কিছু আরএনএ জিনের অভিব্যক্তি নিয়ন্ত্রণে জড়িত। কিছু ভাইরাস তাদের জিনোমিক উপাদান হিসেবে আরএনএ ব্যবহার করে।

তিনটি প্রধান ধরণের একক-স্ট্র্যান্ডেড আরএনএ-র মধ্যে mRNA (messenger RNA) -এর ভুমিকা হল কোষের নিউক্লিয়াসের ডিএনএ থেকে সইটোপ্লাজমে প্রোটিন তথ্য বহন করা, অনুবাদের সময় প্রোটিন সংশ্লেষণের জন্য টেম্পলেট বা প্যাটার্ন বা নমুনা সরবরাহ করা এবং উৎপাদিত প্রোটিনের যান্ত্রিক ক্রম পাঠ করে প্রতিটি তিন-বেস কোডনকে তার অনুরূপ অনুবাদ করে ক্রমবর্ধমান প্রোটিন চেইনে অ্যামিনো অ্যাসিডে পরিণত করা;  tRNA (transfer RNA) অ্যামিনো অ্যাসিড নিয়ে আসে ও অনুবাদের সময় জেনেটিক কোড পাঠ করে, এর অন্যতম ভুমিকা হল mRNA কর্তৃক উৎপাদিত অ্যামিনো অ্যাসিডের ক্রমবর্ধমান চেইনের মধ্যে একটি লিঙ্ক বা অ্যাডাপ্টর হিসেবে কাজ করা। প্রতিবার চেইনে একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যোগ হলে mRNA অণুতে তার পরিপূরক ক্রম সহ একটি নির্দিষ্ট tRNA জোড় বাঁধে, এতে এটি নিশ্চিত করে- যে প্রোটিন সংশ্লেষিত হচ্ছে তার মধ্যে উপযুক্ত অ্যামিনো অ্যাসিড ঢোকানো হয়েছে; এবং rRNA (ribosomal RNA) হল এক ধরণের নন-কোডিং আরএনএ যা রাইবোসোমের প্রাথমিক উপাদান হিসেবে সমস্ত কোষের জন্য অপরিহার্য। rRNA হল একটি রাইবোজাইম যা রাইবোসোমে প্রোটিন সংশ্লেষণ করে, এটি রাইবোসোমাল ডিএনএ (rDNA) থেকে প্রতিলিপি করা হয় এবং তারপরে ছোট ও বড় রাইবোসোম সাব-ইউনিট গঠনের জন্য রাইবোসোমাল প্রোটিনের সাথে আবদ্ধ হয়। অনুবাদের সময় একটি কাঠামোগত ও অনুঘটক (catalytic role) এর ভ‚মিকা পালন করে। rRNA হল বেশিরভাগ কোষ পাওয়া RNA এর প্রধান রূপ; এটি সেলুলার RNA -এর প্রায় ৮০% তৈরি করে যদিও নিজে তা অনুবাদ করতে পারে না। রাইবোসোমগুলি প্রায় ৬০% rRNA এবং ৪০% রাইবোসোমাল প্রোটিন ভর দ্বারা গঠিত।

ক্রোমোজোমের ডিএনএ-র মধ্যে জিন অবস্থান করে। জিনকে উত্তরাধিকারের মৌলিক একক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জিনগুলি পিতা-মাতা থেকে সন্তানদের মধ্যে প্রাপ্তি ঘটে এবং শারীরিক ও জৈবিক বৈশিষ্ট্যগুলি নির্দিষ্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ধারণ করে। বেশিরভাগ জিন নির্দিষ্ট প্রোটিন বা প্রোটিনের সেগমেন্টের জন্য কোড করে, যার শরীরের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন কাজ রয়েছে। মানুষের প্রায় ২০,০০০ প্রোটিন-কোডিং জিন রয়েছে।

জেনেটিক কোড একটি জিনের মধ্যে থাকা নির্দেশাবলীকে বোঝায়, যা একটি কোষকে বলে যে- কীভাবে একটি নির্দিষ্ট প্রোটিন তৈরি করতে হবে। প্রতিটি জিনের কোড ডিএনএ-র চারটি নিউক্লিওটাইড বেস ব্যবহার করে: অ্যাডেনিন (A), সাইটোসিন (C), গুয়ানিন (G) এবং থাইমিন (T) - বিভিন্ন উপায়ে তিন-অক্ষরের “কোডন” বানান করার জন্য, যা নির্দিষ্ট করে প্রত্যেক প্রোটিন পজিশনের জন্য কোন অ্যামিনো অ্যাসিড প্রয়োজন। জেনেটিক কোডের অবস্থান অনুযায়ী দুই ধরণের ডিএনএ রয়েছে, ১) কোডিং ডিএনএ- প্রোটিন কোডিং জিনকে প্রতিনিধিত্ব করে যা প্রোটিনের জন্য এনকোড করে, এবং ২) নন-কোডিং ডিএনএ- প্রোটিনের জন্য এনকোড করে না। কিছু নন-কোডিং ডিএনএ সিকোয়েন্সগুলি জিনের অভিব্যক্তি নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। 

একটি কোডন হল তিনটি নিউক্লিওটাইডের (a trinucleotide) একটি ডিএনএ বা আরএনএ ক্রম (sequence) যা একটি নির্দিষ্ট অ্যামিনো অ্যাসিড এনকোডিং বা প্রোটিন সংশ্লেষণের সমাপ্তির সংকেত (stop signals) জিনোমিক তথ্যের একটি ইউনিট গঠন করে। ৬৪টি ভিন্ন কোডন রয়েছে: ৬১টি অ্যামিনো অ্যাসিড নির্দিষ্ট করে এবং ৩টি স্টপ সিগন্যাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। একটি অ্যান্টিকোডন হল একটি tRNA অণুর একপ্রান্তে অবস্থিত একটি ট্রাইনিউক্লিওটাইড ক্রম, যা একটি mRNA ক্রমানুসারে একটি সংশ্লিষ্ট কোডনের পরিপূরক (complementary)। প্রোটিন সংশ্লেষণের সময় ক্রমবর্ধমান পলিপেপটাইডে যখনই একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যোগ হয় তখন একটি tRNA অ্যান্টিকোডন mRNA অণুর সাথে তার পরিপূরক কোডন যুক্ত করে, যাতে পলিপেপটাইডে উপযুক্ত অ্যামিনো অ্যাসিড ঢোকানো যায়।

অনুবাদ (Translation) জিনোমিক্সের সাথে সম্পর্কিত এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে mRNA -এ এনকোড করা তথ্য প্রোটিন সংশ্লেষনের সময় অ্যামিনো অ্যাসিড যোগ করার নির্দেশ দেয়। কোষ সাইটোপ্লাজমের রাইবোসোমে অনুবাদ হয়, যেখানে পাঠ করে এবং সংশ্লেষিত প্রোটিন তৈরি করে এমন অ্যামিনো অ্যাসিড চেইনের স্ট্রিংয়ে অনুবাদ করা হয়।

প্রতিলিপি (Transcription) জিনোমিক্সের সাথে সম্পর্কিত একটি জিনের ডিএনএ সিকোয়েন্সের একটি RNA কপি তৈরির প্রক্রিয়া। mRNA নামে পরিচিত এই অনুলিপিটি ডিএনএ- তে এনকোড করা জিনের প্রোটিন তথ্য বহন করে। মানুষ এবং অন্যান্য জটিল জীবের মধ্যে mRNA কোষের নিউক্লিয়াস থেকে কোষের সাইটোপ্লাজমের দিকে চলে যায়, যেখানে এটি এনকোডেড প্রোটিন সংশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। 

অ্যামিনো অ্যাসিড (Amino acid) হল মৌলিক অণু যা প্রোটিন গঠনের জন্য বিল্ডিং block হিসেবে কাজ করে। ২০টি বিভিন্ন অ্যামিনো অ্যাসিড  রয়েছে। একটি প্রোটিনে অ্যামিনো অ্যাসিডের এক বা একাধিক চেইন থাকে (যাকে পলিপেপটাইড বলা হয়) যার ক্রমটি একটি জিনে এনকোড করা থাকে। কিছু অ্যামিনো অ্যাসিড শরীরে সংশ্লেষিত হতে পারে, তবে অন্যগুলি (প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড) পারে না তবে একজন ব্যক্তির খাদ্য থেকেই তা পাওয়া যায়।

পেপটাইড (Peptide) হল অ্যামিনো অ্যাসিডের একটি ছোট চেইন (সাধারণত ২ থেকে ৫০) রাসায়নিক বন্ধন (পেপটাইড বন্ড বলা হয়) দ্বারা সংযুক্ত। সংযুক্ত অ্যামিনো অ্যাসিডের একটি দীর্ঘ চেইন (৫১ বা তার বেশি) পলিপেপটাইড (Polypeptide) সৃষ্টি করে। 

প্রোটিন (Protein) বড় ও জটিল অণু যা শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। এগুলি কোষ দ্বারা সম্পন্ন বেশিরভাগ কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও শরীরের টিস্যু এবং অঙ্গগুলির গঠন, ফাংশন এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয়। কোষের ভিতরে উৎপাদিত প্রোটিন এক বা একাধিক পলিপেপটাইড থেকে তৈরি হয়, যার ক্রম (sequence) প্রোটিন-এনকোডিং জিনের ডিএনএ ক্রম (sequence) দ্বারা নির্ধারিত হয়।

ক্রোমাটিন (Chromatin) বলতে ডিএনএ এবং প্রোটিনের মিশ্রণকে বোঝায় যা মানুষ এবং অন্যান্য উচ্চতর জীবের কোষে পাওয়া ক্রোমোজোম গঠন করে। অনেক প্রোটিন- যেমন, হিস্টোন - জিনোমের বিশাল পরিমাণ ডিএনএকে অত্যন্ত কম্প্যাক্ট আকারে প্যাকেজ করে যা কোষের নিউক্লিয়াসে ফিট হতে পারে। একটি ক্রোমোজোমে একটি সেন্ট্রিমিয়ারের (Centromere) সাথ সংযুক্ত হয়ে দু’টি বা চার’টি ক্রোমাটিন থাকে। কোষ বিভাজনের সময় সিন্ট্রোমিয়ার একজোড়া ক্রোমাটিডকে একত্রে সংযুক্ত করে।

হিস্টোন (Histone) একটি প্রোটিন যা একটি ক্রোমোজোমের জন্য কাঠামোগত সহায়তা প্রদান করে। প্রতিটি ক্রোমোজোমে ডিএনএ-র একটি দীর্ঘ অণু থাকে যা অবশ্যই কোষের নিউক্লিয়াসে ফিট থাকে। এর জন্য ডিএনএ হিস্টোন প্রোটিন কমপ্লেক্সের চারপাশকে আবৃত করে ক্রোমোজোমকে আরও কম্প্যাক্ট আকৃতি দেয়। হিস্টোনগুলি জিনের অভিব্যক্তি নিয়ন্ত্রণে ভুমিকা পালন করে।

জিন অভিব্যক্তি (Gene expression) হল সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি জিনে এনকোড করা তথ্যকে আরএনএ অণু হিসেবে তৈরি করতে ব্যবহৃত হয় যা প্রোটিনের জন্য কোড করে অথবা নন-কোডিং আরএনএ অণু তৈরি করতে যা অন্যান্য ফাংশনে ব্যবহৃত হয়। কখন কোথায় কতটা আরএনএ অণু এবং প্রোটিন উৎপাদন করতে হবে তার “ভল্যুম কন্ট্রোল” হিসেবে জিন অভিব্যক্তি “অন/অফ সুইচ” (“on/off switch”) কন্ট্রোলারের ভূমিকা রাখে। জিন অভিব্যক্তির প্রক্রিয়াটি সাবধানে নিয়ন্ত্রিত এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে উল্লেথযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়। অনেক জিন কর্তৃক উৎপাদিত আরএনএ এবং প্রোটিন অন্য জিনের অভিব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে কাজ করে। 

মিথাইলেশন (Methylation) হল ডিএনএ এবং অন্যান্য অণুর একটি রাসায়নিক পরিবর্তন যা কোষগুলিকে আরও কোষ তৈরি কররা জন্য বিভাজন হিসেবে ধরে রাখতে পারে। মিথাইলেশন ডিএনএ-তে জিনের অভিব্যক্তি পরিবর্তন করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় মিথাইল গ্রুপ নামক রাসায়নিক ট্যাগগুলি ডিএনএ-র মধ্যে একটি নির্দিষ্ট স্থানে সংযুক্ত করে যেখানে তারা একটি জিন চালু বা বন্ধ (on or off) করে, যার ফলে জিনটি এনকোড করা প্রোটিনের উৎপাদন নিয়ন্ত্রিত হয়। যেখানে মিথাইল গ্রুপের রাসায়নিক ট্যাগ ডিএনএ-তে সংযুক্ত হয় না তাকে ডি-মিথাইলেশন বলা হয়।

হোমোলোগাস রিকম্বিনেশন (Homologous recombination) হল এক ধরণের জেনেটিক রিকম্বিনেশন যেকানে নিউক্লিওটাইড সিকোয়েন্স দু’টি ডিএনএ-র অনুরূপ বা অভিন্ন অণুর মধ্যে বিনিময় করা। ডিম্বাণু ও শুক্রাণু কোষ (মিয়োসিস) গঠনের সময় পিতা-মাতার পুরুষ ও স্ত্রী জোড়া ক্রোমোজোমগুলি সারিবদ্ধ করে যাতে একই রকম ডিএনএ ক্রম (সিকোয়েন্স) গুলি এক ক্রোমোজোম থেকে অন্য ক্রোমোজোমে অতিক্রম করতে বা বিনিময় করতে পারে। ডিএনএ-র এই আদান-প্রদান হল বংশধরদের মধ্যে দেখা জিনোমিক বৈচিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্তি (Inherited) জেনেটিক্সের সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয় যা ডিএনএ-তে এনকোড করা বৈশিষ্ট্য (trait) বা বৈচিত্র (variants) বোঝায় এবং তা প্রজননের সময় পিতা-মাতা থেকে সন্তাদের মধ্যে প্রবাহিত হয়। উত্তরাধিকার মেন্ডেলিয়ান জেনেটিক্সের নিয়ম দ্বারা নির্ধারিত হয়।

একজন ব্যক্তির একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য (trait) জেনেটিক্সের সাথে সম্পর্কিত। বৈশিষ্ট্যগুলি জিন ও পরিবেশগত কারণ বা উভয়ের সংমিশ্রণ দ্বারা নির্ধারিত হতে পারে। বৈশিষ্ট্য গুণগত (যেমন- চোখের রং) বা পরিমাণগত (যেমন- উচ্চতা বা রক্তচাপ) হতে পারে। একটি প্রদত্ত বৈশিষ্ট্য একজন ব্যক্তির সামগ্রিক ফেনোটাইপের অংশ। আমরা যখন বৈশিষ্ট্য শব্দটি চিন্তা করি তখন আমরা ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলি যেমন সহানুভূতিশীল বা মেজাজের ভাল অনুভূ তির কথা ভাবতে পারি। জেনেটিক্সে বৈশিষ্ট্য হল মানুষ এবং অন্যান্য জীবন্ত প্রাণীর বৈশিষ্ট্য যা বর্ণনা বা পরিমাপ করা যায়। বৈশিষ্ট্য শারীরিক ও আচরণগত হতে পারে। গবেষক এবং চিকিৎসকগণ আগ্রহের সাথে গবেষণা করছেন- কী কারণে সকলের মধ্যে না থাকলেও কোন কোন মানুষের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা তাদের অসুস্থতার কারণ হিসেবে গণ্য করা যায় এবং তা থেকে চিকিৎসা সম্পর্কে সূত্র পাওয়া যায়। যখন কারও কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্টের সংমিশ্রণ থাকে তখন এটি আমাদেরকে কীভাবে একটি চিকিৎসা অবস্থা নির্ণয় করতে হয় সে সম্পর্কে সূত্র দিতে পারে, এবং কীভাবে বিভিন্ন রোগ একে অপরের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে তা অধ্যয়নের জন্য আমরা সেই বৈশিষ্ট্যগুলির অনুরূপ সংমিশ্রণের সাথে তুলনা করতে পারি।

পলিজেনিক বৈশিষ্ট্য (polygenic trait) হল চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য, যেমন- উচ্চতা বা ত্বকের রঙ যা দুই বা ততোধিক জিন দ্বারা প্রভাবিত হয়। যেহেতু এগুলিতে একাধিক জিন জড়িত সেহেতু পলিজেনিক বৈশিষ্ট্যগুলি মেন্ডেলিয়ান উত্তরাধিকারের ধরণগুলি অনুসরণ করে না। অনেক পলিজেনিক বৈশিষ্ট্যও পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং একে মাল্টিফ্যাক্টোরিয়াল বলা হয়।

প্রভাবশালী বৈশিষ্ট্য ও অ্যালিল (Dominant traits and alleles) হচ্ছে পর্যবেক্ষণযোগ্য জেনেটিক্সের সাথে সম্পর্কিত বিষয়। পিতা-মাতা থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে অপরিহার্যভাবে প্রাপ্ত জিনের দুটি অ্যালিলের মধ্যে প্রভাবশালী বৈশিষ্ট্য প্রকাশের জন্য শুধুমাত্র একটি প্রভাবশালী অ্যালিলের প্রয়োজন হয়, শুধুমাত্র একটি অ্যালিলের অনুলিপি বহনকারী ব্যক্তিদের মতো একই বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। প্রভাবশালী বৈশিষ্ট্য ও অ্যালিলের কারণে পিতামাতা এবং শিশু উভয়েই সেই জিনের সাথে সম্পর্কিত বৈশিষ্ট্য বা ব্যাধি দ্বারা প্রভাবিত হয়। এক প্রজন্মের প্রভাবশালী বৈশিষ্ট্য ও অ্যালিল পরবর্তী প্রজন্মে প্রচ্ছন্ন হিসেবে প্রবাহিত হতে পারে।

প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য ও অ্যালিল (Recessive Traits and Alleles) হচ্ছে পর্যবেক্ষণযোগ্য জেনেটিক্সের সাথে সম্পর্কিত বিষয়। পিতা-মাতা থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে অপরিহার্যভাবে প্রাপ্ত জিনের দুটি অ্যালিলের মধ্যে একটি যা প্রকাশযোগ্য বৈশিষ্ট্য তৈরি করে না, শুধুমাত্র এর উপস্থিতি থাকে। এবং পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত হতে পারে। একটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য যে বৈশিষ্ট্য প্রকাশের জন্য প্রচ্ছন্ন অ্যালিলের উপস্থিতিও প্রয়োজন, নতুবা জিন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না যদি উভয় অ্যালিল ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে কোষীয় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হয়। সুতরাং প্রচ্ছন্ন অ্যালিল কর্তৃক সৃষ্ট প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য দ্বারা কোষীয় ফাংশন রয়েছে। স্বাভাবিক জিনে উভয়ের কার্যকারিতা রয়েছে যদি একটিতে পরিবর্তন হয় তবে তা কোষে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে যা স্বাভাবিক জিনে ঘটে না।

মিউটেশন (Mutation) হল একটি জীবের ডিএনএ ক্রম (সিকুয়েন্স) পরিবর্তন। কোষ বিভাজনের সময় ডিএনএ প্রতিলিপিতে ত্রুটি, মিউটেনের সংস্পর্শে বা ভাইরাল সংক্রমণের ফলে মিউটেশন হতে পারে। জার্মলাইন মিউটেশন (যা ডিম্বাণু ও শুক্রাণুতে ঘটে) সন্তানদের মধ্যে প্রেরিত হতে পারে, যথন সোম্যাটিক মিউটেশন (যা শরীরের কোষে ঘটে) তখন প্রেরিত হয় না।

ডিএনএ সিকুয়েন্সিং (DNA sequencing) বলতে একটি ডিএনএ অণুতে নিউক্লিওটাইড বা বেসগুলির সঠিক ক্রম নির্ধারণের জন্য সাধারণ ল্যাবরেটরী টেকনিক বোঝায়। বেসগুলির ক্রম (প্রায়শই তাদের রাসায়নিক নামের প্রথম অক্ষর দ্বারা উল্লেখ করা হয়: A, T, C, এবং G) জৈবিক তথ্যগুলিকে এনকোড করে যা কোষগুলির বিকাশে এবং পরিচালনায় ব্যবহৃত হয়। জিন ও জিনোমের অন্যান্য অংশগুলির কার্যকারিতা বোঝার জন্য ডিএনএ সিকুয়েন্স স্থাপন সম্পর্কিত তথ্য গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যের দিক থেকে ডিএনএ মুদ্রিত পাঠ্য (text) এর মতো। ডেটা সংরক্ষণের একটি পদ্ধতি (মুদ্রিত শব্দ), শেখার একটি ভাষা এবং যা লেখা আছে তার অর্থ বোঝার একটি প্রক্রিয়া। জিনোমের তথ্য জানতে ডিএনএ সিকুয়েন্সিং বর্তমানে মানুষের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ব্যাপক তথ্য জানার  সুযোগকে সম্প্রসারিত করেছে। ডিএনএ সিকুয়েন্সিংয়ের জন্য বর্তমানে নিজস্ব বৈশিষ্ট সমৃদ্ধ বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে।

আরও কিছু তথ্য জেনে রাখা জরুরী- গোটা বিশ্বে আনুমানিক ৭০০০ রকমের বিরল রোগ রয়েছে এবং প্রায় ৩০ কোটি মানুষ এই সব রোগে ভোগেন। সমীক্ষা বলছে, প্রতি বছর যত জন শিশু জন্মায় তাদের প্রায় শতকরা ৬ ভাগ এই ধরনের বিরল রোগ নিয়ে জন্মায়। এদের মধ্যে ৩০ শতাংশ শিশু ৫ বছর অতিক্রম করার আগেই মারা যায়। তবে জিনগত সকল রোগই প্রাণঘাতী নয়।

কোন কারনে এক বা একাধিক জিনের মিউটেশনের ফলে বিরল জিনঘটিত রোগ হতে পারে। রোগটি ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারীদের মধ্যে কতখানি দেখা দেবে তা অনেকটাই নির্ভর করে পিতা-মাতার মধ্যে কোন জিনটি ডোমিনেন্ট বা রিসিসিভ রয়েছে তার উপর। এ ক্ষেত্রে রোগগুলি প্রাণঘাতী হয়, যদিও বেঁচে যায় তো কোন না কোন শারীরিক অক্ষমতায় ভুগতে থাকে। জন্ম থেকেই এই ধরনের রোগের লক্ষণ দেখা যায় তাই এদেরকে কনজেনিটাল ডিসঅর্ডার বলে। এখন পর্যন্ত তিন ধরনের জেনেটিক ডিসঅর্ডারের সন্ধান পাওয়া গেছে। যথা- ১) সিঙ্গেল জিন ডিসঅর্ডার, ২) ক্রোমোজোমাল ডিসঅর্ডার এবং ৩) মাল্টি-জিন ডিসঅর্ডার।

একটি জিনের গন্ডগোলের কারণে হয় সিঙ্গেল জিন ডিসঅর্ডার। একাধিক ভাবে এই রোগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে প্রবাহিত হতে পারে। নিচে সংক্ষেপে এ বিষয়ে আলোচনা করা হল।

অটোসোমাল ডোমিনেন্ট ডিসঅর্ডার (Autosomal dominant disorder) হল একধরনের বিরল প্রকৃতির প্রভাবশালী জেনেটিক ব্যাধি, একটি জিনের একটি অনুলিপির ডিএনএতে বানান পরিবর্তনের (spelling change) একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্নের কারণে এটি ঘটে। একটি পরিবারের বংশধারায় কোন একজনের মধ্যে এমনটি থাকলে তার ৫০% সন্তানদের মধ্যে এটি প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হান্টিংটন রোগ একটি অটোসোমাল ডোমিনেন্ট ডিসঅর্ডার। মারফান সিন্ড্রোম, টিউবেরাউস স্ক্লেরোসিস ও BRCA1, বংশগত স্তন এবং ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের মতো রোগগুলি এইভাবে কাজ করে। পরিবারে কারো না থাকলেও কখনও কখনও এই ব্যাধিতে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে পরিবারে কাউকে পাওয়া যায়।  

অটোসোমাল রিসিসিভ ডিসঅর্ডার (Autosomal Recessive Disorder) হল জিনগত ব্যাধির বৈশিষ্ট্যগত উত্তরাধিকারের একটি প্যাটার্ন। এ সম্পর্কিত মূল বিষয় হচ্ছে প্রত্যেকের কাছে প্রতিটি জিনের দুটি কপি রয়েছে; একটি মায়ের কাছ থেকে অন্যটি বাবার কাছ থেকে আসে। যে পরিবারে বাবা-মা উভয়ে অটোসোমাল রিসিসিভ ডিসঅর্ডারের বাহক কিন্তু রোগ নেই তাদের প্রায় এক চতুর্থাংশ শিশু দুটি রোগ সৃষ্টিকারী অ্যালিল উত্তরাধিকার সূত্রে পাবে এবং এই রোগে আক্রান্ত হবে। এর বিপরীতে অটোসোমাল ডোমিনেন্ট ডিসঅর্ডারে এই ব্যাধি সৃষ্টির জন্য একজন পিতা বা মাতার কাছ থেকে পরিবর্তিত জিনের শুধুমাত্র একটি একক অনুলিপি প্রয়োজন হয়। সিকেল সেল অ্যানিমিয়া একটি অটোসোমাল রিসিসিভ জেনেটিক ডিসঅর্ডারের উদাহরণ। অন্যান্য সাধারণ অটোসোমাল রিসিসিভ রোগের মধ্যে রয়েছে সিস্টিক ফাইব্রোসিস, অ্যালবিনিজম, রবার্টস সিন্ড্রোম,নিইম্যান পিক ডিজিজ এবং অনেকগুলি জেনেটিক রোগ যা নবজাতকের স্ক্রীনিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে অবগত হওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে একটি কথা জেনে রাখা দরকার, বিবাহের পূর্বে যদি পুরুষ এবং মহিলার ডিএনএ সিকুয়েন্সিং পরীক্ষায় উভয়ের মধ্যে অটোসোমাল রিসিসিভ ডিসঅর্ডার পাওয়া যায় তবে তাদের মধ্যে বিবাহ না হলে অথবা একজনমাত্র বাহক হয় তবে তাদের মধ্যে বিবাহ হলে ভবিষ্যতে তাদের সস্তানদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।

এক্স- লিঙ্কড ডোমিনেন্ট এক ধরনের জিনঘটিত বিরল রোগ যা বিশেষত পুরুষদের মধ্যেই দেখা যায়। এক্স ক্রোমোজোমের জিনের মিউটেশনের সাথে এর যোগ রয়েছে। উদাহরণ- রেট সিন্ড্রোম, আইকারডি সিন্ড্রোম ইত্যাদি। 

এক্স- লিঙ্কড রিসিসিভ ক্ষেত্রেও মহিলাদের চেয়ে পুরুষেরাই বেশি আক্রান্ত হয়। এক্স ক্রোমোজোম জিনের মিউটেশনের সঙ্গে এরও যোগ রয়েছে। যে সব মহিলাদের এক্স- লিঙ্কড রিসিসিভ ক্রোমোজোম থাকে তাদের পুত্র সস্তানদের ৫০ শতাংশ এই জিনগত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু কন্যা সন্তানদের ৫০ শতাংশ এই মিউটেটেড জিনের একটি কপির বাহক হয়ে থাকে। টাক পড়া, বর্ণান্ধতা, হিমোফিলিয়া-এ এবং লেস-নাইহান সিন্ড্রোম এক্স- লিঙ্কড রিসিসিভ জিনের মিউটেশনের কারণে হয়ে থাকে।

ওয়াই- লিঙ্কড বা হোলান্ড্রিক ডিসঅর্ডার ওয়াই ক্রোমোজোমের মিউটেশনের সঙ্গে এর যোগ রয়েছে।

মাইটোকন্ড্রিয়াল হল মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ-তে মিউটেশনের জন্য ঘটা এক ধরনের ডিসঅর্ডার।

ক্রোমোজোমাল ডিসঅর্ডার হচ্ছে মানুষের মধ্যে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোমের মধ্যে একটি বা একাংশ যদি না থাকে বা বদলে যায় তা হলে নানা ধরনের অসুখ দেখা দেয়। যেমন- ডাউন সিন্ড্রোম, টার্নার সিন্ড্রোম, উইলিয়াম সিন্ড্রোম ইত্যাদি। যদি কারো একটি ক্রোমোজোম না থাকে বলে মোনোসমি, আবার কখনও মানুষ একটি ক্রোমোজোম বাড়তি নিয়ে জন্মায় তখন তাকে বলে ট্রায়সমি। ডাউন সিন্ড্রোমের ক্ষেত্রে ক্রোমোজোম-২১ এ একটি বাড়তি কপি থাকে যার ফলে একে ট্রায়সমি বলা হয়। এই রোগে ব্যক্তির মুখের রেখচিত্র স্বাভাবিক ভাবে তৈরি হয় না এবং দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিও ঠিকমতো হয় না।

একাধিক জিনের প্রভাবের পাশাপাশি পরিবেশ এবং জীবনযাত্রার ধরনের কারণে যে রোগ হয় তাকে মাল্টি-জিন ডিসঅর্ডার বলে। হাঁপানি, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, হাইপারটেনশন, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, পেটের সমস্যা ইত্যাদি মাল্টি-জিন ডিসঅর্ডারের উদাহরণ।        

ফাইব্রোব্লাস্ট (Fibroblast) হল এক ধরনের কোষ যা সংযোগকারী টিস্যু গঠনে অবদান রাখে, একটি তন্তুযুক্ত সেলুলার উপাদান যা শরীরের অন্যান্য টিস্যু বা অঙ্গকে সাপোর্ট করে এবং সংযুক্ত করে। ফাইব্রোব্লাস্টগুলি কোলাজেন প্রোটিন নিঃসরণ করে যা টিস্যুর কাঠামোগত ফ্রেমওয়ার্ক বজায় রাখতে সাহায্য করে। একজন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রাপ্ত একটি সাধারণ ত্বকের বায়োপসির মাধ্যমে ল্যাবরেটরীতে ফাইব্রোব্লাস্টগুলির কতটা বৃদ্ধি হতে পারে তা জেনে সেই ব্যক্তির জেনেটিক এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিক অবস্থান নির্ণয় করা হয়।

ফেনোটাইপ (Phenotype) বলতে একজন ব্যক্তির পর্যবেক্ষণযোগ্য বৈশিষ্ট্যকে বোঝায়। যেমন- উচ্চতা, চোখের রঙ, রক্তের ধরণ ইত্যাদি। একজন ব্যক্তির ফেনোটাইপ তাদের জিনোমিক মেকআপ তথা জিনোটাইপ এবং পরিবেশগত কারণ উভয় দ্বারা নির্ধারিত হয়। "Pheno" এর সহজ অর্থ “পর্যবেক্ষণ” এবং "phenomenon" শব্দের মূল থেকে এসেছে। সে কারণে এই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সাধারণ বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি রোগের উপস্থিতি বা অনুপন্থিতিও উল্লেখ করতে পারে। কিন্তু এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে ফেনোটাইপগুলি সমানভাবে বা এমনকি কখনও কখনও জেনেটিক প্রভাবের চেয়ে পরিবেশগত প্রভাব দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। সুতরাং একটি ফেনোটাইপ সরাসরি একটি জিনোটাইপের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে, তবে বাধ্যবাধকতা নেই। সাধারণত জিনোটাইপ এবং ফেনোটাইপের পারষ্পরিক সম্পর্ক ওয়ান-টু-ওয়ান নয়। ফেনোটাইপে প্রায় সবসময়ই পরিবেশগত প্রভাব থাকে, যেমন- একজন কী খায়, কতটা ব্যায়াম বা শারীরিক শ্রম ব্যয় করে, কতটা ধুমপান করে ইত্যাদি। 

জিনোটাইপ (Genotype) হচ্ছে জিনোমের একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে তথা লোকাসে উপস্থিত লিপিবদ্ধ করা বিকল্প বানান। এটি প্রতীক দ্বারা বোঝানো হয়ে থাকে, যেমন- জিনের মধ্যে বিকল্প বানান হিসেবে BB, Bb, bb ব্যবহৃত হয়। জিনোটাইপগুলিকে একটি নির্দিষ্ট লোকেশনে প্রকৃত ডিএনএ সিকুয়েন্স দ্বারাও উপস্থাপন করা যেতে পারে, যেমন-, CC, CT, TT। ডিএনএ সিকুয়েন্সিং এবং অন্যান্য মেথডে একটি একক পরীক্ষায় জিনোটাইপ নির্ধারণ করতে জিনোমের লক্ষ লক্ষ লোকেশন ব্যবহৃত হতে পারে। কিছু জিনোটাইপ একজন ব্যক্তির পর্যবেক্ষণযোগ্য বৈশিষ্ট্যে অবদান রাখে, যাকে ফেনোটাইপ বলে। 

জিনোটাইপকে বুঝতে কল্পনা করুন যে- Cel বা কোষ একটি রাষ্ট্র, DNA হল সেই রাষ্ট্রের সরকার, রাষ্ট্রটি জিনোম নামক এক সংবিধানে বর্ণিত আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়, সংবিধানের এক একটি আইনকে জেনেটিক কোড বলে যা বিকল্প ভাষায় লেখা। আপনারা দুই বন্ধু (আপনি mRNA এবং আপনার বন্ধু tRNA) সেই সরকারের মন্ত্রী, আপনি আইন মন্ত্রী এবং আপনার বন্ধু তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী। আপনাদের দায়িত্ব হল সংবিধানের বিকল্প ভাষায লেখা আইন পাঠ করে অনুবাদ ও প্রতিলিপি করবেন এবং একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আকারে বিচার বিভাগে বা সংসদে পাঠাবেন। বিচার বিভাগ বা সংসদ  অ্যামিনো অ্যাসিড নামক নির্দেশনা হিসাবে রাষ্ট্রের সকল প্রশাসনে তা প্রেরণ করবেন। সেই নির্দেশনা থেকে প্রোটিন নামক যে শক্তি তৈরি হবে তার ভিত্তিতে সিভিল প্রশাসন তথা পুষ্টি নিয়ন্ত্রক অর্গানেল ও অণু সমূহ জনগণ (human economy) এর জন্য খাদ্য নিরাপত্তা সহ হাইজিন সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবে, পুলিশ প্রশাসন তথা শৃংখলা সংক্রান্ত অর্গানেল ও অণু সমূহ কোষের অভ্যন্তরীণ কার্যাদির শৃংখলা রক্ষা করবে এবং সেনা বাহিনী তথা ইমিয়্যুন সিস্টেম বহিরাগত (ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, প্যাথোজেন ইত্যাদি) শত্রুদের অপতৎপরতা থেকে রাষ্ট্র কে রক্ষা করবে। এই প্রক্রিয়ায় আপনারা দুই বন্ধু জিনোম নামক সংবিধান থেকে বিকল্প ভাষায় লেখা জেনেটিক কোড তথা আইন পাঠ করছেন এবং তা অনুবাদ করে প্রতিলিপি লিখছেন। বিকল্প ভাষাটি হল, "You do help the functioning of cardiac system."|  আপনারা অনুবাদ করলেন “তুমি কার্ডিয়াক সিস্টেমের কাজ করতে সাহায্য কর” এবং সে অনুযায়ী প্রতিলিপি করে সংসদে পাঠালেন। সংসদ এর ভিত্তিতে যে অ্যামিনো অ্যাসিড নামক নির্দেশনা তৈরি করল সে অনুযায়ী সকল কাজ সম্পাদিত হল অর্থাৎ শৃংখলা ও নিরাপত্তা বজায় থাকল। ভিন্ন ভাষায় বলা চলে এতে সু-শাসন তথা স্বাস্থ্যাবস্থা ঠিক-ঠাক থাকবে। অন্যদিকে বিকল্প ভাষাটি যদি এমন হয়, "You do hole the functioning of cardiac system."। এই ভাষাটির তৃতীয় শব্দে “help” এর বানান ভুল করে “hole” লেখা আছে, তা হলে অনুবাদ ও প্রতিলিপিতে তার অর্থ হবে “তুমি কার্ডিয়াক সিস্টেমের কার্যকারিতা ছিদ্র কর”। এখন এর প্রেক্ষিতে সকল কাজ সম্পাদিত হলে তার পরিনতি হবে ভয়াবহ অর্থাৎ বিশৃংখলা ও নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেবে। অন্য কথায় বলা চলে দুঃশাসন তথা রোগ-বালাই প্রকাশ পাবে। এই উদাহরণে, আপনারা দুই বন্ধু যে পাঠ্যটি পড়েছেন এবং নির্দিষ্ট অবস্থানে কী রয়েছে তা আপনারা জেনেছেন, এগুলি ভিন্ন ভিন্ন বাক্যে ভিন্ন ভিন্ন শব্দ হতে পারে। ডিএনএ-র জন্য জিনোটাইপ হল জিনোমের একটি নির্দিষ্ট লোকেশনে এনকোড করা নির্দিষ্ট তথ্য, যার ফলে কোষীয় সকল কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত হয়। বাক্যের উদাহরণের বানানটি সঠিক অথবা ভুল থাকতে পারে। ধরা যাক "help" বদলে " hole" রয়েছে। ডিএনএ-র জন্য জিনোটাইপে ভুল বানানকে কখনও কখনও মিউটেশন বলা হয় এবং এটি স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য খারাপ পরিণতি হতে পারে।

রাষ্ট্রে বা কোষে দুঃশাসন চললে জনগণের (হিউম্যান ইকোনোমিতে) কষ্ট-দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। এক বা একাধিক রাষ্ট্রে এমন দুঃশাসন কায়েম হলে পৃথিবীতে তথা সমগ্র মানব দেহ-মনে অশান্তি-উদ্বেগ দেখা দেয় অর্থাৎ স্বাচ্ছন্দবোধের অভাব ঘটে তথা কনশাসনেস সৃষ্টি হয, যার অর্থ বিভিন্ন রেজাল্ট অব ডিজিজ প্রকাশ পায়। আর যদি সকল রাষ্ট্রে সুশাসন থাকে পৃথিবীটা হয় শান্তিময়, অর্থাৎ স্বাচ্ছন্দবোধ তথা ফ্রিডম বজায় থাকে।

রিয়েল হোমিওপ্যাথিক দর্শন মতে স্যার শ্যামল কুমার দাস নির্দিষ্ট করেছেন, যে সকল  জেনেটিক কোডে সঠিক বানান রয়েছে বলে মডার্ন সাইন্স দাবী করে সেগুলি মূলত এক সেট বেনিফিসিয়াল জিন আর যে সকল জেনেটিক কোডে ভুল বানান রয়েছে সেগুলি মূলত ছয় সেট হার্মফুল জিন। এই দুই ধরণের জিনের জেনেটিক কোডের সমন্বয়ে একজন ব্যক্তির জোনোটইপ গঠিত হয়। কোন ল্যাবরেটরীক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই ঐ ব্যক্তির জীবন দর্শন বিশেষ করে শৈশবের জীবন দর্শন থেকে প্রাপ্ত তথ্য মুল্যায়ন করে তার জেনোটাইপ উপলব্ধি করা যায় এবং তা বিবেচনা করে ওষুধ নির্বাচন করা সম্ভব। এটি স্যার শ্যামল কুমার দাসের মৌলিক আবিষ্কার যা প্রচলিত হোমিওপ্যাথিক ধ্যান-ধারনাকে বহুলাংশে অগ্রসর এবং আধুনিক করেছে, পরবর্তিতে এ বিষয়ক বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। 

রিয়েল হোমিওপ্যাথিতে এই জিনোটাইপকে সর্বাধিক এবং একমাত্র গুরুত্ব দিয়ে ওষুধ নির্বাচন ও চিকিৎসা করা হয়। যেটি স্যার শ্যামল কুমার দাস কর্তৃক উদ্ভাবিত ব্যক্তির শৈশবের জীবন দর্শন থেকে উপলব্ধি করা যায়। চিকিৎসাকালীন পর্যবেক্ষণের সময় রিয়েল হোমিওপ্যাথিতে জিনোটাইপ এবং ফেনোটাইপ উভয় অভিব্যক্তিকেই কাজে লাগানো হয়। সুতরাং এ সংক্রান্ত বিস্তারিত অধ্যয়ন ও জ্ঞান অর্জনে সচেষ্ট থাকা প্রত্যেক রিয়েল হোমিওপ্যাথের অত্যাশ্যকীয় কর্তব্য।

জিনোমিক্স থেকে স্যার শ্যামল কুমার দাসের ধারণা (hypothesis) অনুযায়ী রিয়েল হোমিওপ্যাথিক যে ব্যাখ্যা পাওয়া যায় তা হচ্ছে, বংশগতির মাধ্যমে পিতা-মাতার ক্রোমোজোম যৌন প্রক্রিয়ায় পরস্পর নিষিক্ত হয়ে গঠিত এককোষী জাইগোটের ডিএনএ-তে অবস্থিত জিনোমে এক সেট বেনিফিসিয়াল জিন এবং ছয় সেট হার্মফুল জিন প্রাপ্ত হয়। মিয়োসিস ও মাইটোসিস কোষ বিভাজনের মধ্য দিয়ে একজন ব্যক্তির পুর্ণ দেহ-কাঠামো, মাংশপেশী, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সবকিছু তৈরি হয়। সকল জিনেই একই ধরনের বেনিফিসিয়াল ও হার্মফুল জিনের জিনোটাইপ ও ফেনোটইপ থাকে। ব্যক্তিটির জিনোটাইপ ও ফেনোটাইপ অনুযায়ী তার পর্যবেক্ষণযোগ্য অথবা অ-পর্যবেক্ষণযোগ্য সকল প্রকারের গঠনগত চেহারা এবং বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত হয়। ডিএনএ সিকুয়েন্সে ঐ ব্যাক্তিটি সমগ্র জীবনে কোন কোন সময় বা মুহুর্তগুলো কীভাবে স্বাস্থ্যাবস্থায় এবং রোগাবস্থায় অতিক্রম করবে তার সকল তথ্য ঐ জিনগুলিতে এনকোড করা থাকে। ডিএনএ সিকুয়েন্স পরিবর্তন করা যায় না, তবে এর অভিব্যক্তি পরিবর্তন করা যায়। বেনিফিসিয়াল জিন ভাইটাল ফোর্স তথা জীবনীশক্তির এবং হার্মফুল জিন ডিজিজ ফোর্স তথা রোগশক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। উভয় প্রকারের জিন প্রোটিন উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে সক্রিয় থাকে বটে কিন্তু অভ্যন্তরীণ পরিবেশে হিস্টোন ও মিথাইলেশন প্রক্রিয়ায় বেনিফিসিয়াল জিনের পূর্ণ প্রভাব বিরাজমান থাকলে হার্মফুল জিন কর্তৃক প্রেরিত কোড বা তথ্য এমআরএনএ কর্তৃক অনুবাদ ও টিআরএনএ কর্তৃক প্রতিলিপি করণে অফ বা বন্ধ করে জিন অভিব্যক্তি ব্যক্তিটির স্বাস্থ্যের অনুকুলে রাখতে প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড উৎপাদন, পেপটাইড থেকে পলিপেপটাইড গঠনের মাধ্যমে বেনিফিসিয়াল প্রোটিন তৈরি করতে সক্ষম হয়। এই অবস্থায় বেনিফিসিয়াল জিন-এর অতি-সক্রিয় অবস্থা এবং এক বা একাধিক সেট হার্মফুল জিন-এর নিষ্ক্রিয় অবস্থা বলা হয়। তখন হার্মফুল জিন নিষ্ক্রিয় থাকে তাই তাদের জীবন দর্শন প্রকাশিত হয় না। যেহেতু এই অবস্থায় হার্মফুল জিন কর্তৃক জেনেটিক কোড প্রদান প্রক্রিয়া অব্যহত থাকে এবং এই প্রক্রিয়া অব্যহত থাকার কারণে হার্মফুল প্রোটিন তৈরির সম্ভাবনা থেকে যায় তাই ব্যক্তিটির এমন স্বাস্থ্যাবস্থাকে sick বা আপাত সুস্থ অবস্থা বলা হয়।

আবার, অভ্যন্তরীণ পরিবেশে হিস্টোন ও মিথাইলেশন প্রক্রিয়ায় বেনিফিসিয়াল জিন এবং হার্মফুল জিনের প্রভাব সমানে-সমান বিরাজমান থাকলে হার্মফুল জিন কর্তৃক প্রেরিত কোড বা তথ্য এমআরএনএ কর্তৃক অনুবাদ ও টিআরএনএ কর্তৃক প্রতিলিপি করণে অন বা চালু করে জিন অভিব্যক্তি ব্যাক্তিটির স্বাস্থ্যের প্রতিকুলে রাখতে প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড উৎপাদন, পেপটাইড থেকে পলিপেপটাইড গঠনের মাধ্যমে হার্মফুল প্রোটিন তৈরি করতে সক্ষম হয়, কিন্তু বেনিফিসিয়াল জিন কর্তৃক প্রেরিত কোড অনুযায়ী বেনিফিসিয়াল প্রোটিন অধিক ও প্রয়োজনীয় মাত্রায় উৎপাদন অব্যহত থাকে। ফলে বেনিফিসিয়াল প্রোটিন কর্তৃক হার্মফুল প্রোটিনকে নিরপেক্ষ বা নিউট্রিলাইজড করে স্বাস্থ্যাবস্থা বহাল রাখে। এই অবস্থাকেও বেনিফিসিয়াল জিন-এর অতি-সক্রিয় অবস্থা বলা হয় এবং এক বা একাধিক সেট হার্মফুল জিন-এর সষ্ক্রিয় অবস্থা তৈরি হয়। তখন হার্মফুল জিন সষ্ক্রিয় থাকে তাই তাদের জীবন দর্শন প্রকাশিত হয়। যেহেতু এই অবস্থাতে হার্মফুল জিন কর্তৃক জেনেটিক কোড প্রদান প্রক্রিয়ার কারণে হার্মফুল প্রোটিন তৈরি হয় এবং ভবিষ্যতে রোগগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু এখনও রোগগ্রস্ত হয়নি তাই ব্যক্তিটির এমন স্বাস্থ্যাবস্থাকেও sick বা আপাত সুস্থ অবস্থা বলা হয়।

আবার, অভ্যন্তরীণ পরিবেশে হার্মফুল জিনের প্রভাব বৃদ্ধির কারণে যে প্রতিকুল আবহাওয়া তৈরি হয তাতে হিস্টোন ও মিথাইলেশন প্রক্রিয়ায় বেনিফিসিয়াল জিন এক প্রচ্ছন্ন অবস্থায় আচ্ছন্ন হয় ফলে হার্মফুল জিনের প্রভাবকে দমন করা যায় না, হার্মফুল জিন কর্তৃক প্রেরিত কোড বা তথ্য এমআরএনএ কর্তৃক অনুবাদ ও টিআরএনএ কর্তৃক প্রতিলিপি করণে অন বা চালু থেকে জিন অভিব্যক্তি ব্যাক্তিটির স্বাস্থ্যের শৃঙ্খলা ধ্বংস করতে প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড উৎপাদন, পেপটাইড থেকে পলিপেপটাইড গঠনের মাধ্যমে হার্মফুল প্রোটিন তৈরি বাড়িয়ে দেয় এবং কোষীয় কার্যকলাপে কর্তত্ব প্রতিষ্ঠা করে অর্থাৎ পূর্বের উদাহরণ অনুযায়ী রাষ্ট্রে স্বৈর-শাসন কায়েম হয়, কিন্তু বেনিফিসিয়াল জিন কর্তৃক প্রেরিত কোড অনুযায়ী বেনিফিসিয়াল প্রোটিন উৎপাদন অব্যহত থাকার কারণে হার্মফুল প্রোটিন সম্পূর্ণত নিরপেক্ষ বা নিউট্রিলাইজড করতে সক্ষম না হলেও মানুষটি বেঁচে থাকে। বেনিফিসিয়াল প্রোটিন কর্তৃক হার্মফুল প্রোটিনকে নিরপেক্ষ বা নিউট্রিলাইজড করে স্বাস্থ্যাবস্থা বজায় রাখতে পারে না ফলে মানুষটির মধ্যে নানান রকমের রোগলক্ষণ বা results of diseases দেখা দেয়। এই অবস্থায় বেনিফিসিয়াল জিন-এর সক্রিয় অবস্থা বহাল থাকে এবং এক বা একাধিক সেট হার্মফুল জিন-এর অতি-সষ্ক্রিয় অবস্থা তৈরি হয়। তখন হার্মফুল জিন অতি-সষ্ক্রিয় থাকে তাই তাদের জীবন দর্শনেরও প্রকাশ থাকে। যেহেতু এই অবস্থাতে হার্মফুল জিন কর্তৃক জেনেটিক কোড প্রদান প্রক্রিয়ার কারণে হার্মফুল প্রোটিন অধিক পরিমানে তৈরি হতে থাকে এবং ব্যক্তিটি রোগীতে পরিণত হয় তাই ব্যক্তিটির এমন স্বাস্থ্যাবস্থাকে diseased বা রোগগ্রস্ত অবস্থা বলা হয়।

রিয়েল হোমিওপ্যাথিক ওষুধ বিশেষ নিয়মে প্রয়োগের পর মানব জিনোমে অবস্থিত আর এক প্রকার সাইলেন্ট জিন তখন সক্রিয় হয়ে বেনিফিসিয়াল প্রোটিন উৎপাদন করে, যার ফলে ক্ষতিকর বা হার্মফুল প্রোটিন নিউট্রিলাইজ হয়ে রোগাবস্থা দূর করে এবং ধীরে ধীরে হার্মফুল জিন ইনএকটিভ হওয়ার মাধ্যমে আরোগ্য সম্পাদনে সাহায্য করে।

প্রকৃতির অনিবার্য নিয়মে এক অজানা নির্দিষ্ট সময়ে বেনিফিসিয়াল জিনের কর্মক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে বিলোপ ঘটে এবং ব্যক্তিটি মৃত দেহে পরিনত হয়। তখন তাকে সোমাটিক ডেথ্ বলা হয়।