13 Jun, 2024 এপিজেনেটিক্স (Epigenetics), কাজী আজম এপিজেনেটিক্স (Epigenetics) কে কখনও কখনও এপিজেনোমিক্স (epigenomics) বলা হয়। এ বিষয়টি অধ্যয়নের এমন একটি ক্ষেত্র যা ডিএনএ-তে পরিবর্তনের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে যা অন্তর্নিহিত সিকুয়েন্স পরিবর্তনের সাথে জড়িত নয়। ডিএনএ অক্ষর এবং প্রোটিন যেগুলি ডিএনএ-র সাথে যোগাযোগ করে তাদের রাসায়নিক পরিবর্তন থাকতে পারে এমন জিন চালু এবং বন্ধ (on and off) করতে দিক পরিবর্তন করে। কোষ বিভাজনের সময় বা এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তি প্রজন্মে কিছু এপিজেনেটিক্স পরিবর্তনগুলি পিতা-মাতার কোষ থেকে কন্যা কোষে প্রেরিত হতে পারে। একটি জিনোমে সমস্ত এপিজেনেটিক পরিবর্তনের সংগ্রহকে এপিজেনোম বলা হয়। একটি জিনের ডিএনএ অক্ষরগুলির পাশাপাশি প্রোটিনসমূহ যেগুলি সেটবদ্ধ জিনের সাথে যোগাযোগ করে তা সামান্য নয়; উভয়ই রাসায়নিক পরিবর্তন দ্বারা সজ্জিত যা নিয়ন্ত্রণ করে কীভাবে, কোথায় এবং কখন জিন চালু এবং বন্ধ (on and off) করা হয়। সংক্ষেপে বলা যায় ডিএনএ সিকুয়েন্স কে পরিবর্তন না করে পরিবেশের বিভিন্ন ফ্যাক্টর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জিনোমিক্সে যে পরিবর্তন ঘটে তাকে এপিজেনেটিক্স বলে, এই পরিবর্তনগুলি কোষ বিভাজনের সময় এবং বংশগতির রীতি অনুযায়ী পিতা-মাতা থেকে তাদের পরবর্তি বংশধরদের মধ্যে প্রবাহিত হয়।কার্যকরণের অর্থে এপিজেনোম হল রাসায়নিক যৌগের একটি দল যা জিনোমকে কী করতে হবে তা নির্দেশ দিতে পারে। মানুষের জিনোম হল ডিএনএ-র প্রায় ৩ বিলিয়ন বেস জোড়ার সম্পূর্ণ সমাবেশ যা প্রতিটি ব্যক্তিকে ইউনিক করে তোলে। ডিএনএ প্রোটিন তৈরির নির্দেশাবলী ধারণ করে একটি কোষে বিভিন্ন ধরণের কার্য সম্পাদনে ভুমিকা রাখে। এপিজেনোম রাসায়নিক যৌগ এবং প্রোটিন দ্বারা গঠিত বিধায় ডিএনএ-র সাথে সংযুক্ত হতে পারে এবং জিন চালু বা বন্ধ করার মতো ক্রিয়াকলাপ পরিচালনা করতে পারে, বিশেষ কোষে প্রোটিনের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। এপিজেনোমিক যৌগগুলি যখন ডিএনএ-র সাথে সংযুক্ত হয় এবং এর কার্যকারিতা পরিবর্তন করে, তখন তারা জিনোমটিকে “চিহ্নিত” করে বলা হয়। এই চিহ্নগুলি ডিএনএ-র সিকুয়েন্স পরিবর্তন করে না, বরং তারা কোষের ডিএনএ-র নির্দেশাবলী ব্যবহার করার উপায় পরিবর্তন করে। কোষ বিভাজিত হওয়ার সাথে সাথে চিহ্নগুলি কখনও কখনও কোষ থেকে কোষে প্রেরন করা যেতে পারে।একজন মানুষের কয়েক ট্রিলিয়ন কোষ রয়েছে। এই কোষগুলি বিভিন্ন পেশী, হাড়, মস্তিষ্ক ইত্যাদির জন্য বিশেষায়িত হলেও তাদের প্রতিটির নিউক্লিয়াসে মূলত একই জিনোম বহন করে। কোন ধরণের কোষে কীভাবে এবং কখন জিনের বিভিন্ন সেট চালু বা বন্ধ হবে তার দ্বারা কোষের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করা হয়। যেমন- চোখের আলো সনাক্ত করতে সংশ্লিষ্ট কোষগুলিতে প্রোটিন তৈরি করতে বিশেষ জিন চালু করে, লোহিত রক্তকণিকার নির্দিষ্ট কোষগুলি বিশেষ জিনের মাধ্যমে এমন প্রোটিন তৈরি করে যা বাতাস থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে অক্সিজেন বহন করে। এপিজেনোম জিনোমের এই পরিবর্তনগুলির অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করে। এপিজেনোম হল মিয়োসিস ও মাইটোসিসের মাধ্যমে বংশগত কোষের ডিএনএ এবং ডিএনএ- সম্পর্কিত প্রোটিনের রাসায়নিক পরিবর্তনের সেট, যা জিনের অভিব্যক্তিকে পরিবর্তন করতে পারে। পরিবর্তনগুলি ক্রমবিকাশ ও টিস্যু পার্থক্যের একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হিসাবে ঘটে এবং পরিবেশগত প্রভাবের প্রকাশ বা রোগের প্রতিক্রিয়ায় পরিবর্তিত রূপ নিতে পারে। এপিজেনোমে প্রথমতঃ ডিএনএ মিথাইলেশন সরাসরি জিনোমের ডিএনএ-কে প্রভাবিত করে। এই প্রক্রিয়ায় মিথাইল গ্রুপের রাসায়নিক ট্যাগ সংযুক্ত প্রোটিন ডিএনএ অণুর বেসের নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপিত হয়। মিথাইল গ্রুপগুলি ডিএনএ এবং অন্যান্য প্রোটিনের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ায় প্রভাবিত হয়ে জিন চালু বা বন্ধ করে। এইভাবে কোষগুলি মনে রাখতে পারে কোন জিন চালু বা বন্ধ আছে। দ্বিতীয়তঃ হিস্টোন পরিবর্তন যা ডিএনএ-কে পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে। কোষের ডিএনএ হিস্টোন প্রোটিনের চারপাশে আবৃত থাকে, যা রিল-সদৃশ কাঠামো তৈরি করে ডিএনএ-র খুবই দীর্ঘ অণুগুলিকে কোষের নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরে দক্ষভাবে গুটিয়ে নিতে পারে। প্রোটিন হিস্টোনগুলিতে বিভিন্ন রাসায়নিক ট্যাগগুলি সংযুক্ত করতে পারে। কোষের অন্যান্য প্রোটিন এই ট্যাগগুলি সনাক্ত করতে পারে এবং ডিএনএ-র সেই অঞ্চলটি সেই কোষে ব্যবহার করা উচিত না-কি উপেক্ষা করা উচিত তা নির্ধারণ করতে পারে। এপিজেনোমের এই পরিবর্তনগুলি ডিএনএ-তে রাসায়নিক ট্যাগ সংযুক্ত হিস্টোন পরবর্তি প্রজন্মে ডিম্বণু ও শুক্রাণুর মাধ্যমে প্রবাহিত হতে পারে এবং কোষগুলিকে বিশেষায়িত থাকতে সাহায্য করে।মানুষের জিনোমে প্রতিটি জিনের দু’টি কপি থাকে- উত্তরাধিকার সূত্রে একটি মায়ের কাছ থেকে অন্যটি পিতার কাছ থেকে প্রাপ্ত হয়। অল্প সংখ্যক জিনের জন্য শুধুমাত্র মায়ের কাছ থেকে কপি বা অনুলিপি চালু হয় (switched on); অন্যদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পিতার কাছ থেকে কপি বা অনুলিপি চালু করা হয় (turned on)। এই প্যাটার্নকে ইমপ্রিন্টিং বলা হয়। এপিজেনোম একটি অঙ্কিত জিনের দু’টি কপির মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে এবং কোনটি চালু করা হয়েছে তা নির্ধারণ করে। কিছু রোগ অস্বাভাবিক ইমপ্রিন্টিং দ্বারা সৃষ্ট হয়। এর মধ্যে রয়েছে- বেক-উইথ সিন্ড্রোম যা শরীরের অতিরিক্ত বৃদ্ধি এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত একটি ব্যাধি; প্রডার-উউলি সিন্ড্রোম যা দুর্বল পেশী স্থিতিস্থাপকতা এবং অবিরাম ক্ষুদার সাথে যুক্ত হয়ে স্থুলতার দিকে পরিচালিত করে; এবং অ্যাঞ্জেলম্যান সিন্ড্রোম যা বৌদ্ধিক অক্ষমতার সাথে গতিবিধির অসুবিধার দিকে পরিচালিত করে।যদিও শরীরের সমস্ত কোষে মূলত একই জিনোম থাকে তবে ডিএনএ এবং হিস্টোনগুলি রাসায়নিক ট্যাগ দ্বারা চিহ্নিত ডিএনএ কোষগুলিতে বিশেষায়িত হয়ে গেলে পুনরায় সাজানো হয়। এপিজেনোম একজন ব্যক্তির জীবনকাল জুড়ে পরিবর্তিত হতে পারে। লাইফস্টাইল এবং পরিবেশগত কারণগুলি (যেমন- ধুমপান, খাদ্যাভ্যাস এবং সংক্রামক রোগ) একজন ব্যক্তিকে চাপের মুখে ফেলতে পারে যা রাসায়নিক পরিবর্তনের দিকে প্ররোচিত করে। এই প্রতিক্রিয়াগুলি ঘুরে ফিরে প্রায়ই এপিজেনোমে পরিবর্তনের দিকে পরিচালিত করে, যার মধ্যে কিছু ক্ষতিকারক হতে পারে। যাইহোক, জীবনের চাপের সাথে সামঞ্জস্য করার জন্য এপিজেনোমের ক্ষমতা স্বাভাবিক মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য প্রযোজনীয় বলে মনে করা হয়। কিছু মানুষের রোগ প্রোটিনের ত্রুটির কারণে ঘটে যা এপিজেনোমিক চিহ্নগুলি “পড়ে” এবং “লিখে”। জিনোম অথবা এপিজেনোম বা উভরয়র পরিবর্তনের কারণে ক্যানসার হয়। এপিজেনোমের পরিবর্তনগুলি কোষের বৃদ্ধি বা ইমিয়্যুন প্রতিক্রিয়ার সাথে জড়িত জিনগুলি চালু বা বন্ধ করতে পারে। এপিজেনোমের পরিবর্তনগুলি ব্রেইনের ক্যানসার, পাকস্থলীর ক্যানসার, কোলন ক্যানসার এবং সবচেয়ে সাধারণ প্রকারের কিডনি ক্যানসারের বৃদ্ধির অগ্রগতি ঘটাতে পারে।ক্যানসার-সংবেদনশীল জিন (Cancer-susceptibility gene) হল একটি জিন যা পরিবর্তিত বা মিউটেড হলে একজন ব্যক্তিকে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। যে ব্যক্তিরা নির্দিষ্ট ক্যানসার-সংবেদনশীল জিনের উত্তরাধিকার সূত্রে মিউটেশন (যেমন- BRCA1/BRCA2) পেয়েছেন তাদের আজীবন ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে যা সাধারণ জনসংখ্যার তুলনায় উল্লেখযোগ্যহারে বেশি। উচ্চ-ঝুঁকির শ্রেণীতে থাকা ব্যক্তিরা আরও ঘন ঘন ক্যানসার স্ক্রিন থেকে উপকৃত হতে পারেন। সামান্য ঝুঁকির সাথে যুক্ত জিনের অনেক বৈচিত্রও রয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে পরিবেশগত কারণগুলিও ভুমিকা পালন করতে পারে। BRCA1 এবং BRCA2 হচ্ছে প্রথম দু’টি জিন যা ব্রেস্ট ক্যানসার এবং ওভারিয়ান ক্যানসারের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যায। BRCA1 এবং BRCA2 -তে মিউটেশনযুক্ত ব্যক্তিদের ব্রেস্ট, ওভারি ছাড়াও অন্যান্য ধরণের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি যাদের এরূপ জিন মিউটেশন নেই এমন ব্যক্তিদের তুলনায় অনেক বেশি। BRCA1 এবং BRCA2 উভয়ই সাধারণত টিউমার দমনকারী হিসাবে কাজ করে, যার অর্থ তারা কোষ বিভাজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। বেশিরভাগ মানুষের এই জিনের দু’টি সক্রিয় (active) কপি বা অনুলিপি থাকে, উত্তরাধিকার সূত্রে মিউটেশনের কারণে যখন দু’টি কপির একটি নিষ্ক্রিয় (inactive) হয়ে যায় তখন একজন ব্যক্তির কোষে শুধুমাত্র একটি কপি সক্রিয় থাকে। যদি এই কপিটিও নিষ্ক্রিয় হয়ে যায তবে অনিয়ন্ত্রিত কোষের বৃদ্ধির ফলস্বরূপ ব্রেস্ট, ওভারি বা অন্যান্য ধরণের ক্যানসারের দিকে পরিচালিত করে। টিউমার দমনকারী জিন (Tumor Suppressor Gene) একটি প্রোটিনকে এনকোড করে যা কোষ বিভাজন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে টিউমার তৈরির সম্ভাবনা রুখে দেয়। যখন এই জিন মিউটেশন দ্বারা নিষ্ক্রিয় (inactive) হয় তখন এটি থেকে এনকোড করা প্রোটিন তৈরি হয় না বা সঠিকভাবে কাজ করে না এবং ফলস্বরূপ অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন ঘটতে পারে। এই ধরণের মিউটেশন ক্যানসারের বিকাশে ভুমিকা রাখতে পারে। টিউমার দমনকারী জিন আমাদের শরীরের সব কোষেই থাকে যখন তারা চালু থাকে (switched on) তখন তারা টিউমার বৃদ্ধি এবং বিভক্ত হতে বাধা দেয়। টিউমার দমনকারী জিনকে একটি গাড়ির ব্রেকের সাথে তুলনা করা যেতে পারে, যখন কোষটি ভুলভাবে এটি মুছে ফেলে বা পরিবর্তিত করে বা বন্ধ করা (switched off) হয় অর্থাৎ ব্রেকটি ছেড়ে দেওয়া হয় তখন কোষটি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভক্ত হতে পারে যার পরিনতিতে কোষটিকে ক্যানসার কোষে পরিনত করার জন্য চালিত করতে পারে।অনকোজিন (Oncogene) হল একটি পরিবর্তিত জিন যা ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। এটি পরিবর্তিত হওয়ার আগে প্রোটো-অনকোজিন (proto-oncogene) রূপে থাকে এবং স্বাভাবিক কোষ বিভাজন নিয়ন্ত্রণে ভুমিকা রাখে। যখন প্রোটো-অনকোজিন পরিবর্তিত হয়ে অনকোজিনে রূপান্তরিত হয় তখন কোষটি অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত এবং সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটায় এবং এর ফলস্বরূপ ক্যানসার দেখা দিতে পারে। অনকোজিনকে গাড়ির অ্যাক্সিলেটর বা ত্রুটিপূর্ণ ব্রেকের সাথে তুলনা করা যেতে পারে; যখন অ্যাক্সিলেটরের মতো কাজ করে তখন কোষটিকে বারবার বিভক্ত হতে ঠেলে দেয়, অন্যদিকে ত্রুটিপূর্ণ ব্রেকের মতো কাজ করলে কোষটি বাধা বা প্রতিরোধ ছাড়াই বিভক্ত হতে থাকে। প্রাথমিকভাবে অনকোজিন ভাইরাসের মধ্যে সনাক্ত হয়েছিল যা প্রাণীদের ক্যানসারের কারণ হতে পারে। পরবর্তিতে জানা গেছে এটি প্রোটো-অনকোজিনের পরিবর্তিত বা মিউটেড রূপ। প্রোটো-অনকোজিন স্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি, বিভাজন ও অ্যাপটোসিস তথা প্রোগ্রাম অনুযায়ী কোষের মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কিন্তু অনকোজিন অনিয়ন্ত্রিত কোষের বৃদ্ধি এবং কোষের মৃত্যু ঠেকিয়ে দিয়ে ক্যানসারের বিকাশে ভুমিকা রাখে। কার্সিনোজিন (Carcinogen) হল একধরণের সারবস্তু, জীবস্বত্বা বা এজেন্ট যা ক্যানসার সৃষ্টি করতে সক্ষম। কার্সিনোজিন প্রাকৃতিক পরিবেশগতভাবে দেখা দিতে পারে অথবা মানুষের জীবনাচার থেকে উৎপন্ন হতে পারে। বেশিরভাগ কার্সিনোজিন মিউটেশন তৈরি করতে কোষের ডিএনএ-র সাথে মিথস্ক্রিয়া (work by interacting) করে কাজ করে। কার্সিনোজিন হতে পারে এমন আইটেমগুলি শনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ কেননা তখন আমরা সেগুলির সাথে আমাদের ক্ষতিকর সম্পর্ক এড়িয়ে চলতে পারি। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস ন্যাশনাল এজেন্সি ফর টক্সিকোলজি প্রোগ্রাম এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার উভয়ই মানব কার্সিনোজিন এর ক্যাটালগ হিসাবে যুক্তি ভিত্তিক প্রমান-সিদ্ধ কিছু সারবস্তুর ব্যবহার নিশ্চিত করেছে। আজ অবধি ৫০০ টিরও বেশি সারবস্তুকে মানুষের জন্য অবসম্ভাব্যভাবে নির্দিষ্ট কিংবা সম্ভাব্য কার্সিনোজিন হিসোবে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে অ্যাসবেস্টস, অটোমোবাইল নিষ্কাশন, প্রক্রিয়াজাত মাংস বা অতিবেগুনি রশ্মি, কিছু নির্দিষ্ট ভাইরাস, অটোমোবাইলের ধোঁয়া এবং সিগারেটের ধোঁয়া ইত্যাদি মতো আইটেম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মানে এই নয় যে এগুলির সংস্পর্শে এলেই ক্যানসারে আক্রান্ত হবে। কার্সিনোজিনের সংস্পর্শে আসা একজন ব্যক্তির মধ্যে শেষ পর্যন্ত ক্যানসারের বিকাশ ঘটবে কি-না তা নির্ভর করে প্রভাবগত ক্ষতিকর সম্পর্কের পরিমান ও সময়কাল, অন্যান্য পরিবেশগত কারণগুলির সংস্পর্শ এবং ব্যক্তির জেনেটিক ব্যাকগ্রাউন্ড এর উপর। পরিবেশ থেকে বিভিন্ন সংক্রমন মানুষের স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব রেখে থাকে এবং ইমিয়্যুন সিস্টেম সেক্ষেত্রে ব্যাক্তির স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। প্রসঙ্গক্রমে সেই আলোচনাও জরুরি বিবেচনায় নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হল। মাইক্রোবায়োম (Microbiome) হল অণুজীবের সম্প্রদায় (যেমন- ছত্রাক, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া) যা একটি নির্দিষ্ট পরিবেশে বিদ্যমান থাকে। মানুষের মধ্যে এই শব্দটি প্রায়শই অণুজীবগুলিকে বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয় যা শরীরের একটি নির্দিষ্ট অংশে বাস করে, যেমন- ত্বক বা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট। অণুজীবের এই গোষ্ঠীগুলি গতিশীল এবং বহুমাত্রিক পরিবেশগত কারণের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন হয়, যেমন- ব্যায়াম, খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রভাবসমূহ। ভাইরাস (Virus) হল একটি সংক্রামক জীবাণু যা প্রোটিন আবরণ দ্বারা বেষ্টিত নিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ কিংবা আরএনএ) এর একটি অংশ নিয়ে গঠিত হয়। ভাইরাস একা প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে না; প্রতিলিপি করতে তাকে অবশ্যই কোষকে সংক্রামিত করতে হবে এবং হোস্ট সেলের উপাদানগুলিকে নিজের প্রতিলিপি তৈরি করতে ব্যবহার করতে হবে। প্রায়শই ভাইরাস প্রতিলিপি করার প্রক্রিয়ায় হোস্ট কোষকে মেরে ফেলে, যার ফলে জীবসত্তা ক্ষতিগ্রস্ত (damage) হয়। মানুষের রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাসগুলি সুপরিচিত উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে এইডস, কোভিড-১৯, হাম, গুটিবসন্ত ইত্যাদি।ব্যাকটেরিয়া (Bacteria) হল ক্ষুদ্র এককোষী জীব। ব্যাকটেরিয়া পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র পাওয়া যায় এবং এরা গ্রহের ইকোসিস্টেমের জন্য অত্যাবশ্যক। ব্যাকটেরিয়ার কিছু প্রজাতি তাপমাত্রা ও চাপের চরম পরিস্থিতিতে বাস করতে পারে। মানবদেহ ব্যাকটেরিয়ায় পুর্ণ, প্রকৃতপক্ষে মানব কোষের চেয়ে ব্যাকটেরিয়া কোষ বেশি রয়েছে বলে অনুমান করা হয়। শরীরের বেশিরভাগ ব্যাকটেরিয়া নিরীহ, এমনকি কিছু ব্যাকেটেরিয়া মানবদেহের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। তুলামূলকভাবে অল্প সংখ্যক প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া মানবদেহে রোগ সৃষ্টি করে।লিম্ফোসাইট (Lymphocyte) হল এক ধরণের হোয়াইট ব্লাড সেল যা ইমিয়্যুন সিস্টেমের অংশ। লিম্ফোসাইটের দু’টি প্রধান প্রকার রয়েছে; B cell এবং T cell| B cell গুলি অ্যান্টিবডি তৈরি করে যাা আক্রমণকারী ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং টক্সিন ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়। T cell গুলি ভাইরাস দ্বারা দখলীকৃত বা ক্যানসারে পরিণত হওয়া শরীরের নিজস্ব কোষগুলিকে ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়। ইমিয়্যুন সিস্টেম (Immune system) কে অনাক্রম্যতস্ত্র বা প্রতিরক্ষাতন্ত্র বা রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাপনা বলা হয়ে থাকে। ইমিয্যুন সিস্টেম বহিরাগত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবি বিভিন্ন এজেন্ট (যাদেরকে রোগ সংক্রামক জীবাণু বা ইংরেজিতে প্যাথোজেন নামে ডাকা হয়) নিজস্ব জীবদেহে আলাদাভাবে শনাক্ত করে এবং দেহ থেকে বের করে দেয় কিংবা ধ্বংস করে। অন্যকথায়, ইমিয়্যুন সিস্টেম হল জৈবিক প্রক্রিয়ার একটি নেটওয়ার্ক যা একটি জীবকে রোগ থেকে রক্ষা করে। এটি ভাইরাসগোষ্ঠির পরজীবী জীবণু সহ ক্যানসার কোষ এবং ব্যাকটেরিয়া সহ বিভিন্ন ধরণের প্যাথোজেনকে জীবের নিজস্ব স্বাস্থ্যকর টিস্যু থেকে আলাদা করতে সনাক্ত করে এবং প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। এই কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ফ্যাগোসাইটোসিস, ডিফেনসিন্স নামধারী ক্ষুদ্রাণুরোধী পেপটাইডসমূহ এবং কমপ্লিমেন্ট সিস্টেম। ইমিয়্যুন সিস্টেমের দু’টি ধরণ, যথা- ১) সহজাত ইমিয়্যুন সিস্টেম (Innate immune system) এবং ২) অর্জিত ইমিয়্যুন সিস্টেম (Adaptive immune system)।১) সহজাতইমিয়্যুন সিস্টেম (Innate immune system)- যে সকল অণুজীন বা টক্সিন যা সফলভাবে একটি জীবে প্রবেশ করে সেগুলি সহজাত ইমিয়্যুন সিস্টেমের কোষ ও প্রক্রিয়াগুলির মুখোমুখি হয়। যখন প্যাটার্ন রিকগনিশন রিসেপ্টর- যা অণুজীবের বিস্তৃত গ্রুপের মধ্যে সংরক্ষিত উপাদান গুলিকে এবং প্যাথোজেনকে চিনতে পারে- এর দ্বারা জীবাণু সনাক্ত করা হলে সহজাত প্রতিক্রিয়া সাধারণত ট্রিগার করে। সহজাত ইমিয়্যুন প্রতিরক্ষা অ-নির্দিষ্ট অর্থাৎ এই সিস্টেমগুলি একটি সাধারণ উপায়ে প্যাথোজেনের প্রতিক্রিয়া জানায়, দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরক্ষা প্রদান করে না। তবে সহজাত ইমিয়্যুন সিস্টেম বেশিরভাগ জীবের হোস্ট প্রতিরক্ষার প্রভাবশালী সিস্টেম হিসাবে বিবেচিত হয়।২) অর্জিত ইমিয়্যুন সিস্টেম (Adaptive immune system)- একটি শক্তিশালী ইমিয়্যুন প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি ইমিউনোলজিক্যাল মেমরি তৈরি করে অর্থাৎ প্রতিটি প্যাথোজেনের একটি স্বরূপ অ্যান্টিজেন দ্বারা “মনে রাখা” হয়। অর্জিত ইমিয়্যুন প্রতিক্রিয়ায় প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে অ্যান্টিজেন উপস্থাপনার জন্য নির্দিষ্ট-অ্যান্টিজেন এবং “নন-সেলফ” অ্যান্টিজেনের স্বীকৃতি প্রয়োজন কেননা নির্দিষ্ট প্যাথোজেন কর্তৃক সংক্রমিত কোষের জন্য নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন তৈরি করা থাকে এবং এর উপযোগি প্রতিক্রিয়াগুলি আরোহন করার ক্ষমতা শরীরে “মেমরি কোষ” দ্বারা বজায় রাখা হয়। একটি রোগজীবাণু একাধিকবার শরীরে সংক্রমিত হলে এই নির্দিষ্ট মেমরি কোষগুলি দ্রুত তাকে নির্মূল করতে ব্যবহৃত হয়। আইসোপ্যাথিতে ভ্যাক্সিনেশনের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট ভাইরাসকে ডি-এ্যাকটিভ করে মানবদেহে প্রবেশ করিয়ে মূলত নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন তৈরি করে মেমরিতে রাখা হয় যাতে ভবিষ্যতে ঐ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে প্রতিরক্ষা করা সম্ভব হয়। ইমিয়্যুন সিস্টেমে লিম্ফোসাইটের B cells এবং T cells উভয়ই রিসেপ্টর অণু বহন করে যা নির্দিষ্ট লক্ষ্যগুলিকে চিনকে পারে। টি সেল প্যাথোজেনের মতো "non-self" লক্ষ্যগুলিকে সনাক্ত করে তারপর তাকে প্রক্রিয়াজাত করে ক্ষুদ্র অ্যান্টিজেনে (প্যাথোজেনের ক্ষুদ্র অংশ) পরিনত করে "self" রিসিপ্টর হিসাবে উপস্থাপন করে যাতে সংক্রমিত প্যাথোজেনকে চিনতে পারে একে মেজর হিস্টোকম্প্যাটিবিলিটি কমপ্লেক্স (MHC) বলা হয়।টি কোষের দু’টি প্রধান উপ-প্রকার রয়েছে; ১) হত্যাকারী টি কোষ (killer T cell) এবং ২) সহায়ক টি কোষ (helper T cell)। এর অতিরিক্ত আর একটি ৩) নিয়ন্ত্রক টি কোষ (regulatory T cell) রয়েছে যা প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে ভুমিকা রাখে। নামের সাথে সঙ্গতি রেখে এদের ভিন্ন ভিন্ন ফাংশন রয়েছে।এবার আমরা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (CDC) প্রদত্ত তথ্য থেকে এপিজেনেটিক্স বিষয়টি পুনরায় আলোচনা করছি, কেননা বারবার এই আলোচনা রিয়েল হোমিওপ্যাথি যথাযথভাবে বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। দুর্ভাগ্যবশত প্রচলিত হোমিওপ্যাথি শিক্ষা পাঠ্যক্রমে এতদ্ববিষয়ে বিস্তারিত কোন জ্ঞান আহরণের সুযোগ নেই সুতরাং বিভিন্ন সূত্রের বিভিন্ন তথ্য থেকে শিক্ষা লাভ ছাড়া আমাদের কাছে আর কোন উপায় নেই!এপিজেনেটিক্স কি?আপনার জিনগুলি আপনার স্বাস্থ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে, আপনার আচরণ এবং পরিবেশও আপনার স্বাস্থ্যে অবদান রাখে। যেমন- আপনি কী খান এবং আপনি কতটা শারীরিকভাবে সক্রিয়, আপনি কোথায় এবং কী পরিবেশে বসবাস করেন কিংবা কাজ-কর্ম করেন, এমনকি আপনার সামাজিক-পারিবারিক শিক্ষা এবং লালন-পালনও পরিবেশের অংশ। অর্থাৎ আপনার লাইফস্টাইল আপনার স্বাস্থ্যে ভুমিকা রাখে। এপিজেনেটিক্স হল আপনার আচরণ এবং পরিবেশ কীভাবে আপনার জিনের কাজ করার পদ্ধতিকে প্রভাবিত করে কী পরিবর্তন ঘটাতে পারে তার অধ্যয়ন। এপিজেনেটিক পরিবর্তনগুলি জেনেটিক পরিবর্তনের বিপরীতমুখী, এটি ডিএনএ সিকুয়েন্স পরিবর্তন করতে পারে না তবে আপনার শরীর কীভাবে ডিএনএ সিকুয়েন্স পাঠ করবে তা পরিবর্তন করতে পারে। জিনের মধ্যে জেনেটিক কোডের নির্দেশাবলী থেকে ঘন ঘন তৈরি হওয়া প্রোটিন আপনার জিন এক্সপ্রেশন বা অভিব্যক্তি বোঝায়। জেনেটিক পরিবর্তনগুলি কোন প্রোটিন তৈরি হওয়াকে পরিবর্তন করতে পারে কিন্তু এপিজেনেটিক পরিবর্তনগুলি জিনকে “চালু” এবং “বন্ধ” (on and off) করে জিনের অভিব্যক্তিকে প্রভাবিত করতে পারে। যেহেতু আপনার পরিবেশ এবং আচরণ তথা খাদ্য ও ব্যায়াম (diet and exercise) এর ফলে এপিজেনেটিক পরিবর্তন হতে পারে তাই আপনার জিন এবং পরিবেশ ও আচরণের পারস্পরিক সম্পর্ক অনুধাবন করা সহজ হয়।এপিজেনেটিক্স কীভাবে কাজ করে ?এপিজেনেটিক পরিবর্তন বিভিন্ন উপায়ে জিনের অভিব্যক্তিকে প্রভাবিত করে। এর তিনটি প্রকার নিয়ে আলোচনা করা হল।ডিএনএ মিথাইলেশন (DNA Methylation):ডিএনএ মিথাইলেশন ডিএনএ-তে একটি (মিথাইল) রাসায়নিক গ্রুপ যোগ করে কাজ করে। সাধারণত এই গ্রুপটি ডিএনএ-তে নির্দিষ্ট যায়গায় যুক্ত করা হয়, যেখানে এটি জিনকে “পাঠ করার” ডিএনএ-র সাথে সংযুক্ত প্রোটিনগুলিকে block করে দেয়। এই রাসায়নিক গ্রুপটিকে ডিমিথাইলেশন নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপসারণ করা যেতে পারে। সাধারণত মিথাইলেশন জিনকে “বন্ধ” করে এবং ডিমিথাইলেশন জিনকে “চালু” করে।হিস্টোন পরিবর্তন (Histone modification):ডিএনএ প্রোটিনের চারপাশে আবৃত করাকে হিস্টোন বলা হয়। যখন হিস্টোনগুলি শক্তভাবে একত্রে প্যাক করা হয় তখন যে প্রোটিনগুলি জিনকে “পাঠ করতে পারে” তারা সহজে ডিএনএ অ্যাক্সেস করতে পারে না তাই জিনটি “বন্ধ” হযে যায়। আবার যখন হিস্টোনগুলি ঢিলেঢালাভাবে প্যাক করা হয় তখন আরও ডিএনএ উস্মুক্ত হয় অর্থাৎ প্রোটিনের চারপাশে হিস্টোন মোড়ানো হয় না ফলে প্রোটিনগুলি ডিএনএ অ্যাক্সেস করতে পারে তথা জিনকে “পাঠ করতে পারে” তাই জিনটি “চালু” হয়। হিস্টোনগুলিকে আরও শক্তভাবে কিংবা ঢিলেঢালাভাবে প্যাক করতে অর্থাৎ জিনগুলিকে “বন্ধ” বা “চালু” করতে হিস্টোন থেকে রাসায়নিক গ্রুপগুলি যোগ করা বা প্রত্যাহার করা যেতে পারে।নন-কোডিং আরএনএ (Non-coding RNA):আপনার ডিএনএ কোডিং এবং নন-কোডিং আরএনএ তৈরির নির্দেশাবলী হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কোডিং আরএনএ প্রোটিন তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। নন-কোডিং আরএনএ কোডিং আরএনএ-কে ভেঙে কিছু প্রোটিনের সাথে সংযুক্ত করে জিনের অভিব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে যাতে এটি প্রোটিন তৈরিতে ব্যবহার করা না যায়। নন-কোডিং আরএনএ জিনকে “চালু” বা “বন্ধ” করার জন্য হিস্টোনগুলি সংশোধন করতে প্রোটিন নিয়োগ করতে পারে।কীভাবে আপনার এপিজেনেটিক্স পরিবর্তন হতে পারে?আপনার বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আপনার এপিজেনেটিক্স পরিবর্তিত হয়, আপনার আচরণ ও পরিবেশের প্রতিক্রিয়া হিসাবে এবং স্বাভাবিক বিকাশ ও বার্ধক্যের অংশ হিসাবে উভয় ক্ষেত্রেই এটি ঘটে।১. এপিজেনেটিক্স এবং বিকাশ (Epigenetics and Development)এপিজেনেটিক পরিবর্তন আপনার জন্মের আগে শুরু হয়। আপনার সমস্ত কোষে একই জিন আছে কিন্তু দেখতে এবং কাজ তাদের ভিন্ন হয়। আপনার বয়স বৃদ্ধি এবং বিকাশের সাথে সাথে এপিজেনেটিক্স একটি কোষের কার্যকারিতা নির্ধারণ করতে সহায়তা করে। উদাহরণ স্বরূপ- জিনটি একটি হৃৎপিন্ডের কোষ কিংবা একটি স্নায়ু কোষ অথবা ত্বকের কোষে পরিণত হবে কি-না। যেমন, আপনার পেশী কোষ এবং স্নায়ু কোষে একই ডিএনএ আছে কিন্তু ভিন্নভাবে কাজ করে। একটি স্নায়ু কোষ আপনার শরীরের অন্যান্য কোষে তথ্য পরিবহন করে অথচ পেশী কোষে একটি কাঠামো অনুযায়ী আপনার শরীরের নড়াচড়া করার ক্ষমতাকে সহায়তা করে। এপিজেনেটিক্স পেশী কোষকে তার কাজের জন্য প্রোটিন তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ জিনগুলিকে “চালু” করে এবং স্নায়ু কোষের কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জিনগুলিকে “বন্ধ” করে দেয়।২. এপিজেনেটিক্স এবং বয়স (Epigenetics and Age)আপনার এপিজেনেটিক্স আপনার সারা জীবনব্যাপী পরিবর্তিত হয়। জন্মের সময় আপনার এপিজেনেটিক্স শৈশব বা যৌবনের সময় একই থাকে না। উদাহরণ স্বরূপ- নবজাতক, ২৬ বছর বয়সী এবং ১০৩ বছর বয়সী ব্যক্তির ডিএনএ মিথাইলেশন পরিমাপ করা হয়েছিল। বয়সের সাথে সাথে তাদের ডিএনএ মিথাইলেশনের মাত্রা কমে গিয়েছিল। একজন নবজাতকের সর্বোচ্চ মিথাইলেশন ছিল, ১০৩ বছর বয়সী ব্যক্তির সর্বনিম্ন ডিএনএ মিথাইলেশন ছিল এবং ২৬ বছর বয়সী ব্যক্তির মধ্যে নবজাতক ও ১০৩ বছর বয়সীর মাঝামাঝি স্তরে ডিএনএ মিথাইলেশন পাওয়া গেছে।৩. এপিজেনেটিক্স এবং প্রত্যাবর্তনশীলতা (Epigenetics and Reversibility)সমস্ত এপিজেনেটিক পরিবর্তন স্থায়ী হয় না। পরিবর্তিত আচরণ বা পরিবেশের প্রতিক্রিয়া হিসাবে কিছু এপিজেনেটিক পরিবর্তন সংযুক্ত বা প্রত্যাবর্তন হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ- ধুমপানের ফলে এপিজেনেটিক পরিবর্তন হতে পারে। ধুমপায়ীদের মধ্যে অধুমপায়ীদের তুলনায় AHRR জিনের নির্দিষ্ট অংশে কম ডিএনএ মিথাইলেশন থাকে। কড়া ধুমপায়ীদের এবং দীর্ঘ-মেয়াদী ধুমপায়ীদের মধ্যে পার্থক্য বেশি। ধুমপান ছেড়ে দেওয়ার পরে প্রাক্তন ধুমপায়ীদের জিনে ডিএনএ মিথাইলেশন বৃদ্ধি পেতে শুরু করতে পারে এবং অবশেষে তারা অধুমপায়ীদের স্তরে পৌঁছাতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এটি এক বছরের কম সময়ের মধ্যে ঘটতে পারে, তবে সময়ের দৈর্ঘ্য নির্ভর করে কেউ ধুমপান ছেড়ে দেওয়ার আগে কতকাল এবং কতটা ধুমপান করেছিল তার উপর।এপিজেনেটিক্স এবং স্বাস্থ্য (Epigenetics and Health)এপিজেনেটিক পরিবর্তনগুলি বিভিন্ন উপায়ে আপনার স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।১. সংক্রমণ (Infections)জীবাণু আপনার ইমিয়্যুন সিস্টেমকে দুর্বল করতে আপনার এপিজেনেটিক্স পরিবর্তন করতে পারে। এটি জীবাণুকে বাঁচতে সাহায্য করে। উদাহরণ- মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস যক্ষা রোগ সৃষ্টি করে। এই জীবাণুর সংক্রমণ আপনার কিছু ইমিয়্যুন কোষে হিস্টোনের পরিবর্তন ঘটাতে পারে যার ফলে IL-12B জিন “বন্ধ” হয়ে যায়। IL-12B জিনটিকে “বন্ধ” করার কারণে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে এবং মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস এর বেঁচে থেকে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে।২. ক্যানসার (Cancer)কিছু মিউটেশন আপনাকে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি করে তোলে। একইভাবে কিছু এপিজেনেটিক পরিবর্তন আপনার ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। উদাহরণ স্বরূপ- BRCA1 জিনে একটি মিউটেশন থাকলে এটিকে সঠিকভাবে কাজ করতে বাধা দেয়ায় আপনার ব্রেস্ট এবং অন্যান্য ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একইভাবে বর্ধিত ডিএনএ মিথাইলেশনের ফলে BRCA1 জিনের প্রকাশ কমে যাওয়ার কারণেও ব্রেস্ট এবং অন্যান্য ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। যখন ক্যানসার কোষগুলি নির্দিষ্ট জিনে ডিএনএ মিথাইলেশন বাড়িয়ে দেয় তখন সাধারণ কোষের তুলনায় ক্যানসার কোষে সামগ্রিকভাবে ডিএনএ মিথাইলেশনের মাত্রা কম থাকে। বিভিন্ন ধরণের ক্যানসার যা দেখতে একই রকমের তবে ডিএনএ মিথাইলেশনের প্যাটার্ন আলাদা হতে পারে। একজন ব্যক্তির কোন ধরনের ক্যানসার আছে বা ক্যানসারটি কতটা কঠিন প্রকৃতির তা আগে-ভাগে নির্ধারণ করতে এপিজেনেটিক্স ব্যবহার সহায়ক হতে পারে। এপিজেনেটিক্স একা ক্যানসার নির্ণয় করতে পারে না, স্ক্রীনিং পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যানসার নিশ্চিত হতে হয়। যেমন- কোলোরেক্টাল ক্যানসারের কিছু নির্দিষ্ট জিনের কাছাকাছি ডিএনএ অঞ্চলে অস্বাভাবিক মিথাইলেশন স্তরগুলি দেখতে মল নমুনা ব্যবহার করে। এটি জানা গুরুত্বপূর্ণ যে পরীক্ষার ফলাফল positive বা abnormal হলে স্ক্রীনিং প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করার জন্য একটি কোলোনোস্কোপি পরীক্ষা প্রয়োজন হয়।৩. গর্ভাবস্থায় পুষ্টি (Nutrition During Pregnancy)গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতি মহিলার পরিবেশ এবং আচরণ যেমন তিনি স্বাস্থ্যকর খাবার খান কি-না তা শিশুর এপিজেনেটিক্স পরিবর্তন করতে পারে। এর মধ্যে কিছু পরিবর্তন কয়েক দশক ধরে থাকতে পারে এবং শিশুর নির্দিষ্ট কিছু রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ- ডাচ দুর্ভিক্ষের সময় যাদের মায়েরা তাদের সাথে গর্ভবতি ছিলেন তাদের হৃদরোগ, সিজোফ্রেনিয়া এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর মতো কিছু রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল। দুর্ভিক্ষের প্রায় ৬০ বছর পরে গবেষকেরা দুভিক্ষের সময় যাদের মায়েরা তাদের সাথে গর্ভবতি ছিলেন তাদের মধ্যে মিথাইলেশনের মাত্রা দেখেছিলেন। এই লোকেদের কিছু জিনে মিথাইলেশন বেড়েছে এবং তাদের ভাই-বোনদের তুলনায় যারা তাদের জন্মের আগে দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হয়নি তাদের তুলনায় অন্যান্য জিনে মিথাইলেশন কম ছিল। মিথাইলেশনের এই পার্থক্যগুলি ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করতে পারে কেন লোকেদের পরবর্তি জীবনে নির্দিষ্ট কিছু রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।কতিপয় ঘটনার প্রেক্ষিতে কিছু বিতর্ক নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। যেমন-ঘটনা- ১. একজন মানুষ খাবারের উচ্ছিষ্টকে নোংরা ভেবে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়, উচ্ছিষ্ট খাবার দেখলে বা পুনরায় খাওয়ার কথা ভাবলে কিংবা ডাস্টবিনের পঁচা গন্ধে ঐ মানুষটির বমির উদ্রেক হয়। অন্য একজন মানুষ সেই উচ্ছিষ্ট ডাষ্টবিনের পাশে বসে গো-গ্রাসে ভক্ষণ করছে, তার কোন সমস্যা হচ্ছে না বরং উদর পুর্তির আনন্দ অনুভব করছে। ঘটনা- ২. একজন মানুষ বিদ্যুৎ না থাকলে এসি বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক তাপমাত্রায় উন্নত অট্টালিকার আরামদায়ক বিছানায়ও ঘুমাতে পারছে না। অন্য একজন মানুষ দীর্ঘদিন যাবৎ তার জীর্ন কুঠিরে অতি সাধারণ বিছানায় প্রচন্ড গরম অথবা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ উপেক্ষা করে দিব্যি অঘোরে ঘুমাচ্ছে। এগুলি কেন সম্ভব হচ্ছে এবং এতে এপিজেনেটিক এর প্রভাব কি?স্যার স্টুয়ার্ট ক্লোজ বলেছেন, CONSTITUTION বা গঠনপ্রকৃতি হচ্ছে বংশগতি থেকে প্রাপ্ত চারিত্রিক সমষ্টি, যা পরিবেশের চাপে কম-বেশি প্রভাবিত হয়, এটি ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ করে, পরিবেশের চাপে এই প্রতিক্রিয়া সফল অথবা ব্যর্থ হতে পারে।ইংরেজিতে Resistance শব্দের অর্থ প্রতিরোধশক্তি অর্থাৎ প্রতিকুল কোন কিছু স্বাভাবিকভাবে সহ্য করার ক্ষমতা। স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনায় এর গুরুত্ব অনেক, বাহ্যিক পরিবেশ কর্তৃক প্রভাবিত যে সকল প্রাকৃতিক ঘটনা Cope-up বা মানিয়ে নিতে পারা কিংবা না পারার কারনে ব্যক্তির স্বাচ্ছন্দবোধ অথবা অস্বাচ্ছন্দবোধের প্রকাশ লক্ষ্য করা যায় তার ভিত্তিতে রেজিস্টেন্স বা প্রতিরোধশক্তির মাত্রা চিহ্নিত হয়। আমরা সাধারণভাবেই বুঝি অভাব এবং প্রাচুর্যতা জীবন যাত্রায় (লাইফস্টাইল) পরিবর্তন ঘটায়। প্রাচুর্যতার কারনে একজন ব্যক্তি যে কোন পছন্দ অনুযায়ী খাদ্য সংগ্রহ সহ আনুসঙ্গিক চহিদা পুরণের সামর্থ থাকে এবং সেভাবে যিনি লালিত-পালিত হয়েছে, তার দামী প্রক্রিয়াজাত খাবার কিংবা পরিচ্ছন্ন খাদ্যে যেমন তার আকাঙ্খা থাকবে এবং অপরিচ্ছন্ন খাবারে তেমন ঘৃণা থাকবে, একইভাবে আরাম-বিলাসিতা তার জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠতে পারে। কৃত্তিম খাদ্যে ও বিলাসিতায় অভ্যস্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক সাধারণ ঘটনাও মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা হারায়। তদ্রুপ অভাবের কারনে জীবনকে বাঁচিয়ে রাখতে নুন্যতম খাদ্য সংগ্রহের সামর্থই যার নেই তথা উপায়হীন তার কাছে খাবারে রুচিবোধ প্রাধান্য পাবার কোন যুক্তি নেই, আরাম-বিলাসিতাও নির্ভর করে সামর্থের উপর। দীর্ঘদিন এরূপ অভাবের মধ্যে লালিত-পালিত ব্যক্তির জন্য অস্বাভাবিক বা প্রতিকুল পরিস্থিতি মানিয়ে নেয়ার যোগ্যতা তৈরি হয়। আমরা আলোচনার জন্য যদি ধরে নেই প্রাকৃতিক সাধারণ ঘটনাগুলি স্বাভাবিকভাবে মানিয়ে নেয়ার যোগ্যতা হচ্ছে রেজিস্টেন্স তথা প্রতিরোধশক্তি বা সহ্য করার ক্ষমতার পজেটিভ বা ইতিবাচক মাত্রা, তাহলে স্বাভাবিক ঘটনাগুলি মানিয়ে নেয়ার অক্ষমতা হচ্ছে নেগেটিভ বা নেতিবাচক মাত্রা, কেননা এখানে এপিজেনেটিক নেতিবাচক প্রভাব কাজ করে। একই বিবেচনায় অস্বাভাবিক ঘটনাগুলি মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতাও রেজিস্টেন্স এর নেগেটিভ বা নেতিবাচক মাত্রা, কেননা এপিজেনেটিক্স থেকে আমরা জেনেছি অস্বাভাবিক এর পরিনতি অস্বাভাবিকই হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, একজন ব্যক্তি নিয়মিত ধুমপান কিংবা মাদক গ্রহন করে চলেছে কিন্তু এতে তার সহ্য ক্ষমতা রয়েছে অর্থাৎ অন্য কোন ব্যক্তির ন্যায় তার কাশি বা বমির উদ্রেক হচ্ছে না- এ ঘটনা প্রমান করে না যে ঐ ব্যক্তির মধ্যে এপিজেনেটিক নেতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে না। তবে প্রকৃতির সাময়িক বৈচিত্রময় ঘটনা বা প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবেলার ক্ষমতা পজেটিভ বা ইতিবাচক কেননা এখানে প্রমান হয় ব্যক্তির কোষীয় কার্যকলাপে জীবনীশক্তির পূর্ণ প্রভাব রয়েছে। প্রকৃত প্রস্তাবে উপরে উল্লেখিত দু’টি ঘটনার প্রথমটিতে সংশ্লিষ্ট সকলের রেজিস্টেন্স এর মাত্রা নেগেটিভ, কেননা একজন স্বাভাবিক ঘটনা মানিয়ে নিতে পারছে না এবং অন্যজন অস্বাভাবিক ঘটনাও মানিয়ে নিতে পারছে। দ্বিতীয় ঘটনায় প্রথম ব্যক্তি স্বাভাবিক ঘটনা মানিয়ে নিতে না পারার কারনে তার রেজিস্টেন্স নেগেটিভ কিন্তু অপর ব্যক্তি দীর্ঘদিনে প্রতিকুল পরিন্থিতি মানিয়ে নিতে পারলেও তারও রেজিস্টেন্স নেগেটিভ। এবং সকলের ক্ষেত্রেই এপিজেনেটিক প্রভাব ঘটবে, এই প্রভাব নেতিবাচক হবে। সাধারণত স্বাস্থ্যের জন্য এপিজেনেটিক্স এর মিথাইলেশনকে ইতিবাচক এবং ডি-মিথাইলেশনকে নেতিবাচক বিবেচনা করা হয়, তবে কখনও কখনও অতিরিক্ত মিথাইল গ্রুপ ক্ষতিকর হয়।স্যার হ্যানিম্যান অর্গাননের ২৫৯ থেকে ২৬৩ নম্বর অনুচ্ছেদ এবং ১৩৯ ও ১৪০ নম্বর পাদটিকায় প্রতিকুল বাহ্যিক পরিবেশ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অযাচিত জীবনাচার এবং নিষ্ক্রিয় ব্যায়াম তথা অলস জীবন-যাপন কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আরোগ্যের বাধা হিসাবে চিহ্নিত করেছেন এবং তৎক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছেন (যদিও মহাত্মার জীবনকালে এপিজেনেটিক্স উদ্ভাবিত হয়নি অথচ তাঁর সূদুর প্রসারী গবেষণায় তিনি তা উপলব্ধি করেছিলেন)। আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণায় অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও অযাচিত জীবনাচার এর ফলে যে সকল রোগ-বালাই দেখা দেয় তাকে লাইফস্টাইল ডিজিজ হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং বুদ্ধিমান রিয়েল হোমিওপ্যাথের কর্তব্য হল- তিনি কোন ব্যক্তির চিকিৎসাকালীন সময়ে হার্মফুল জিনকে স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় করার প্রচেষ্টার পাশাপাশি আরোগ্যের বাধা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সচেতন থাকবেন এবং পবিত্র জীবনাচার, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও পরিমিত ব্যায়ামের পরামর্শ দিবেন। এতে এপিজেনেটিক নেতিবাচক প্রভাব থেকে ব্যক্তিটিকে রক্ষা করা এবং আরোগ্য ত্বরান্বিত করা সম্ভব হবে। কিন্তু স্যার শ্যামল কুমার দাসের শিক্ষা অনুযায়ী এ কথা স্মরণে রাখা জরুরী যে, শুধুমাত্র পবিত্র জীবনাচার, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও পরিমিত ব্যায়ামের পরামর্শ মোতাবেক অনুসরন করলেই তথা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কর্মকান্ড দিয়েই কোন ব্যক্তির ভবিষ্যতে রোগ-বালাইয়ের ভয়াবহ প্রকাশ থেকে রক্ষা করা কখনই সম্ভব হবে না, যদি না রিয়েল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় সকল রোগ-বালাইয়ের প্রকৃত কারন (root cause) ছয়টি true disease কে permanently inactive করা না হয়।স্যার শ্যামল কুমার দাস এপিজেনেটিক্স সম্পর্কে রিয়েল হোমিওপ্যাথিক ব্যাখ্যা দিয়ে তিন বলেছেন-Every individual inherits six groups of harmful genes and one group of beneficial genes. With which cellular activities are being controlled always. That is, different types organo-chemical reactions are controlled with both types of genes with their products (different enzymes). When the internal economy of the individual is relatively sterile i.e. before Real Homoeopathic treatment, both harmful as well as beneficial enzymes are equally responsible for maintaining sterile environment. When internal economy of an individual is affected with any adverse factor, like… nutrition, behaviour, psychological stress, physical activity, working habits, smoking, and alcohol consumption, obesity, environmental pollution (Arsenic, Air pollution, Aromatic hydrocarbons and other organic pollutants), Shift-work, the beneficial organo-chemical reactions are inhibited and at the same harmful reactions are accelerated.Any of the above factors may influence epigenetic mechanisms, such as DNA methylation, histone acetylation and microRNA expression. প্রত্যেক মানুষ উত্তরাধিকারসূত্রে ছয় সেট ক্ষতিকারক জিন এবং এক সেট উপকারী জিন পেয়ে থাকে। যা দিয়ে কোষীয় কার্যক্রম সবসময় নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। অর্থাৎ উভয় ধরণের জিন কর্তৃক উৎপাদিত বিভিন্ন এনজাইমের জৈব-রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে এই নিয়ন্ত্রন ঘটে। যখন ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্র তুলনামূলকভাবে অনুর্বর থাকে অর্থাৎ রিয়েল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার পূর্বে ক্ষতিকারক একইসাথে উপকারী উভয় এনজাইম সমানে সমান থাকে বলে এই পরিবেশের অনুর্বরতা রক্ষিত হয়। যখন কোন ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্র কোনও প্রতিক‚ল প্রভাবের দ্বারা আক্রান্ত হয়, যেমন... পুষ্টি, আচরণ, মানসিক চাপ, শারীরিক কার্যকলাপ, পেশাগত অভ্যাস, ধুমপান, এবং মাদক সেবন, মেদবৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণ (আর্সেনিক, বায়ু দূষণ, হাইড্রোকার্বনযুক্ত প্রসাধনী এবং অন্যান্য জৈব দূষণ), পেশা পরিবর্তন ইত্যাদি উপকারী জৈব-রাসায়নিক বিক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এবং একই সময়ে ক্ষতিকারক বিক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।উপরের যেকোন প্রভাব এপিজেনেটিক মেকানিজমকে প্রভাবিত করতে পারে, যেমন ডিএনএ মিথাইলেশন, হিস্টোন এসিটিলেশন এবং মাইক্রোআরএনএ অভিব্যক্তি।